Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Central Government

তথ্যের খিদে

এপ্রিলে ঘোষণা হয়েছিল, ভারতে যত ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক আছে, ২৭ জুন থেকে তাদের গ্রাহকদের বিষয়ে বহুবিধ তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২২ ০৫:৩৫
Share: Save:

বিপুল চাপের মুখে অন্তত তিন মাসের জন্য পিছু হটল কেন্দ্রীয় সরকার। এপ্রিলে ঘোষণা হয়েছিল, ভারতে যত ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক আছে, ২৭ জুন থেকে তাদের গ্রাহকদের বিষয়ে বহুবিধ তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। পরিষেবা ব্যবহারকারীর নাম, ফোন নম্বর, ইমেল অ্যাড্রেস, আইপি অ্যাড্রেস, এবং কেন তিনি ভিপিএন পরিষেবাটি ব্যবহার করছেন, এই সমস্ত তথ্য সংস্থার কাছে জমা রাখতে হবে পাঁচ বছর— এমনকি, সেই গ্রাহক যদি সংশ্লিষ্ট সংস্থার ভিপিএন ব্যবহার করা বন্ধ করে দেন, তবুও। ছ’মাসের জন্য জমা রাখতে হবে ইউসেজ লগ, অর্থাৎ পরিষেবা ব্যবহারকারী কবে কখন কোন ওয়েবসাইটে গিয়েছেন, কোন বার্তা প্রেরণ করেছেন, সব তথ্যই। যে সংস্থা এই নিয়ম পালনে ব্যর্থ হবে, তার জন্য কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনস্থ সেন্ট্রাল ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম-এর এপ্রিল মাসের নির্দেশিকায়। ভিপিএন পরিষেবার চরিত্রের সঙ্গে সরকারের এই নীতিটির বিরোধ প্রত্যক্ষ— ব্যবহারকারী যাতে নিজের পরিচয়, এবং ব্রাউজ়িং-এর তথ্য গোপন রাখতে পারেন, তা নিশ্চিত করাই এই সংস্থাগুলির মূল উদ্দেশ্য। এই গোপনীয়তা অতি জরুরি, বিশেষত সমাজকর্মী, সাংবাদিক, হুইস্‌লব্লোয়ারদের জন্য। বস্তুত, রাষ্ট্রীয় অন্যায়-অনৈতিকতার বিরুদ্ধে যাঁরাই কথা বলেন, পরিচয় গোপন রাখার স্ব-ক্ষমতা তাঁদের অনেকেরই কবচকুণ্ডল। বহু ভিপিএন সংস্থা ‘নো লগ’ নীতি মেনে চলে, অর্থাৎ তারা গ্রাহকের কোনও তথ্য কখনও মজুত করে না। স্বভাবতই এই সংস্থাগুলি প্রতিবাদ করেছে; একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ভারত থেকে ইতিমধ্যেই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। সম্ভবত সেই চাপেই সরকার অন্তত তিন মাসের জন্য পিছু হটল। তবে, নরেন্দ্র মোদী সরকারের গত আট বছরের চলন বলছে, এই নীতি প্রত্যাহারের সম্ভাবনা ক্ষীণ, অতি ক্ষীণ।

কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্যের খিদে দৃশ্যত অসীম— স্মরণ করা বিধেয় যে, সরকারের সমালোচকদের ফোনে নজরদারি করার জন্য পেগাসাস সফটওয়্যার কেনার অভিযোগটি কিন্তু সরকার অস্বীকার করেনি। ভিপিএন সংস্থাগুলির থেকে গ্রাহকদের তথ্য সংগ্রহ করার এই তাড়নাও সেই একই প্রবণতার প্রকাশ। উল্লেখ করা জরুরি যে, এই কাজটি কেবলমাত্র ভারত সরকারই করছে না, রাশিয়া বা চিনের মতো দেশও করছে। ভারত কোন দেশগুলির সঙ্গে এক বন্ধনীভুক্ত হচ্ছে, সেই কথাটি তাৎপর্যপূর্ণ— নরেন্দ্র মোদীর অধীনে ভারতের রাষ্ট্রীয় চরিত্রটি ঠিক কেমন, তা বোঝার জন্য এটি একটি মোক্ষম সূচক। সরকার তার বিরোধীদের, সমালোচকদের দমন করতে চায়। ইন্টারনেটের পরিসরটি যে হেতু ক্রমবর্ধমান, এবং সরকারের সমালোচনার ক্ষেত্রে তার ব্যবহারের গুরুত্বও সমানেই বাড়ছে, ফলে এই পরিসরটিকে নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের কাছে অপরিহার্য। ‘বিগ ব্রাদার’ নজরদারি করেই থাকে— সাইবার পরিসরটিকে সেই নজরদারির আওতায় আনার এই রাস্তাটি একাধিপত্যকামী রাষ্ট্রের পছন্দ হওয়ারই কথা। নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার যে অধিকার ভারতীয় সংবিধানে স্বীকৃত, ভিপিএন-এর তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা সরাসরি সেই অধিকারটিকে খণ্ডন করে। লঙ্ঘিত হয় নাগরিকের বাক্‌স্বাধীনতাও, কারণ সরকারের নিরন্তর নজরদারির সামনে বহু নাগরিকই আত্মনিয়ন্ত্রণ করবেন। অনুমান করা চলে, সেই ত্রাস সৃষ্টি করাই সরকারের মূল উদ্দেশ্য। কেন নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে এই তথ্য সংগ্রহ করা জরুরি, তার অলঙ্ঘ্য যুক্তি পেশ করার দায়িত্ব সরকারের উপর বর্তায়। জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে সেই দায় সারলে চলবে না। বিশেষত, ভারতে এখনও তথ্যের নিরাপত্তা আইন নেই, এবং আন্তর্জাতিক নিরিখে এই দেশে ‘সাইবার ব্রিচ’-এর সংখ্যা উদ্বেগজনক রকম বেশি। এই অবস্থায় নাগরিকের আরও তথ্য আদায় করে বিপন্নতা আরও বাড়ানো হবে কেন, সেই প্রশ্নের উত্তরও সরকারকে দিতে হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Central Government VPN
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy