প্রতীকী ছবি।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতারা কেহ কেহ বলিয়াছেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর বিতর্কের জবাবি বক্তৃতায় নরেন্দ্র মোদী তাঁহার আপন মাপকাঠিতেও নূতন স্তরে নামিলেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়াইয়া বিরোধী দল শাসিত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে পরিযায়ী শ্রমিকদের মাধ্যমে কোভিড ছড়াইবার অভিযোগ করিতেছেন— বাস্তবিকই নূতন স্তর। দুষ্ট লোকে বলিতে পারে, তাহাতে কী-বা আসে যায়, নামিবার জন্য আরও কত স্তর বাকি, তাহার কি ইয়ত্তা আছে? তবে নরেন্দ্র মোদীর নিকট এই সকল প্রশ্নই বোধ করি সম্পূর্ণ অবান্তর। তিনি সংসদীয় বিতর্কের উৎকর্ষ সাধনের ঠিকা লন নাই, অর্থনীতির সঙ্কট, রাজনীতির অবক্ষয় বা বিদেশ নীতির অপদার্থতা সম্পর্কে বিরোধীদের প্রশ্নের উত্তর দিবার দায় স্বীকারেও তাঁহার কিছুমাত্র উৎসাহ নাই। ক্ষমতার রাজনীতির ফসল তুলিতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করাই হয়তো তাঁহার ব্রত। নির্বাচনের হাওয়ায় সেই তাগিদ বহুগুণ বাড়ে। দেশের বৃহত্তম রাজ্যে নির্বাচন আসিয়াছে, অতএব সংসদে দাঁড়াইয়া পর পর দুই দিন দেশের প্রধানমন্ত্রী অম্লানবদনে ময়দানি তোপ দাগিলেন।
গোলন্দাজির প্রধান, কার্যত একমাত্র লক্ষ্য: কংগ্রেস। কংগ্রেসের বর্তমান এবং কংগ্রেসের অতীত। যে অতীতের কেন্দ্রে জওহরলাল নেহরু। নানা প্রসঙ্গে এবং অপ্রসঙ্গে তাঁহার নিন্দাবাদে নরেন্দ্র মোদীর অক্লান্ত উৎসাহ দেখিয়া কাহারও সন্দেহ হইতে পারে, তিনি কি তবে শত্রুরূপে পণ্ডিত নেহরুর ভজনা করিতেছেন? সেই ঐতিহ্যই আরও এক বার সংসদ ভবনে দেখা গেল, যখন ‘আজ আমি নেহরুর কথা বলিব’ ঘোষণা করিয়া নানা ভাবে, এমনকি গোয়ার ভারতভুক্তির কাহিনি অবধি টানিয়া আনিয়া তিনি পূর্বসূরির প্রতি ব্যঙ্গমিশ্রিত বিষোদ্গারে মাতিয়া উঠিলেন। একই ভাবে, কোনও প্রাসঙ্গিকতার তোয়াক্কা না করিয়া কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্র বা ইন্দিরা গান্ধীর যুক্তরাষ্ট্র-বিরোধী আধিপত্যবাদের নিন্দার ফাটা রেকর্ড বাজিল, কংগ্রেস কখনও সাব্যস্ত হইল ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’-এর পান্ডা বলিয়া, কখনও-বা ‘আর্বান নকশাল’দের সাগরেদ হিসাবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রধান প্রতিপাদ্য: আজ অবধি দেশের যত সমস্যা, সব কিছুর জন্যই দায়ী নেহরু ও তাঁহার দল। তিনি ক্রমাগত বলিয়া আসিতেছেন যে, কংগ্রেসের পালা সাঙ্গ হইয়াছে, তিনি দেশকে কংগ্রেস-মুক্ত করিয়া ছাড়িবেন, অথচ লোকসভায় এবং রাজ্যসভায় দুই দিনের বক্তৃতায় তিনি কংগ্রেসকে লইয়া পড়িয়া রহিলেন। বিচিত্র বটে!
এই একাগ্র কংগ্রেস-বিদূষণের বহর দেখিয়া মনে হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক যে, প্রধানমন্ত্রী দুশ্চিন্তায় ভুগিতেছেন। আট বৎসর কম সময় নহে। প্রায় আট বৎসর ধরিয়া তাঁহার সরকার শাসনের যে নমুনা দেখাইয়া আসিতেছে তাহা গৌরবের নহে। বিশেষত নোটবন্দি নামক বিধ্বংসী নির্বুদ্ধিতা হইতে শুরু করিয়া অতিমারি ও আর্থিক সঙ্কটের মোকাবিলায় চূড়ান্ত অপদার্থতা ও নিষ্ঠুরতার প্রদর্শনী যে তাঁহার অনুরাগী নাগরিকদের একটি বড় অংশকেও হতাশ এবং ক্ষুব্ধ করিয়া তুলিয়াছে, সেই বাস্তব প্রধানমন্ত্রীর না-বুঝিবার কারণ নাই। অচ্ছে দিন যে আসিবার নহে, তাহা তিনি জানেন। অতএব এক দিকে উত্তরপ্রদেশে ধুন্ধুমার মেরুকরণ, অন্য দিকে সংসদের জবাবি ভাষণে সমস্ত অপ্রিয় প্রশ্নের জবাব দিবার দায় এড়াইয়া কেবল কংগ্রেস, কংগ্রেস! আপনার নিজের কাজ নাই?— রাহুল গান্ধীর জিজ্ঞাসাটি বাস্তবিকই মোক্ষম। লক্ষণীয়, রাহুল গান্ধী ক্রমাগত সরকারের ব্যর্থতা ও অনাচারের দৃষ্টান্তগুলিকে চিহ্নিত করিয়া আসিতেছেন, সংসদের ভাষণেও তিনি অত্যন্ত নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন তুলিয়াছেন। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। অনেকেই বিরোধী রাজনীতির মঞ্চে তাঁহার ধারাবাহিক প্রশ্নবাচী ভূমিকা লক্ষ করিতেছেন। লক্ষ করিতেছেন প্রধানমন্ত্রীও। সেই কারণেই হয়তো রাগের মাত্রা এমন চড়িতেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy