ভাবিতে হইবে গোটা দুনিয়ার কথা, কাজ করা দরকার স্থানীয় স্তরে— ‘থিঙ্ক গ্লোবালি, অ্যাক্ট লোকালি’। গত শতাব্দীর ষাট-সত্তরের দশক হইতে এই বাক্যটি বিভিন্ন প্রসঙ্গে ফিরিয়া আসিয়াছে। এক অর্থে ইহার প্রেরণা খুঁজিয়া লওয়া যায় উনিশ শতকের ‘আন্তর্জাতিক’-এর ইতিহাসে। কিন্তু সেই ইতিহাস মুখ্যত ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলির শ্রমিকের সংহতির, এবং সেখানে চিন্তার সহিত কাজ, অর্থাৎ আন্দোলনও আন্তর্জাতিক স্তরেই আবশ্যক বলিয়া মনে করা হইয়াছিল। সেই আন্তর্জাতিক আন্দোলন বহু কাল আগেই ভাঙিয়া খানখান হইয়া গিয়াছে। কিন্তু অন্য একটি ক্ষেত্রে ‘বিশ্বায়িত চিন্তা এবং স্থানীয় সক্রিয়তা’র মহিমা দুনিয়া জুড়িয়া ক্রমশই বাড়িতেছে। তাহার নাম: জলবায়ু পরিবর্তন। এই গ্রহের মাটি, জল, বায়ুমণ্ডল, এক কথায়, প্রকৃতি, বিপন্ন। বিপদ ইতিমধ্যেই দ্রুত সর্বনাশের পথে ধাবমান। আত্মরক্ষার চিন্তা গোটা পৃথিবীর। কিন্তু সে জন্য আন্তর্জাতিক প্রকল্পের পাশাপাশি কাজ করা আবশ্যক প্রতিটি দেশের প্রতিটি স্থানে, বিশেষত শহরে। এই চেতনা প্রকাশিত হইতেছে বিভিন্ন উদ্যোগে। এমনই এক উদ্যোগের নাম: এক্সটিংশন রেবেলিয়ন, বা বিলয় বিদ্রোহ। পৃথিবীর বাসযোগ্যতার বিলয় প্রতিরোধ করিবার উদ্দেশ্যে বিদ্রোহ। এক কথায়, আক্ষরিক অর্থে, বাঁচিবার লড়াই।
গত অক্টোবর হইতে এই বিলয় বিদ্রোহের শুরু। সূচনার কয়েক মাসের মধ্যেই তাহা সংবাদের শিরোনামে। গত সপ্তাহে ইউরোপের বড় বড় শহরে বিদ্রোহীরা অবস্থান বিক্ষোভ করিয়াছেন, তাঁহাদের দাবি: উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ও পরিবেশের যথেচ্ছ সংহার চলিবে না, মানুষের বাসগ্রহটিকে বিলয়ের পরিণতি হইতে রক্ষা করিতে হইবে। অন্তত একটি দেশে এই আন্দোলনের চাপে বহু গাছ কাটিয়া আধুনিক রেলপথ সম্প্রসারণের প্রকল্প স্থগিত হইয়াছে। তাহার নাম ব্রিটেন। সে দেশের বিরোধী লেবার পার্টি পরিবেশ রক্ষার জন্য আইনসভায় তৎপর হইবার প্রতিশ্রুতি দিয়াছে। অনুরূপ তৎপরতা অন্য নানা দেশেও বাড়িতেছে। এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বোধ ও ভয়ঙ্কর পরিবেশ-বিমুখতার প্রতিবাদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও কাণ্ডজ্ঞানের স্বর প্রবল হইতে প্রবলতর— আলেকজ়ান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো-কর্তেস তাহার অন্যতম প্রবক্তা ও প্রতীক।
আর ভারত? এই দেশে দুনিয়ার বৃহত্তম নির্বাচন চলিতেছে। রাজনৈতিক নায়কনায়িকারা তুমুল বিক্রমে দৌড়াইতেছেন, বিপুল প্রতিশ্রুতি এবং বিপুলতর গালিগালাজের বান ডাকিতেছে। কিন্তু এই কথাসরিৎসাগরে প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রসঙ্গ শুনিতে চাহিলে মনস্কামনা অপূর্ণ থাকিবে। প্রায় কোনও দলের কোনও নেতা এই বিষয়ে একটি শব্দও খরচ করিতে নারাজ। যে গ্রহে তাঁহাদের বিচরণ, তাহার সর্বনাশ দ্রুত নিকটবর্তী হইতেছে, তাঁহারা একমনে কদর্য রাজনীতির ডাল কাটিয়া চলিয়াছেন। পরিবেশচেতনার অভাব নহে— ইহা ন্যূনতম কাণ্ডজ্ঞানের অভাব। এই রাজনীতির উপর কিছুমাত্র ভরসা নাই। মানুষ যদি দুনিয়ার কথা ভাবিয়া স্থানীয় স্তরে সক্রিয় হন— পৃথিবীর বিপদ সম্পর্কে সচেতন হইয়া আপন পরিসরে সেই বিপদের মোকাবিলায় তৎপর হইতে রাজনীতিকদের উপর চাপ দেন, তবেই পৃথিবী বাঁচিলেও বাঁচিতে পারে। ইউরোপের শহরগুলিতে তাহাই ঘটিতেছে। আমরা কেবল দর্শকের ভূমিকায় থাকিব কি না, আমাদেরই স্থির করিতে হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy