ফাইল চিত্র।
রাজ্যসভায় প্রশ্নোত্তরকালে জানা গেল, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনে থাকা অন্তত চারটি দফতরের শীর্ষ পদ দীর্ঘ দিন ধরে শূন্য পড়ে রয়েছে— একটি ২০১৫ সাল থেকে, বাকি তিনটি গত দুই বছর ধরে। অতিমারির জন্যই এই দেরি, এমন যুক্তির তবু যদি কিছু সারবত্তা থাকে, এই তথ্যটি জানামাত্র সন্দেহ জাগে: চারটি দফতরের তিনটি— জাতীয় গ্রন্থাগার, সেন্ট্রাল রেফারেন্স লাইব্রেরি এবং অ্যানথ্রপলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া— পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতায়। ভিন্ন তথা বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শ তথা দল দ্বারা পরিচালিত বলেই এ রাজ্যের তিন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদ পূরণে কেন্দ্রের এত গড়িমসি, বললে ভুল হবে কি?
এই প্রবণতা নতুন নয়। আমলাতন্ত্র, লাল ফিতের ফাঁস এমনিতেই ভারতের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলির শূন্য পদ পূরণে অবাঞ্ছিত বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সেই সঙ্গে ‘পছন্দের লোক’কে কোনও প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে বসানোর রাজনীতি অনেক কালই প্রায় নিয়মে দাঁড়িয়ে গিয়েছে— কখনও তা হয় ক্ষমতার নির্লজ্জ পক্ষপাত বা স্বজনপোষণ ফলাতে, কখনও বা উল্টো দিকের মানুষটির নিজস্ব মতামত ও বিশ্বাসের শাস্তিস্বরূপ। কিন্তু এত কিছুর পরেও যখন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বা দফতরের শীর্ষপদগুলি খালি পড়ে থাকার খবর আসে, তখন সব ছাপিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত নিতে না পারার, প্রশাসনিক ব্যর্থতার ছবিটিই প্রকট হয়। ‘কাজের’ লোক বা ‘পছন্দের’ লোক, যে মানুষটিকেই শীর্ষ পদে ভাবা হোক, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যথাযোগ্য প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাঁকে পদে না বসালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা দফতরটিরই। কেবল পদের, কলমের তথা সিদ্ধান্তের জোরই নয়, জাতীয় গ্রন্থাগার বা সেন্ট্রাল রেফারেন্স লাইব্রেরির মতো প্রাচীন ও ঐতিহ্যবহ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নেতৃত্বের মননপ্রভাবও বিরাট। সাময়িক বা কার্যনির্বাহী নেতৃত্ব দিয়ে কাজ চালালে সেই প্রভাব পড়ে না, প্রতিষ্ঠানগুলির আর্থিক ও পরিকাঠামোগত বহু কাজ আটকে থাকে, সবচেয়ে বড় কথা— দীর্ঘ দিন ধরে শীর্ষ পদটি শূন্য থাকলে প্রতিষ্ঠানের কর্মসংস্কৃতিতে তার ছায়া পড়ে, নিষ্ক্রিয়তা ও আত্মবিশ্বাসহীনতার জেরে তারা ভিতর থেকে নষ্ট হতে থাকে।
একটি প্রতিষ্ঠান ও তার ঐতিহ্য গড়ে ওঠার পিছনে লুকিয়ে থাকে দীর্ঘ ইতিহাস— ব্যক্তির নিবিড় আত্মত্যাগের, সমষ্টির সনিষ্ঠ উদ্যোগের। কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগার বা দিল্লির ন্যাশনাল মিউজ়িয়াম সেই শ্রম ও কর্মকুশলতারই প্রতিমূর্তি, প্রাতিষ্ঠানিক গুরুত্ব অতিক্রম করে তা জাতি রাষ্ট্র তথা বিশ্বের মনন-ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক বাহক। এমন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদগুলি বছরের পর বছর শূন্য পড়ে থাকা তাদের তাৎকালিক ক্ষতি তো বটেই, সুদূরপ্রসারী ভাবমূর্তিরও ক্ষতি। শূন্য পদগুলি পূর্ণ করা কেন্দ্রীয় সরকারের দায়, রাজ্যের নয়— এমন যুক্তি দেখিয়ে পশ্চিমবঙ্গও উদাসীন থাকতে পারে না। কেন্দ্র-রাজ্য রাজনীতির জটিল আবর্তে ফেলে এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলিকে নেতৃত্বহীন গতানুগতিকতার স্রোতে ভাসিয়ে দিলে চলবে না। গণতন্ত্রে শাসক ও বিরোধীর সংলাপ অধিকাংশ সময়েই ‘অ্যাজেন্ডা’ভিত্তিক হয়ে থাকে, ভারত-সংস্কৃতির অভিজ্ঞান এই প্রতিষ্ঠানগুলির শীর্ষ পদ পূরণ এই মুহূূর্তে দিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গের যথোপযুক্ত গুরুত্বের ‘অ্যাজেন্ডা’ হয়ে ওঠা দরকার। দেশের স্বার্থেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy