Advertisement
E-Paper

শিক্ষার স্বাতন্ত্র্য

সংসদের শিক্ষা-বিষয়ক স্থায়ী কমিটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং ওবিসি ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা নগণ্য।

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৫:২৪
Share
Save

দলিত, জনজাতি এবং অন্যান্য পশ্চাৎপদ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য বেসরকারি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণের দাবি উঠল। সংসদের শিক্ষা-বিষয়ক স্থায়ী কমিটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং ওবিসি ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা নগণ্য। যে-হেতু সংবিধানের ১৫(৫) ধারা অনুযায়ী যে কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে সরকার, তাই কমিটির সুপারিশ, কেন্দ্র আইন করে বেসরকারি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও জাতি-ভিত্তিক সংরক্ষণ চালু করুক। এই সুপারিশকে সমর্থন করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেস মুখপাত্র মনে করিয়েছেন যে, সংবিধান সংশোধন করে ১৫(৫) ধারা প্রণয়ন শীর্ষ আদালত বৈধ বলে ঘোষণা করেছিল। এবং অপর একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট এই মত প্রকাশ করেছিল যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে আসন সংরক্ষণের বিষয়টি যথা সময়ে নির্ধারিত হবে। কংগ্রেসের দাবি, এখন সময় এসেছে সেই আইন তৈরি করার। বিরোধীর আসনে বসে এমন দাবি তোলা ভারী সুবিধের কাজ। অথচ প্রশ্নটি সহজেই ঘুরিয়ে দেওয়া চলে কংগ্রেস দলের দিকেই। কংগ্রেস-নেতৃত্বে ইউপিএ সরকার সংবিধানে ওই সংশোধন এনেছিল ২০০৫ সালে। অথচ, সেই ধারা অনুসারে ২০০৬ সালে আইন করে কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতেই সংরক্ষণ চালু করেছিল ইউপিএ সরকার। কেন তখনই কংগ্রেস নেতৃত্ব সেই আইনে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে আসন সংরক্ষণ করেননি?

সম্ভবত তা এই শুভবুদ্ধির কারণে যে, সরকারি ক্ষমতার সীমা মানতেও সরকার দায়বদ্ধ। সরকার তার নিজের নীতিকে যত উৎকৃষ্ট বা ফলপ্রসূ বলেই মনে করুক, জোর করে তা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উপরে চাপিয়ে দিতে পারে না। তাতে একটি উদারবাদী, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভারসাম্য নষ্ট হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিধির বাইরে যে বিশাল পরিসর, তা চলে তার নিজস্ব নিয়মে। তার সংযোগ কেবল অর্থের সঙ্গে নয়, নাগরিকের চাহিদা ও আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে। ‘বাজার’ কথাটি প্রায়ই নেতিবাচক অর্থে গৃহীত হয়, এবং শিক্ষাকে ‘পণ্য’ করে তোলার বিরুদ্ধে যুক্তিও শোনা যায়। তবু বাস্তব এই, শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক পরিষেবার ক্ষেত্রে নাগরিকের নানা অংশের বিপুল চাহিদার জন্যই বেসরকারি ক্ষেত্রের দ্রুত প্রসার হয়েছে। কেবল সরকারি পরিষেবার মান, প্রসার বা অন্যান্য সীমাবদ্ধতা দিয়ে তার ব্যাখ্যা চলে না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য তাদের স্বাতন্ত্র্য। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্বাতন্ত্র্য থাকার জন্য সেগুলি শিল্পের চাহিদা ও ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যাশা মেটাতে পারছে। পাঠক্রম, মূল্যায়নের রীতি, পাঠদানের বিধিতে স্বকীয়তার মতোই, ছাত্রছাত্রী ভর্তির বিষয়ে নিজস্ব শর্ত তৈরিও এই স্বাতন্ত্র্যের একটি মাত্রা।

রাজ্যের অধিকারের প্রশ্নও আছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় যেখানে জনমত বেসরকারি উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণকে সমর্থন করেছে, সেখানে রাজ্য সরকার তার ব্যবস্থা করতে পারে। যেমন, তামিলনাড়ু ২০২১-এ আইন করে অতি-পশ্চাৎপদ গোষ্ঠীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও আসন সংরক্ষিত করেছে। ভারতে অধিকাংশ আইন যখন তৈরি হয়েছিল, তখন সরকারি ব্যবস্থাই ছিল প্রধান। এখন উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি ক্ষেত্র ছাড়িয়ে যাচ্ছে সরকারি ব্যবস্থাকে। বেসরকারি ক্ষেত্রে আসন পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাও ক্রমশ আসনের প্রয়োজনকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছাপূরণের রাজনীতি সংরক্ষণকে হাতিয়ার করতেই পারে। সে অধিকার অন্য রাজ্যেরও আছে। তবে ‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বাতন্ত্র্য বনাম সামাজিক ন্যায়’, এমন ভাবে বিতর্কটির উপস্থাপনা করা চলে না। শিক্ষায় সাম্য আনার অনেক উপায় রয়েছে,সংরক্ষণ একমাত্র উপায় নয়। সর্বাধিক কার্যকর উপায় কি না, সেই বিতর্কও হোক।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Education Quota System Equality

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}