Advertisement
২৩ অক্টোবর ২০২৪
Non Veg Food

আমিষে অন্যায়?

ঘটনাটি স্তব্ধ করে দেয়। বিজেপি শাসনে সংখ্যালঘু বিদ্বেষ এ দেশে কতখানি ডালপালা বিস্তার করেছে, টিফিনবাক্সটিও যে তার হাত থেকে রেহাই পায়নি, আমরোহা তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৩৮
Share: Save:

বছর পাঁচেকের শিশুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগটি নাকি ‘গুরুতর’। টিফিনে সে নিয়মিত বিরিয়ানি-সহ আমিষ খাবার আনে। এতে নিরামিষভোজী সহপাঠীদের অসুবিধায় পড়তে হয়। তার প্রতি অন্য অভিভাবকেরাও প্রসন্ন নন। অতএব উত্তরপ্রদেশের আমরোহার এক বেসরকারি স্কুল থেকে বরখাস্ত করা হল শিশুটিকে। অবশ্য তার মা জানিয়েছেন, উক্ত বিদ্যালয়টিতে ধর্ম নিয়ে বিদ্বেষ ছড়ানো হয়। তাঁর পুত্রের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করত অন্য শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সেই আচরণের জন্য তাদের কোনও শাস্তি হয়নি। প্রধান শিক্ষকও এ-সকল অভিযোগকে সজোরে উড়িয়ে দিয়েছেন।

ঘটনাটি স্তব্ধ করে দেয়। বিজেপি শাসনে সংখ্যালঘু বিদ্বেষ এ দেশে কতখানি ডালপালা বিস্তার করেছে, টিফিনবাক্সটিও যে তার হাত থেকে রেহাই পায়নি, আমরোহা তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ। যদিও সমাজমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেটনাগরিকেরা, তবুও সুবিচারের প্রশ্নে নিঃসংশয় হওয়া যায় না। হওয়া যায় না রাজ্যটি যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ হওয়ার কারণে, হওয়া যায় না লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি তাদের প্রত্যাশিত ফলের ধারেকাছে পৌঁছতে না-পারলেও এ দেশে ‘হিন্দুত্ব’-র দাপট না-কমার কারণে, যে হিন্দুত্ব ভারতীয় ঐতিহ্যকে খাদ্যাভ্যাস, পোশাকের মতো নানাবিধ সঙ্কীর্ণ গণ্ডিতে বেঁধে রাখতে চায়। এই গণ্ডির বাইরে যারা, তাদের সর্বক্ষণ চাপে রাখা, ক্ষেত্রবিশেষে বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও কেড়ে নেওয়া এই নতুন ভারতের প্রাত্যহিকতায় পরিণত। গোরক্ষকদের হাতে হরিয়ানায় সাবির মল্লিক এবং ফরিদাবাদে আরিয়ান মিশ্রের হত্যা তারই সাম্প্রতিকতম উদাহরণ। এই পরিপ্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে আমরোহার স্কুলটির বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে বিদ্বেষ ছড়ানোর, সংখ্যালঘু ছাত্রের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের যে অভিযোগ উঠেছে, তাকে অস্বীকার করা যায় না। যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী গোরক্ষকদের প্রশ্রয় জোগান, মাংস খাওয়ার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বলেন, সেখানে টিফিনে আমিষ ভোজন যে গুরুতর অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে, তাতে আশ্চর্য কী। বরং উদ্বেগ হয় শিশুটির ভবিষ্যতের কথা ভেবে। যে ঘৃণা, বিদ্বেষ, অবিচার তাকে এই পাঁচ বছরেই সহ্য করতে হল, তাতে তার মানসিক জগৎ আদৌ সুস্থ অক্ষত থাকবে কি না, সন্দেহ যথেষ্ট।

বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে ছাত্রটি নাকি ভিন ধর্মের সহপাঠীদের ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলিম হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিত। মনে রাখা প্রয়োজন, পাঁচ বছর বয়স ধর্ম, ধর্ম পরিবর্তনের তাৎপর্য বোঝার পক্ষে যথেষ্ট নয়। বরং সুকুমার প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়েই সে নিজ খাবার অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাইত। এর মধ্যে কোনও সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ পাওয়া মারাত্মক অপরাধ। এ ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রটি শিক্ষার্থীর কাছে তুলে ধরা। বিদ্যালয়ে যে সকল শিক্ষার্থী সমান— ধর্ম, জাত, সামাজিক অবস্থান এখানে কোনও বাধা হতে পারে না, সেই সত্যটি শিশুবেলা থেকে শিক্ষার্থীকে আত্মস্থ করানোর কথা শিক্ষালয়েরই। কিন্তু আমরোহার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজেই সেই সত্যের পথে স্থিত থাকেননি। তিনি এক দিকে শিশুদের মধ্যে ধর্মীয় বিভেদে প্রশ্রয় দিয়েছেন, অন্য দিকে এক শিশুর শিক্ষার অধিকারটি কেড়ে নিয়েছেন। এ দেশের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক চরিত্রের প্রয়োজনেই তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রাপ্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Uttar Pradesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE