Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
GDP

সুসংবাদ?

অন্য দিকে, ব্যক্তির পরিপ্রেক্ষিত হইতে দেখিলে, ভোগব্যয়ে শ্লথতার কারণ সহজবোধ্য— মানুষের আয় কমিয়াছে, বাড়িয়াছে আয়সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৪৪
Share: Save:

জুলাই হইতে সেপ্টেম্বর, এই তিন মাসে ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট বা জিডিপি) বৃদ্ধির হার দাঁড়াইল ৮.৪ শতাংশ। সুসংবাদ? গত অর্থবর্ষের এই তিন মাসের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করিলে তো বটেই— গত বৎসর জুলাই হইতে সেপ্টেম্বরে অর্থব্যবস্থা সঙ্কুচিত হইয়াছিল ৭.৪ শতাংশ। কিন্তু, যদি তাহার পূর্বের বৎসর, অর্থাৎ কোভিড-পূর্ববর্তী পরিস্থিতির সহিত তুলনা করা হয়? দেখা যাইবে, সেই ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের জুলাই হইতে সেপ্টেম্বরের ত্রৈমাসিকের তুলনায় ভারতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়াছে ০.৩৩ শতাংশ মাত্র। অর্থাৎ, অতিমারির পূর্বে ভারতের আর্থিক পরিস্থিতি যেখানে ছিল, এত দিনে আবার সেইখানে ফিরিয়াছে— মধ্যবর্তী দুইটি বৎসর বেমালুম খোয়া গিয়াছে। ফের যদি কোনও ধাক্কায় ভারতীয় অর্থব্যবস্থা বেসামাল না-ও হয়, তবুও এই হৃত দুই বৎসরের ঘাটতি পুষাইতে দেড় দশকও সময় লাগিতে পারে। এবং, বৃদ্ধির এই চড়া অঙ্কের পিছনে যে গত বৎসরের অর্থনীতির ধ্বংসলীলার ‘লো বেস’ রহিয়াছে, তাহাও অনস্বীকার্য। অতএব, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস ছাপাইয়া আর্থিক বৃদ্ধি হইয়াছে, সেই আনন্দে আত্মহারা না হইলেই মঙ্গল। বিশেষত আশঙ্কা হয়, রাজনৈতিক ভাবে কোণঠাসা কেন্দ্রীয় সরকার আর্থিক বৃদ্ধির এই পরিসংখ্যানটিকে কোনও রূপ পরিপ্রেক্ষিত ব্যতিরেকেই, অগ্রপশ্চাৎহীন ভাবে ব্যবহার করিতে চাহিবে। সেই অপব্যবহার হইতে সাবধান!

তবুও, এই ৮.৪ শতাংশ বৃদ্ধিকে কেহ ভারতীয় অর্থনীতির হৃত স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার বলিতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে, দুঃসংবাদটি লুকাইয়া আছে স্বাস্থ্যোদ্ধারের চরিত্রে। ২০১৯-২০ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের তুলনায় বর্তমান অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ব্যক্তিগত ভোগব্যয়ের পরিমাণ সাড়ে তিন শতাংশ কম। অর্থাৎ, সার্বিক ভাবে আর্থিক বৃদ্ধি ঘটিলেও ব্যক্তির আর্থিক পরিস্থিতি এখনও মন্দ। এই পরিস্থিতির দুইটি দিক আছে— একটি সার্বিক অর্থনীতির দিক, অন্যটি ব্যক্তির দিক। সার্বিক ভাবে দেখিলে, ব্যক্তিগত ভোগব্যয়ের পরিমাণ না বাড়িলে তাহা বাজারে মন্দার ইঙ্গিত দেয়, ফলে শিল্পক্ষেত্রে লগ্নির পরিমাণেও ভাটা পড়ে। ফলে, আর্থিক বৃদ্ধি সম্পূর্ণত সরকারি ব্যয়ের উপর নির্ভরশীল হইয়া উঠে। বর্তমানে ভারতে আর্থিক বৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি সরকারি ব্যয়, কিন্তু তাহা অনন্ত কাল চালাইয়া যাওয়া অসম্ভব। ফলে, আশঙ্কা থাকিয়াই যায় যে, বৃদ্ধির হারে ইহার কুপ্রভাব পড়িবে। দ্বিতীয়ত, মূল্যস্ফীতির হার দ্রুত ঊর্ধ্বগামী হওয়ায় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কেরও হাত বাঁধা পড়িয়া গিয়াছে। সুদের হার কমাইয়া বিনিয়োগে উৎসাহ দিবার কাজটি কঠিনতর হইয়াছে। ফলে, বর্তমান অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিকের উৎসব-কেন্দ্রিক ভোগব্যয় বৃদ্ধির ভরবেগকে ধরিয়া রাখা না গেলে স্বাস্থ্যোদ্ধারের সুখস্বপ্ন দীর্ঘস্থায়ী হইবে না।

অন্য দিকে, ব্যক্তির পরিপ্রেক্ষিত হইতে দেখিলে, ভোগব্যয়ে শ্লথতার কারণ সহজবোধ্য— মানুষের আয় কমিয়াছে, বাড়িয়াছে আয়সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা। ফলে, ভোগব্যয়ে কাটছাঁট হওয়া স্বাভাবিক। জুন মাসে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ২০২০ সালের গৃহস্থালির সঞ্চয়ের পরিসংখ্যান প্রকাশ করিয়াছিল। তাহাতে যে ছবিটি ধরা পড়িয়াছে, তাহা এই রূপ— অতিমারির সূচনায় গার্হস্থ সঞ্চয়ের পরিমাণ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বাড়িয়াছিল; তাহার পর যত সময় গড়াইয়াছে, সঞ্চয়ের পরিমাণও ততই কমিয়াছে। ছবিটির ব্যাখ্যা সহজ: গোড়ায় অতিমারিজনিত অনিশ্চয়তায় মানুষ হাতে টাকা রাখিতে চাহিয়াছিলেন, দোকানপাট সবই বন্ধ থাকায় খরচ করিবার উপায়ও ছিল না; সময় যত গড়াইয়াছে, বহু মানুষ আয়ের অভাবে সঞ্চয় ভাঙিয়া খাইতে বাধ্য হইয়াছেন। পরিস্থিতিটি গভীর উদ্বেগের। আয়ের সুরাহা না হইলে ভোগব্যয়ের পরিমাণ না বাড়াই প্রত্যাশিত। অর্থনীতির রথের চাকা সেই মাটিতে বসিয়া যাইবে।

অন্য বিষয়গুলি:

GDP Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy