একটা কলার দাম কত? ভারতের মূল্যস্ফীতিলাঞ্ছিত বাজারেও সাত-আট টাকা, বড় জোর দশ টাকা। নিউ ইয়র্কের ফলের দোকানে ৩৫ সেন্ট— পারচেসিং পাওয়ার প্যারিটির হিসাব কষার দরকার নেই, ডলার থেকে সরাসরি টাকায় পাল্টে নিলে এই বৃহস্পতিবারের দরে সেই দাম ছিল ২৯ টাকা ৫৮ পয়সা। এই বৃহস্পতিবারই নিউ ইয়র্কের সদবি’জ়-এর নিলামে ৩৫ সেন্টে কিনে আনা একটি কলা বিক্রি হল ৬.২ মিলিয়ন ডলার দামে। টাকার অঙ্কে, প্রায় সাড়ে বাহান্ন কোটি টাকা। নিলামঘরে কলা বিক্রি হচ্ছিল কেন? কারণ, এটি ইটালীয় শিল্পী মারিজ়িও কাতেলান-এর ইনস্টলেশন আর্ট ‘কমেডিয়ান’— কলাটি নিলামঘরের দেওয়ালে একটি ডাক্ট টেপ দিয়ে লাগানো ছিল। ২০১৯ সাল থেকে কাতেলান-এর এই শিল্পের প্রদর্শনী চলছে। না, পাঁচ বছর ধরে একটিই কলা প্রদর্শিত হচ্ছে না— প্রদর্শিত কলাটি পচে গেলেই বাজার থেকে নতুন কলা কিনে তা পাল্টে দেওয়া হয়। এই দফায় শিল্পকর্মটি কিনেছেন চিনা ধনকুবের জাস্টিন সান— তিনি ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করেন। আরও ছয় প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিলামে হারিয়ে কলাটির গর্বিত মালিক সান জানিয়েছেন, অনতিবিলম্বেই তিনি কদলী ভক্ষণ করবেন— এক বিরল শিল্প-অভিজ্ঞতা হিসাবে। ঘটনা হল, কলাটি যেমন এর আগেও নিলামে বিক্রি হয়েছিল, তেমনই এর আগে তা খাওয়াও হয়েছিল। এবং, সকলেই যে নিলামে কিনে খেয়েছিলেন, তা-ও নয়— বিনা অনুমতিতেই দেওয়াল থেকে খুলে নিয়ে বেমালুম খেয়ে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে। পত্রপাঠ নতুন কলা কিনে এনে শূন্যস্থান পূরণও করা হয়েছে। মাত্র দশ টাকার ক্ষতি, বিশেষ গায়ে লাগার কথা নয়।
বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে ঘটা এই নিলামের খবরটি পড়ে প্রথম দফায় কেউ যদি একে ‘ফেক নিউজ়’ বলে উড়িয়ে দিতে চান, দোষ দেওয়ার উপায় থাকবে না। কারণ, এই নিলাম আপাতভাবে অর্থশাস্ত্রের কোনও নিয়মই মানে না। কলা বস্তুটিকে দুর্লভ বলার উপায় নেই; মহার্ঘও বলা যায় না কোনও মতেই। তার আয়ুও বড় জোর দু’তিন দিন। ‘শিল্প’ হিসাবে এ ক্ষেত্রে অবশ্য কলা একমেবাদ্বিতীয়ম্— দুনিয়ায় আর কি কোনও শিল্পবস্তু আছে, যা দিনতিনেকের মধ্যে পচে যায়? কিন্তু সেই বৈশিষ্ট্যের দামও পঞ্চাশ কোটি টাকায় পৌঁছবে না। তা হলে এমন অবিশ্বাস্য দামে কলাটি বিক্রি হল কেন? নেহাত এক ধনকুবেরের খেয়ালখুশি? না কি, রীতিমতো বৈষয়িক কারণ রয়েছে? মনে রাখা ভাল, ধনকুবেররা সচরাচর খামখেয়ালে চলেন না— অন্তত আর্থিক বিষয়ে। এই খরচের পিছনে প্রথম যে উদ্দেশ্যটি থাকা সম্ভব, তা হল গোটা দুনিয়াকে একটি বার্তা দেওয়া— আমার এত টাকা আছে যে, আমি এই পরিমাণ ‘বাজে খরচ’ করতেও দ্বিতীয় বার ভাবি না। এই বার্তাটি যেখানে পৌঁছনোর, ঠিকই পৌঁছবে— এই ধনকুবেরের ঋণযোগ্যতা বিলক্ষণ বাড়বে। ভেবে দেখলে, ছেলের বিয়েতে পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচের তুলনায় এ খরচ অতি সামান্য। দ্বিতীয় কারণটি আরও প্রত্যক্ষ— এই আপাত-পাগলামির বাজার আছে। নয়তো, ২০১৯-এর পাঁচ বছর পরেও অন্তত সাত জন এই শিল্প কেনার নিলামে যোগ দিতেন না। ২০২১ সালে ‘কমেডিয়ান’ বিক্রি হয়েছিল ১.২ লক্ষ ডলারে— তিন বছরে তার দাম বেড়েছে পঞ্চাশ গুণ। এ বার ভেবে দেখা যাক, আর কোনও লগ্নি এর ধারেকাছেও লাভ দিতে পেরেছে কি এই সময়কালে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy