প্রতীকী ছবি।
বিশ্বব্যাঙ্ক ভারতীয় অর্থব্যবস্থার বৃদ্ধির হারের পূর্বাভাস কাটছাঁট করল। আগে ব্যাঙ্কের অনুমান ছিল, বর্তমান অর্থবর্ষে ভারতীয় অর্থব্যবস্থার প্রকৃত বৃদ্ধির হার দাঁড়াবে সাড়ে সাত শতাংশে। গত বৃহস্পতিবার তারা সেই হারটিকে এক শতাংশ-বিন্দু কমিয়ে এনেছে। অপ্রত্যাশিত, ভাবার কোনও কারণ নেই। কিছু দিন আগে ভারতীয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কও বৃদ্ধির হারের পূর্বাভাস ছেঁটেছে। গোটা দুনিয়াতেই অর্থব্যবস্থার উপর কালো মেঘ ঘনিয়েছে, কাজেই ভারতের পরিস্থিতি আলাদা করে বিপজ্জনক নয়। বরং, অন্য বেশ কিছু দেশের তুলনায় ভারতের অবস্থা এখনও স্থিতিশীল, মূলত তার ডলারের ভান্ডারের কারণেই। কিন্তু বিপদগুলি চরিত্রে ভয়ঙ্কর। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছেই, গোটা দুনিয়া কম-বেশি বিপর্যস্ত। যুদ্ধের ফলে ‘কমোডিটি প্রাইস’ ঊর্ধ্বগামী হয়েছে, এবং তা সরাসরি মূল্যবৃদ্ধি ঘটাচ্ছে। অন্য দিকে, এই আর্থিক অনিশ্চয়তা সামলাতে গোটা দুনিয়াতেই কঠোরতর মুদ্রা নীতি গৃহীত হচ্ছে, ফলে ভারতের বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কমছে। দেশি লগ্নিকারীরাও অনিশ্চিত বাজারে বিনিয়োগ করতে তেমন আগ্রহী নন। ফলে, আন্তর্জাতিক অনিশ্চয়তা ঢুকে পড়ছে ভারতীয় বাজারে। অন্য দিকে, ডলারের সাপেক্ষে টাকার দামও উদ্বেগজনক ভাবে কমছে। ফলে, মূল্যস্ফীতির চাপ প্রবলতর হচ্ছে। এই অবস্থায় বৃদ্ধির পূর্বাভাস যে কমবে, তা স্বাভাবিক।
বিপদটি বহুলাংশে আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি হয়েছে বটে, কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরীণ অর্থব্যবস্থায় তার যে ছাপ দেখা যাচ্ছে, তা অতি উদ্বেগজনক। জুলাই মাসে ভারতের ইনডেক্স অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন (আইআইপি) বা শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদনের সূচকের বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছিল ২.৪ শতাংশে। অগস্টে উৎপাদন ক্ষেত্রের ‘কোর সেক্টর’, অর্থাৎ বিদ্যুৎ, ইস্পাত, সিমেন্ট, সারের মতো মোট আটটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছিল ৩.৩ শতাংশে, যা গত নয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির হারের গতিভঙ্গও শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যুতের চাহিদার অভাব, অর্থাৎ শিল্পক্ষেত্রের গতিভঙ্গের দিকে নির্দেশ করে। অন্য দিকে, এপ্রিলে জিএসটি আদায়ের পরিমাণ ১.৬৮ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছনোর পরের চার মাসে সেই আদায়ের পরিমাণ দেড় লক্ষ কোটি টাকার সীমা অতিক্রম করেনি। সেপ্টেম্বরেও এই আদায়ের পরিমাণ ১.৪৫ লক্ষ কোটি টাকার আশেপাশে থাকবে বলেই অনুমান। গতিভঙ্গ রফতানির ক্ষেত্রেও। ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য রফতানি সেপ্টেম্বরে হ্রাস পেয়েছে ১৭ শতাংশ; বস্ত্রপণ্য রফতানির পরিমাণ কমেছে ৩১.৫ শতাংশ। অর্থাৎ ভারতীয় অর্থব্যবস্থার গতিভঙ্গ স্পষ্ট। এই মুহূর্তে প্রশ্ন, তার অভিঘাত কতখানি তীব্র হবে?
একটি ভিন্নতর প্রশ্নও অবশ্য ভারতকে উদ্বিগ্ন করবে। সম্প্রতি সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি নামক সংস্থার পরিসংখ্যানে প্রকাশ পেয়েছে যে, ২০২০ সালে সাড়ে পাঁচ কোটিরও বেশি ভারতীয় অতিমারি ও তজ্জনিত আর্থিক সঙ্কটের কারণে দারিদ্রসীমার নীচে চলে গিয়েছেন। সংখ্যাটি তাৎপর্যপূর্ণ। অতিমারির সময়কাল প্রশ্নাতীত ভাবে দেখিয়ে দিয়েছে যে, ভারতে আর্থিক সঙ্কটের ধাক্কা দরিদ্র মানুষের গায়ে লাগে অনেক বেশি। বর্তমান আর্থিক সঙ্কটটি আসছে অতিমারির সেই ক্ষত শুকোনোর আগেই। ফলে, যাঁরা এমনিতেই বিপর্যস্ত, বর্তমান সঙ্কট তাঁদের আরও বেশি বিপন্ন করবে, এমন আশঙ্কা প্রবল। অতএব কেন্দ্রীয় সরকারই হোক বা ভারতীয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক, সব প্রতিষ্ঠানেরই কর্তব্য আর্থিক সঙ্কট বা মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়ার সময় এই মানুষগুলির কথা বিশেষ ভাবে স্মরণে রাখা। অর্থব্যবস্থার স্বাস্থ্য বলতে যদি শুধুই গড় পরিসংখ্যানের কথা ভাবা হয়, তা হলে মস্ত ভুল হবে। বিশেষত সঙ্কটের সময়, যাঁরা সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছেন তাঁদের কথা আলাদা ভাবে মাথায় রাখা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির কর্তব্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy