Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
শাহি সমাচার
Bengali News

লোকসভা ভোটের আগে রামমন্দির নিয়ে রাজনীতির রুটি সেঁকা নতুন কিছু নয়

যখন দেশের উন্নয়ন স্তব্ধ, চাকরি নেই, গরিব কৃষক আত্মহত্যা করছে, তখন এ হল বিজেপির ব্যাক-টু-বেসিক রণকৌশল। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষাল যখন দেশের উন্নয়ন স্তব্ধ, চাকরি নেই, গরিব কৃষক আত্মহত্যা করছে, তখন এ হল বিজেপির ব্যাক-টু-বেসিক রণকৌশল।

অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ, ১৯৯০।—ছবি পিটিআই

অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ, ১৯৯০।—ছবি পিটিআই

জয়ন্ত ঘোষাল
শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৮ ০০:২৮
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে অ্যাপ বার্তা পেলাম। হোয়াটস অ্যাপে পাওয়া সেই বার্তায় জানতে চাওয়া হয়েছে, সরকার যদি এখন রামমন্দির নির্মাণের জন্য একটি অর্ডিন্যান্স জারি করে তবে সে প্রস্তাব আমি সমর্থন করছি না করছি না? বলা হয়েছে, মানুষ কী চাইছেন বোঝার জন্যই এই সমীক্ষা। ধরে নিচ্ছি, লাখ লাখ মানুষের কাছ থেকে এই অভিমত জানতে চাওয়া হয়েছে। পাঠাচ্ছে পিএমও ইন্ডিয়া: রিপোর্ট কার্ড। নিউজ অ্যান্ড মিডিয়া ওয়েবসাইট।

প্রধানমন্ত্রীর একটি সহাস্য ছবিও আছে। তো ধরে নিচ্ছি নানা ধরনের পেশা, নানা ধরনের মতামতের মানুষের কাছে এই প্রশ্ন রাখা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট গত সোমবার অযোধ্যা শুনানির দাবিতে কার্যত জল ঢেলে দিয়েছে। জানানো হয়েছে, জানুয়ারি মাসে শুনানি নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আরএসএস নেতা মোহন ভাগবত কিছু দিন আগেই প্রশ্ন তুলেছেন যে সরকার রামমন্দির নির্মাণের জন্য অর্ডিন্যান্স জারি করলে আপনি কি তা সমর্থন করবেন?

আসলে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে রামমন্দিরের বিষয়ে আবার রাজনীতির রুটি সেঁকা। এ তো নতুন কিছু নয়। সেই কবে লালকৃষ্ণ আডবাণীর রথযাত্রা দেখেছি। তিনি যে রামমন্দির আন্দোলন শুরু করেন, তার পর বাবরি মসজিদ ধ্বংস হওয়া, এ সবই ভারতীয় রাজনীতির এক দুঃখজনক কালো ইতিহাস।

সাম্প্রদায়িকতার শক্তি ধর্মনিরপেক্ষতার শক্তির চেয়ে বেশি প্রভাবশালী। হতে পারে তা ক্ষণস্থায়ী, তা কালজয়ী নয়, কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার ঝড়ে উড়ে যায় আধুনিক মনের মাথার মুকুট।

যোগী আদিত্যনাথের মতে রাজা হরি সিংহ চলে যাওয়ার পরেই কাশ্মীরে সন্ত্রাস নেমে আসে।—ফাইল চিত্র

বিজেপি হিন্দুত্ব নামক যে মতাদর্শের কথা বলে তার বাস্তব জমির দিকটি হল রাজনৈতিক মেরুকরণ। আর তাই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, যত দিন হিন্দুত্ববাদ ছিল, তত দিন নাকি কাশ্মীরে সন্ত্রাস ছিল না। কোনও সমস্যাই ছিল না। রাজা হরি সিংহ চলে যাওয়ার পরেই কাশ্মীরে সন্ত্রাস নেমে এল। এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে গোটা দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। নিন্দা করছেন অনেকেই। কিন্তু নিন্দা যত বাড়ছে বিজেপি ততই উৎফুল্ল হচ্ছে। এই বিতর্ক হলেও নাকি লাভ বিজেপির।

প্রশ্ন হল, তুমি পাঁচ বছর ধরে দেশ শাসন করছ, তা রামমন্দির নির্মাণ করার মতো ক্ষমতা তোমার নেই। তুমি মুখে মারিতং জগৎ। আজ ভোটের মুখে যখন বিজেপি দেখছে ৩৭০ ধারার অবলুপ্তি হল না, অভিন্ন দেওয়ানি বিধিই বা হল কই? আর কাশী মথুরা তো দূর অস্ত, অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণটাই বা হল কবে?

যখন দেশের উন্নয়ন স্তব্ধ, চাকরি নেই, গরিব কৃষক আত্মহত্যা করছে আজও, তখন এ হল বিজেপির ব্যাক-টু-বেসিক রণকৌশল। এই কৌশলে যেমন আছে ‘এভরি ডে কমিউনালিজম’। উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে নিয়মিত ছোট ছোট সংঘাত হয়েই চলেছে, আবার অন্য দিকে আছে রামমন্দির।

২০১৯ বা তার আগে রাজ্যের ভোটগুলিতে এর কী প্রভাব পড়বে, এর ফলে বিজেপির নির্বাচনী বিজয় সহজ হবে কি না এটা একটা প্রশ্ন। কিন্তু ভোটে বিজেপি জিতুক বা হারুক, সেটা ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু এই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি আমার পছন্দ নয়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE