Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
Russia Ukraine War

পুতিনের অভিযান

কিন্তু যুদ্ধ কি কেবল বহির্বিশ্বকেই সঙ্কটে ফেলিবে, রাশিয়াকে নহে? রুশ অর্থনীতি ইতিমধ্যেই পুতিনের যুদ্ধঘোষণার হাতে-গরম ফল ভোগ করিতেছে

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৯:২৬
Share: Save:

সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টি এখন যাঁহার উপর নিবদ্ধ, তিনি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেই দৃষ্টি নিছক কৌতূহলাবিষ্ট নহে— সংশয়াকুল, ভয়ার্ত। বৃহস্পতিবার কাকডাকা ভোরে পুতিন ইউক্রেনের সহিত যে যুদ্ধ ঘোষণা করিয়াছেন, তাহাতে একযোগে বিপন্ন হইতে পারে অনেক দেশ— সম্ভবত গোটা পৃথিবীই। এই অভিযান কেবল একটি দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন নহে, সমগ্র বিশ্বের নিরিখেই একটি অপরাধ। ইউক্রেন লইয়া রাশিয়ার অনেক বক্তব্য থাকিতে পারে। কিন্তু কোনও বক্তব্য দিয়াই এই সামরিক অভিযানের ব্যাখ্যা হয় না। সংঘর্ষ পরিহার করিবার অনেক পথ ছিল। যুদ্ধ এড়াইবার জন্য অনেক বিকল্প ভাবা যাইত, পরিকল্পনা করা যাইত। কিন্তু আজ লুহানস্ক ও ডনেৎস্ক-এর দিকে যে বিশালাকার রুশ বাহিনী ধাবিয়া আসিতেছে, তাহার কারণ দীর্ঘ কাল ধরিয়া কোনও সমাধানের ধার না ধারিয়া এই সঙ্কটকে পালন করা হইয়াছে সযত্নে, সাগ্রহে— যাহাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে কোনও দেশ হেলা করিতে না পারে, যাহাতে তাঁহার ক্ষমতার পরিধি বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহের জায়গা না থাকে। অবশ্যই আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপের দেশসমূহ এবং নেটো সংগঠনও ইউক্রেন সঙ্কটের দায়িত্ব এড়াইতে পারে না। তবে এই ক্ষেত্রে তাহাদের সামরিক অভিযানের দায়ে অভিযুক্ত করা যাইতে পারে না। বরং বলা যায়, এক দিকে হিমালয়সদৃশ কূটনৈতিক ব্যর্থতা এবং অন্য দিকে ক্ষমতান্ধ একনায়কের কৌশলদীপ্ত নীতির সামনে সম্পূর্ণ লেজেগোবরে হইবার দায়ে তারা অপরাধী।

২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া আক্রমণের সময়ই বোঝা গিয়াছিল, প্রেসিডেন্ট পুতিন কেবল সুযোগের অপেক্ষায় আছেন। ইউক্রেন রাশিয়ার কাছে দ্বাররক্ষীর সমান, ইউরোপের সঙ্গে সংযোগের প্রধান রাস্তা। বহু কাল ধরিয়া ইউক্রেন রাশিয়ারই একটি অংশ, দুই দেশের সংস্কৃতি এবং জীবনযাপনের মধ্যে পার্থক্য ক্ষীণ। তবু সেই ক্ষীণ ধারার মধ্যে গড়িয়া উঠিয়াছে একটি আলাদা সত্তাবোধ, আলাদা আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদ, জ়ার আমল হইতে যাহা শিকড় ছড়াইয়াছে, সোভিয়েট আমল হইতে রাজনীতি-অর্থনীতির কারণে বিদ্রোহোদ্যত হইয়াছে। সব মিলাইয়া সোভিয়েট ইউনিয়নের সহিত ইউক্রেনের সম্পর্ক দাঁড়াইয়াছে সাম্রাজ্য এবং উপনিবেশের মতো। স্বাভাবিক ভাবেই, সোভিয়েট পতনের সময় এই সুযোগের ‘সদ্ব্যবহার’ করিতে আমেরিকা ও ইউরোপের প্রধান দেশগুলি ভুল করে নাই। তাহাদের সমর্থনে ইউক্রেন দ্রুত মস্কোর কাছে একটি বড় রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হইয়া উঠে। সেই চ্যালেঞ্জকে এক হাত না লওয়া সোভিয়েট-উত্তর রাশিয়ার জাতীয়তাবাদী ও দক্ষিণপন্থী শিবিরের পক্ষে অসম্ভব এবং অর্থনৈতিক ভাবে— দেশের স্বার্থবিরোধী। সুতরাং প্রেসিডেন্ট পুতিন জানেন, তাঁহার দেশের সমাজে তাঁহার নম্বর তরতরাইয়া বাড়িবে, যদি ইউক্রেন প্রশ্নে আগ্রাসী হওয়া যায়।

কিন্তু যুদ্ধ কি কেবল বহির্বিশ্বকেই সঙ্কটে ফেলিবে, রাশিয়াকে নহে? রুশ অর্থনীতি ইতিমধ্যেই পুতিনের যুদ্ধঘোষণার হাতে-গরম ফল ভোগ করিতেছে। আমেরিকান ডলারের তুলনায় রুবলের দাম ১০ শতাংশ পড়িয়াছে, যে হার সর্বকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবুও বলিতেই হয়, ইউক্রেন আক্রমণ প্রেসিডেন্ট পুতিনের মাথা-গরম কূটনীতির চাল নহে, অতি হিসাবি পদক্ষেপ। কেননা, ঝুঁকিপূর্ণ এই চালে জিত হইলে জিত, হার হইলেও জিত। তাঁহাকে যদি কোনও মূহূর্তে অভিযান থামাইতেও হয়, এই হুঙ্কার দিয়াই তিনি থামিবেন যে, কত দূর তিনি যাইতে পারেন তাহা সকলে যেন মনে রাখে। বিশ্বরাজনীতিতে দর-কষাকষির খেলায় পুতিন অত্যুচ্চ স্থানে থাকিলেও সম্ভবত তাঁহার অভিলাষ সর্বোচ্চ স্থানে যাওয়া, চিরসুরক্ষিত রাখিবার দানে নিজেকে রাখা। ইউক্রেন অভিযান তাহা সম্ভব করিল।

অন্য বিষয়গুলি:

Russia Ukraine War Russia Ukraine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy