—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
অসম, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, মহারাষ্ট্র। প্রথম দু’টি রাজ্যে কিছু বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন সমাগত। পরের দু’টিতে বিধানসভা নির্বাচন অদূরেই। নানা দিক থেকে স্বতন্ত্র হলেও চারটি রাজ্যের মধ্যে একটি বিষয়ে মিল আছে। তার নাম: ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের প্রধান দলটির সঙ্গে চার রাজ্যের প্রত্যেকটিতেই আসন্ন নির্বাচনগুলিতে বিজেপি-বিরোধী শিবিরের অন্য নানা দলের মনোমালিন্য প্রকট হয়ে উঠেছে। উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে বোঝাপড়া না হওয়ার ফলে কংগ্রেস উপনির্বাচনে ন’টি আসনের কোনওটিতেই প্রার্থী দেয়নি। এই সিদ্ধান্ত স্পষ্টতই এক ধরনের অসহযোগের পরিচায়ক। দিল্লিতে আম আদমি পার্টির সঙ্গে হাত মেলানোর সম্ভাবনা প্রথম থেকেই ক্ষীণ ছিল, এখন তা বিলীন। অসম বা মহারাষ্ট্রেও শরিকদের সঙ্গে কংগ্রেসের টানাপড়েন বাড়ছে। এর সঙ্গে যোগ করা যেতে পারে পশ্চিমবঙ্গের নাম। এই রাজ্যে ইন্ডিয়া মঞ্চটিতে পশ্চিমবঙ্গের প্রধানতম রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেসের অবস্থান প্রথমাবধি সমস্যাসঙ্কুল, কিন্তু বামফ্রন্ট তথা সিপিআইএমের সঙ্গেও বিধানসভা উপনির্বাচনে কংগ্রেসের বোঝাপড়ার গল্প কার্যত শেষ। সব মিলিয়ে, ইন্ডিয়া-র কেন্দ্রীয় চরিত্রটি মঞ্চের সংহতি ধরে রাখার সামর্থ্য দ্রুত হারাচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন কেবল সঙ্গত নয়, অনিবার্য।
এই সমস্যার প্রধান কারণ কি কংগ্রেস নিজে? শরিক, সঙ্গী বা সহযোগী দলগুলির অনেকেরই অভিযোগ, দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দলটি এখনও নিজের প্রকৃত ওজন বুঝতে অক্ষম, ফলে আসন রফার সময় তারা প্রাপ্যের তুলনায় অনেক বেশি আসন চায়, দাবি করে অতিরিক্ত গুরুত্ব। তাদের মতে, লোকসভা নির্বাচনে ‘অপ্রত্যাশিত’ সাফল্য এই আত্মগরিমায় ইন্ধন জুগিয়েছে, অথচ হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচনে ‘জেতা ম্যাচ হেরে যাওয়া’র সাম্প্রতিক ইতিহাস দেখিয়ে দিয়েছে যে কংগ্রেসের ভার এবং ধার কোনওটাই সন্তোষজনক নয়। এবং, রাজ্য স্তরের এই অভিজ্ঞতা থেকেও দলের নেতৃত্ব প্রয়োজনীয় শিক্ষা নেয়নি। বস্তুত, বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ব্যর্থতা একাধিক রাজ্যেই সহযোগীদের খুশি করেছে, কারণ তারা দর কষাকষিতে সুবিধা পেয়েছে। অর্থাৎ, বিজেপি-বিরোধী শিবিরে কংগ্রেসের সঙ্গে অন্য দলগুলির মনোমালিন্য বা অসহযোগ নতুন করে প্রবল হয়ে উঠছে।
এই বাস্তব কংগ্রেসের নেতারা কতটা বুঝতে পারছেন? দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বা তথাকথিত হাই কমান্ডের আচরণ ভরসা দেয় না। যেমন, মহারাষ্ট্রে মহা বিকাশ আঘাড়ী জোটের শরিকদের সঙ্গে বোঝাপড়ায় রাজ্য কংগ্রেসের নেতারা কেন বেশি নমনীয় হয়েছেন, এই প্রশ্ন তুলে রাহুল গান্ধী নাকি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দলীয় মুখপাত্ররা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বটে, কিন্তু সেই অস্বীকারের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে বড় রকমের সংশয় থেকেই যায়। এই সংশয় স্বাভাবিক যে, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব লোকসভা নির্বাচনে ৯৯ আসন পেয়ে ‘আমরা একাই একশো’ মনোভাবের বশীভূত হয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের অভিজ্ঞতাও একই সঙ্কেত দেয়। দলনেতারা হয়তো ভুলে যাচ্ছেন যে তাঁদের ভাল ফল করার পিছনে রাজ্য স্তরে শরিক বা সহযোগীদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাঁদের নিজস্ব শক্তি নিতান্ত সীমিত। তাঁরা যদি ভেবে থাকেন যে, জাতীয় স্তরে বিরোধী মঞ্চের ‘স্বাভাবিক কেন্দ্র’ হিসাবে কংগ্রেসের কোনও বিকল্প নেই, তাই রাজ্য স্তরে তাঁরা নিজের প্রকৃত ওজনের উপরে উঠেই খেলবেন, তা হলে সম্ভবত বড় ভুল করছেন। ভারতীয় গণতন্ত্রে প্রতিস্পর্ধী রাজনীতির যে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে চাইলে বিরোধী শিবিরের এই সর্বভারতীয় দলটিকে পুরনো দাপটের রোমন্থন ছেড়ে নতুন পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজের মানসিকতাকে বদলাতে হবে। হাই কমান্ড নামক ধারণার আধিপত্য থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে দলের অন্দরে যুক্তরাষ্ট্রীয় ধারাটিকে ফিরিয়ে আনার আন্তরিক চেষ্টাই সেই পরিবর্তনের প্রথম শর্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy