Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Nupur Sharma

কঠোর শাস্তি হোক

ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র এমনই তৎপরতায় অপরাধীদের শাস্তি দিতে চাইবে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২২ ০৬:৪৪
Share: Save:

মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিজেপির ভূতপূর্ব মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে সরাসরি দায়ী করেছেন উদয়পুরের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাক্রমের জন্য। আদালতের মতে, নূপুরের অবাঞ্ছিত মন্তব্যের প্রতিক্রিয়াতেই দেশ জুড়ে আবেগের বিস্ফোরণ ঘটেছে। মহামান্য আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রেখেও বলা প্রয়োজন, এই পর্যবেক্ষণটি বড় জোর আংশিক ভাবে ঠিক। নূপুরের মন্তব্য উস্কানিমূলক, তাতে কোনও সংশয় নেই— কিন্তু, কোনও উস্কানিই কারও প্রাণহানি করার যুক্তি হতে পারে না। কানহাইয়া লালকে হত্যা করার অভিযোগে যারা গ্রেফতার হয়েছে, বিচারে তারা দোষী প্রমাণিত হলে তাদের সুকঠিন শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। সেই শাস্তির কথা যেন গোটা দেশের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছয়, যাতে আর কেউ এমন অপরাধ করার সাহসটুকুও না পায়।

এই প্রসঙ্গে রাজস্থানেরই শাভু লালের কথা মনে পড়তে পারে, আবার না-ও পারে। ২০১৭ সালে শাভু লাল মহম্মদ আফরাজ়ুল নামে পশ্চিমবঙ্গের এক পরিযায়ী শ্রমিককে পুড়িয়ে খুন করেছিল, এবং সেই হত্যাকাণ্ডটি সরাসরি সম্প্রচার করেছিল সমাজমাধ্যমে— কানহাইয়া লালের আততায়ীরাও যেমন সম্প্রচার করেছে। শাভু লাল তখন গ্রেফতার হয়েছিল। কিন্তু, পরের পাঁচ বছরে তার বিচার কত দূর অগ্রসর হল, সে জামিন পেয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে গেল না কি বিরলের মধ্যেও বিরলতম এক অপরাধের জন্য তার ঠাঁই হল কারাগারের অন্ধকারে, সেই সংবাদটি গণপরিসরে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আশা করা যাক, কানহাইয়া লালকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া রিয়াজ় ও ঘাউস মহম্মদের ক্ষেত্রে তেমনটি হবে না। এই হত্যাকাণ্ডের অব্যবহিত পরেই এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত পৌঁছে গিয়েছেন নিহতের বাড়িতে— স্পষ্টতই রাষ্ট্রশক্তি এই ঘটনায় অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি চায়। এই গুরুত্ব স্বাগত। দেশবাসী আশা করতেই পারে যে, ভবিষ্যতে যদি ধর্মীয় কারণে অন্য কারও প্রাণহানি হয়— যেমন, সংগঠিত সাম্প্রদায়িক হিংসায়, গো-সন্ত্রাসে, বা ধর্মীয় পরিচয়ের ভূমিকা আছে এমন পুলিশি এনকাউন্টারে— তখনও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র এমনই তৎপরতায় অপরাধীদের শাস্তি দিতে চাইবে। আশা করাই যায় যে, এই মুহূর্ত থেকেই রাষ্ট্র ধর্মীয় কারণে হিংস্রতার বিরুদ্ধে জ়িরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করবে, ধর্মের রং না দেখেই।

পয়গম্বর সম্বন্ধে অসম্মানজনক মন্তব্যে যাঁদের ভাবাবেগ আহত হয়েছে, তাঁদের সিংহভাগই গণতন্ত্রের উপর বিশ্বাস রেখেছেন। গণতন্ত্র তাঁদের প্রতিবাদের যে পরিসর দিয়েছে, তাঁরা সেই গণ্ডি লঙ্ঘন করেননি; বিশ্বাস করেছেন, খানিক বিলম্বে হলেও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিই নূপুরকে তিরস্কার করবে। বিশ্বাসটি ভিত্তিহীনও নয়— মন্তব্যের পর এক মাস অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই সুপ্রিম কোর্টের সুকঠিন পর্যবেক্ষণে তার প্রমাণ মিলেছে। আশা করাই যায় যে, আরও খানিক বিলম্ব যদি হয়ও, প্রধানমন্ত্রী তাঁর সুউচ্চ আসন থেকে নূপুরকে তীব্র তিরস্কার করবেন— জানাবেন যে, তিনি কোনও ধর্মের অবমাননা মেনে নেবেন না; প্রতিটি ক্ষেত্রেই জ়িরো টলারেন্স নীতি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সেই লক্ষণ কি ইতিমধ্যেই দেখা যায়নি? গত কয়েক দিনে তিন জন গ্রেফতার হয়েছেন— তিস্তা শেতলবাদ ও আর বি শ্রীকুমারের বিরুদ্ধে গুজরাত মামলায় ভুয়ো তথ্যপ্রমাণ দেওয়ার অভিযোগ; মহম্মদ জ়ুবেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ২০১৮ সালে একটি রিটুইটে হিন্দু ধর্মের আবেগে আঘাত করার। গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ— সুতরাং আশা করা বিধেয় যে, এই জমানার সক্রিয়তা শুধুমাত্র হিন্দুধর্মের ‘অবমাননা’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। সেই আশা পূরণ না হওয়া অবধি আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে, কিন্তু হিংস্রতার পথ পরিত্যাজ্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Nupur Sharma Prophet row Supreme Court of India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy