বিষাক্ত ধোঁয়ার মতো ছড়াচ্ছে রোগের আতঙ্ক।
সারা বছর মশার চাষ করে, এখন মৃত্যুর ফসল তুলছে এ রাজ্যের শহরগুলি। হাওড়া পুরসভার অর্ধনির্মিত সুইমিং পুলে, কলকাতায় টালি নালার দুই পাশের গর্তে, রাস্তায় রাস্তায় জমে-থাকা আবর্জনার মধ্যে বড় হচ্ছে অগণিত মশার লার্ভা। তারা প্রতি দিন লক্ষ লক্ষ মৃত্যুদূত পাঠাচ্ছে পাড়ায় পাড়ায়। ফের সংবাদমাধ্যমে সংক্রমিতের মৃত্যুর বিবরণ, হাসপাতালগুলিতে স্থান অকুলান, রক্তের সঙ্কট। পুজোর আনন্দ ম্লান করে দিয়ে এক-একটি এলাকায় বিষাক্ত ধোঁয়ার মতো ছড়াচ্ছে রোগের আতঙ্ক। এমন ভয়ানক সঙ্কট যে অকস্মাৎ হল, এমন নয়। বর্ষার পর মশার প্রকোপ বাড়লে ডেঙ্গি দেখা দিতে পারে, সময় থাকতে মশা নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন, এ কথা বিশেষজ্ঞরা বছরের গোড়া থেকেই বলে আসছেন। বিশেষত তাঁদের উদ্বেগ ছিল কোভিড ও ডেঙ্গির দোফলা আক্রমণ নিয়ে। কোভিডের আক্রমণে দেহের প্রতিরোধ শক্তি দুর্বল হলে আরও ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে যে কোনও সংক্রামক অসুখ, এ কথা এত দিনে প্রতিষ্ঠিত। সমস্যা চিকিৎসার পরিকাঠামো নিয়েও— কোভিড কী ভাবে চিকিৎসাব্যবস্থাকে ব্যস্তসমস্ত করে রাখে, সম্পূর্ণ মনোযোগ দখল করে নেয়, তা প্রমাণিত। তার উপরে ডেঙ্গি তীব্র ও ব্যাপক হারে দেখা দিলে কেবল সময়োপযোগী চিকিৎসার অভাবে বহু রোগী বিপন্ন হবেন, তাঁদের মৃত্যুও হতে পারে। তাই ডেঙ্গিকে অঙ্কুরেই বিনাশ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। মশার লার্ভা সময় থাকতে মারলে ডেঙ্গি ছড়াবার সম্ভাবনাই কমে যায়।
যথারীতি সেই সুপরামর্শ উপেক্ষিত হয়েছে। এ বছর অগস্টের গোড়া থেকেই ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিল, অগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে তা ছাড়িয়ে যায় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যাকে। সেপ্টেম্বর থেকে আরও দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গি, প্রতি দিন অন্তত দু’শো নতুন সংক্রমণের খবর মিলেছে। আক্ষেপ এই যে, কোভিডের মতো বিপর্যয় দেখার পরেও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও সুপরিকল্পিত, আরও তৎপর তো করা হয়নি বটেই, উপরন্তু কলকাতা পুরসভার নানা পরিষেবায় যে উন্নতি লক্ষ করা গিয়েছিল তৃণমূল শাসনের গোড়ার দিকে, সেগুলোরও ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। ফের কলকাতার পথেঘাটে স্তূপীকৃত আবর্জনা দেখা যাচ্ছে। নিকাশির অবস্থাও তথৈবচ, প্লাস্টিক বা থার্মোকল ব্যবহারেও রাশ টানা হয়নি। ফলে প্রবল বৃষ্টির পর রাস্তার জল যদি বা নামে, নিচু জমিতে তা দাঁড়িয়েই থাকে। অবৈধ নির্মাণ কখনওই নিয়ন্ত্রিত হয়নি, এখনও অব্যাহত। হাওড়ার সুইমিং পুলের মতোই, বহু নির্মাণ টাকা অথবা অনুমোদনের অভাবে আটকে মাঝপথে, পরিত্যক্ত নির্মাণগুলি হয়ে উঠেছে মশার আঁতুড়ঘর।
এর কোনওটাই অজানা নয়। জন্মলগ্ন থেকে এই নগরী মশার সঙ্গে মোকাবিলা করে চলেছে, এখানেই রোনাল্ড রস ম্যালেরিয়ার রহস্য খুঁজে পেয়েছিলেন। তবু কিছু গতে-বাঁধা কাজে আটকে রাখা হয় ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগকে। কখনও বা ড্রোন উড়িয়ে ছবি তোলা, মশা-খেকো মাছ জলে ছাড়ার মতো চমকও দেন। আসলে প্রয়োজন সম্বৎসর কীট-পতঙ্গের নিয়ন্ত্রণ, আবর্জনা ও নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি, নাগরিকের সঙ্গে পুরসভার সম্মিলিত কর্মসূচি। কিন্তু তা হচ্ছে কোথায়? জনস্বাস্থ্যকে রাজ্যের কর্তারা বার বার আপৎকালীন চিকিৎসার সঙ্গে এক করে ফেলেন। সঙ্কট দেখা দিলে শোরগোল ফেলেন, তার পর যথা পূর্বং। তাই কিছুই বদলায় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy