Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
COVID 19

সহায়ক

প্রকল্পটির সুবিধা একাধিক। ইহার মাধ্যমে মানুষ ঘরে বসিয়াই ফোন এবং অনলাইনের মাধ্যমে চিকিৎসকের পরামর্শ লইতে পারিবেন, এবং প্রেসক্রিপশনও পাইবেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২১ ০৬:২৫
Share: Save:

২০২০ সালের পূর্বে ভারতে টেলিমেডিসিন-এর অস্তিত্ব ছিল, কিন্তু বৈধতা ছিল না। বস্তুত, চিকিৎসকের নিকট সশরীরে উপস্থিত না হইয়াও যে চিকিৎসা করা সম্ভব— এই ধারণাটি জনমানসে ইতিপূর্বে খুব বেশি বিস্তৃত হয় নাই। অতিমারির আগমনে তাহা এক ধাক্কায় বিস্তার লাভ করিল। ২০২০ সালের মার্চে কেন্দ্রীয় সরকার টেলিমেডিসিনকে বৈধ ঘোষণা করিল। ঘরবন্দি দশাতে বহু মানুষ ইহার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ লাভ করিয়াছিলেন। সেই পর্যবেক্ষণ হইতেই পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারি উদ্যোগে ‘স্বাস্থ্য ইঙ্গিত’ প্রকল্পটি চালু করিয়াছেন। উদ্দেশ্য, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও যাহাতে প্রয়োজনে অবিলম্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ লাভ করিতে পারেন। ২ অগস্ট হইতে শুরু হওয়া প্রকল্পটিতে এই পর্যন্ত যে সাড়া মিলিয়াছে, তাহা তাৎপর্যপূর্ণ। পরিসংখ্যান বলিতেছে, বারো দিনে ত্রিশ হাজারের অধিক মানুষ এই পরিষেবার সুবিধা লইয়াছেন। ইহা প্রমাণ করিয়া দেয় যে, এই ধরনের প্রকল্পের চাহিদা কত তীব্র ছিল।

প্রকল্পটির সুবিধা একাধিক। ইহার মাধ্যমে মানুষ ঘরে বসিয়াই ফোন এবং অনলাইনের মাধ্যমে চিকিৎসকের পরামর্শ লইতে পারিবেন, এবং প্রেসক্রিপশনও পাইবেন। এযাবৎ কাল জরুরি প্রয়োজনে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের জেলা অথবা শহরের হাসপাতালগুলির শরণাপন্ন হইতে হইত। যাতায়াত এবং থাকা-খাওয়া বাবদ অর্থব্যয় হইত যথেষ্ট। উক্ত প্রকল্পটি সেই অর্থ সাশ্রয় করিবে, এবং চিকিৎসাকেন্দ্রের ভিড় হইতে সংক্রমিত হইবার আশঙ্কাও হ্রাস করিবে। পরিসংখ্যান বলিতেছে, ওই ১২ দিনে মোট রোগীর ৭০ শতাংশই মহিলা। ইহা তাৎপর্যপূর্ণ। গ্রামাঞ্চলের মহিলাদের অনেকেই বিবিধ কারণে নিতান্ত প্রয়োজন ব্যতীত স্বাস্থ্যকেন্দ্রমুখী হইতে চাহেন না। তাঁহাদের স্বাস্থ্যের প্রশ্নটি উপেক্ষিতই থাকিয়া যায়। ঘরে বসিয়া চিকিৎসকের পরামর্শ পাইলে মহিলাদের চিকিৎসায় সেই বাধাও দূর হইবে।

কিন্তু এই ধরনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও করা প্রয়োজন। এখানে চিকিৎসক শুধুমাত্র রোগীর কথা শুনিয়া পরামর্শ দিবেন, কোনও রূপ ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করিবার সুযোগ তাঁহার নাই। সুতরাং, রোগী এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মধ্যে সংযোগ রক্ষার কাজটি স্থানীয় কোনও প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর সাহায্যে হওয়াই বিধেয়, যিনি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যপরীক্ষার প্রাথমিক কাজটি করিয়া রিপোর্ট জমা দিবেন। অ্যাজ়মা, ডায়াবিটিসের ন্যায় ক্রনিক অসুখের প্রেসক্রিপশন প্রেরণের ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশাবলি মানিতে হইবে চিকিৎসককে। অর্থাৎ, শুধুমাত্র চাহিদার কথাটি না ভাবিয়া ইহার বিভিন্ন দিক লইয়া আরও ভাবনাচিন্তা প্রয়োজন, যাহাতে টেলিমেডিসিনকে প্রথাগত চিকিৎসার পরিপূরক হিসাবে ব্যবহার করা যাইতে পারে। সার্বিক ভাবে ভারতের জনস্বাস্থ্যের চিত্রটি ভয়ঙ্কর। প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো কার্যত ধুঁকিতেছে। পশ্চিমবঙ্গও ব্যতিক্রম নহে। এমতাবস্থায়, গ্রামীণ চিকিৎসায় দীর্ঘ দিন ধরিয়াই এক সহায়ক ব্যবস্থার কথা বলা হইতেছিল। টেলিমেডিসিন সেই ব্যবস্থা হইয়া উঠিতে পারে। ইহাতে এক দিকে চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের তীব্র অভাবের কিছু সুরাহা হইবে, অন্য দিকে জেলা ও শহরের হাসপাতালগুলির উপরে বিপুল চাপও কমিবে।

অন্য বিষয়গুলি:

COVID 19 Tele Medicine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy