Advertisement
২৪ জানুয়ারি ২০২৫
India Afghanistan relation

কাবুলনামা

সম্প্রতি তালিবান শাসকদের সঙ্গে দিল্লির সতর্ক অথচ ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরির প্রচেষ্টা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিসরে এক অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন বললে অত্যুক্তি হবে না।

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০৪:৫০
Share: Save:

শত্রুর শত্রুকে মিত্র বানানোর পন্থা যুদ্ধ থেকে রাজনীতি, বিবিধ ক্ষেত্রেই বহুলপরিচিত। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে সাম্প্রতিক কালে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের নৈকট্যের পরিপ্রেক্ষিতে এ বার ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে সেই পন্থাই অবলম্বন করল দিল্লি। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরশাহির দুবাইয়ে আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের কার্যনির্বাহী বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে প্রতিনিধিত্ব স্তরের বৈঠক করলেন বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। আলোচনায় আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে ইরানের চাবাহার বন্দর থেকে পণ্য চলাচলের পাশাপাশি সে দেশের বাণিজ্যবৃদ্ধি, বিবিধ পরিকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হয়। বাদ যায়নি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রটিও। বিশ্বের একাধিক দেশের মতোই তালিবান সরকারকে এ-যাবৎ স্বীকৃতি না দিলেও সব পক্ষকে নিয়ে আফগানিস্তানে স্থায়ী সরকার গঠনের উপরেই জোর দিয়ে এসেছে ভারত। ঘটনাচক্রে, আফগানিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানি বায়ুসেনার হামলার দু’সপ্তাহের মাথাতেই বৈঠকে বসল নয়াদিল্লি-কাবুল। শুধু তা-ই নয়, বৈঠকের পরে আফগানিস্তানের ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক এবং অর্থনৈতিক সহযোগীর স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে পাকিস্তানের রক্তচাপ বাড়াবে।

সম্প্রতি তালিবান শাসকদের সঙ্গে দিল্লির সতর্ক অথচ ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরির প্রচেষ্টা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিসরে এক অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন বললে অত্যুক্তি হবে না। আফগানিস্তানের সংঘর্ষময় পর্বে, তালিবানদের উত্থানের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ইসলামাবাদ। শুধু তা-ই নয়, ভারতে বহু সন্ত্রাসবাদী হামলার ক্ষেত্রেও তালিবানদের কাজে লাগানোর অভিযোগ ওঠে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দিল্লি-কাবুল সম্পর্কেও। ফলে, ২০২১ সালে তালিবানরা পুনরায় ক্ষমতায় আসার পরে এক দিকে ভারতের আঞ্চলিক নীতি খর্বিত হয়; অন্য দিকে পাকিস্তানের লাভের সম্ভাবনা দেখা দেয়, বিশেষত পূর্ববর্তী সরকারের সঙ্গে দিল্লির সখ্যের জেরে। তবে তালিবান শাসনকালে ভূমিকম্পের মতো জরুরি অবস্থায় আফগানিস্তানে মানবিক সাহায্য পাঠানো বন্ধ করেনি দিল্লি। বরং তালিবান পুনরুত্থানের আগে থেকেই সেখানে বেশ কিছু উন্নয়ন কর্মসূচিতে জড়িত ছিল। এর মাঝে কয়েক লক্ষ আফগান উদ্বাস্তুর পাকিস্তান থেকে উৎখাতের পাশাপাশি তথাকথিত তালিবান মদতে পুষ্ট পাকিস্তান-বিরোধী সন্ত্রাসবাদীদের সীমান্তবর্তী এলাকায় হানা ও পাকিস্তানের সামরিক প্রত্যাঘাত তিক্ত করেছে ইসলামাবাদ-কাবুলের সম্পর্ক। এমতাবস্থায় পুরনো বিবাদ ভুলে দিল্লির কাবুলের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত আগামী দিনে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দৃঢ় করার ক্ষেত্রে আগ্রহী করেছে তালিবান সরকারকে।

তবে উদ্বেগ অন্যত্র। আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার সেনা প্রত্যাহারের পরে সেই শূন্যস্থান পূরণে সক্রিয় থেকেছে চিন। এ-যাবৎ দু’তরফে শুধু রাষ্ট্রদূত নিয়োগই নয়, বিভিন্ন খনিজ পদার্থ সংক্রান্ত চুক্তি-সহ তাদের মাটিতে চিন-পাকিস্তান ইকনমিক করিডর প্রসারের বিষয়েও বেজিং-এর আলোচনা চলছে বর্তমান সরকারের সঙ্গে। ভারতের ক্ষেত্রে তা চিন্তার, যে-হেতু চিনের পদক্ষেপ পরবর্তী কালে মধ্য এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে দিল্লির ব্যবসাবৃদ্ধির পরিকল্পনায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। পরিস্থিতি জটিল।

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh Pakistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy