অনথিভুক্ত সংস্থার বার্ষিক সমীক্ষায় প্রাপ্ত কিছু তথ্যকে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রক ‘সুখবর’ বলে দাবি করছে। যেমন, এই সংস্থাগুলির সংখ্যা বেড়েছে (২০২২-২৩’এ সাড়ে ছয় কোটি থেকে ২০২৩-২৪ সালের অক্টোবর-সেপ্টেম্বরে সাত কোটিরও বেশি), কর্মী-সংখ্যা বেড়েছে দশ শতাংশের মতো, এবং এই সংস্থাগুলির কর্মীদের বেতন বেড়েছে মূল্যবৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি হারে। মহিলা মালিকানাধীন সংস্থার অনুপাত বেড়েছে— ২৩% থেকে ২৬%। সরকারি নানা প্রকল্পে উৎসাহিত হয়ে মহিলারা অধিক সংখ্যায় ব্যবসায় অংশগ্রহণ করছেন, এমন ভাবেই এই পরিসংখ্যানের অর্থ করেছেন প্রশাসনিক অধিকর্তা এবং সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টারা। কৃষিকে বাদ দিলে ভারতে অসংগঠিত ক্ষেত্রই অধিকাংশ কর্মীর নিয়োগকর্তা, এবং এই ক্ষেত্রের অধিকাংশ সংস্থাই অনথিভুক্ত। নোটবন্দি, জিএসটি এবং কোভিড-জনিত লকডাউন, এই তিনটি ধাক্কায় অসংগঠিত ক্ষেত্র যে তলানিতে পৌঁছেছিল, তাতে ২০২৩-২৪ সালের বৃদ্ধি শুধু ‘লো বেস এফেক্ট’-এর কারণেই অপ্রত্যাশিত নয়। বরং প্রশ্ন, অনথিভুক্ত সংস্থার সংখ্যায় বৃদ্ধি, অথবা সেগুলিতে নিযুক্ত কর্মীদের সংখ্যায় বৃদ্ধি বস্তুত ভারতের অর্থনীতির সম্পর্কে কী ইঙ্গিত দেয়। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মাত্র দু’-একটি দেশ বাদ দিলে আর কোনও দেশে অনথিভুক্ত সংস্থায় (তথা অসংগঠিত ক্ষেত্রে) এত বেশি নিয়োগ (নব্বই শতাংশেরও বেশি) দেখা যায় না। এমনকি বাংলাদেশ বা পাকিস্তানেও নয়। ভারতে অসংগঠিত ক্ষেত্রের প্রাধান্য কর্মীদের দারিদ্র দূরীকরণে অন্যতম বাধা বলেই মনে করে নানা আন্তর্জাতিক সংস্থা।
যিনি নিয়োগকর্তা তিনিই কর্মী, অর্থাৎ এক জন ব্যক্তিই একটি উদ্যোগ, এমন সংস্থা অনথিভুক্ত, অসংগঠিত ক্ষেত্রে সর্বাধিক। এগুলি প্রায় সবই ঝুঁকিপূর্ণ, নিম্ন প্রযুক্তির, এবং সামান্য আয়ের উদ্যোগ। মেয়েদের অধিকাংশই এই ধরনের উদ্যোগে নিযুক্ত। উদ্যোগপতি হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষায় নয়, অধিকাংশই নিয়মিত রোজগারের অপর কোনও সুযোগ না পেয়ে বাধ্য হয়ে স্বউদ্যোগের পথ খুঁজে নিয়েছেন। এই কারণেই, স্বউদ্যোগী মহিলাদের জন্য নানা সরকারি প্রকল্পে বিতরিত ঋণের পরিমাণ বেড়ে থাকলেও, তাকে মহিলাদের আর্থিক উন্নতির ইঙ্গিত বলে ধরে নেওয়া সহজ নয়। মহিলাদের উদ্যোগগুলি বস্তুত কতখানি লাভজনক হচ্ছে, কত দিন টিকছে, তার পৃথক সমীক্ষা না করে মহিলা উদ্যোগের অনুপাতের বৃদ্ধিতে উৎসাহিত হওয়া চলে না।
কর্মীদের বেতনবৃদ্ধির যে পরিসংখ্যান দিয়েছে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রক, তা আশাজনক। তবে অনথিভুক্ত সংস্থার বৃদ্ধিতে আশান্বিত হওয়ার চেয়ে বরং প্রশ্ন করা দরকার, এই সংস্থাগুলির নথিভুক্তির জন্য সরকার কী করছে? সাত কোটিরও বেশি সংস্থার কতগুলিকে, কী ভাবে, কত দিনে, সংগঠিত ক্ষেত্রে আনার পরিকল্পনা নিচ্ছে? শ্রম নীতি-সহ নানা নীতির নিরিখে আজও উদ্যোগপতিদের কাছে নিজের সংস্থাকে ক্ষুদ্র, অনথিভুক্ত রাখাই সুবিধাজনক বলে মনে হয়। অথচ, সরকারি ঋণ, ভর্তুকি বা অন্যান্য সহায়তা অনথিভুক্ত সংস্থার কাছে পৌঁছয় না। নানা গবেষণায় সরকারি নীতির এই ফাঁকগুলি বার বার উঠে এসেছে। সরকারি প্রকল্পের সাফল্য প্রমাণ করার চেয়ে উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধির উপায় অনুসন্ধান করা অনেক বেশি জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy