ভারতে মূল্যবৃদ্ধির দুশ্চিন্তা অব্যাহত রইল। সম্প্রতি সরকারের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৬.০৭ শতাংশ, গত আট মাসে যা সবচেয়ে বেশি। অন্য দিকে, পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি দাঁড়ায় ১৩.১১ শতাংশে। চলতি অর্থবর্ষের সিংহভাগ জুড়েই এই হার রইল ১০ শতাংশের উপরে। খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার প্রভাবিত হয় মূলত খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে। যেমন, ভোজ্য তেলের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ১৬.৪৪ শতাংশ। মূলত তা হয়েছে ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে। ভারত ইউক্রেন থেকে সূর্যমুখী তেল আমদানি করে। যুদ্ধের ফলে তা ব্যাহত হয়েছে। খাদ্যপণ্যের বাজারে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। আনাজ, মাছ ও মাংস, ডিম, খাদ্যশস্য, চিনি— বহুবিধ পণ্য সাম্প্রতিক কালে মহার্ঘ হয়েছে। আর এর কারণেই খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৫.৮৫ শতাংশে। এমনিতেই করোনাভাইরাস-জনিত অতিমারির কারণে গত দুই বছরে সমগ্র বিশ্বেই উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছিল। বিধ্বস্ত হয়েছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিসরটিও। চাহিদা হ্রাসের ফলে বহু দেশের ক্ষেত্রেই রফতানির পরিমাণ কমেছিল। ভারতের অর্থনীতিও সেই প্রভাব থেকে বাদ যায়নি। তা ছাড়া, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম সেই সময় থেকেই বাড়তে থাকে। অবশেষে অতিমারির প্রকোপ কমার ফলে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল বাজার। কিন্তু তাতে বাদ সেধেছে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ।
রাশিয়া বহু দেশে অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানি করে। যুদ্ধের কারণে ইউরোপের বহু দেশ রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করেছে। তা ছাড়া আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সে দেশের উপরে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করায় রাশিয়ার সঙ্গে বহু দেশের বাণিজ্যও ব্যাহত হচ্ছে। এই সব দেশের উপরে পাল্টা চাপ দিতে তাই রাশিয়াও তেল ও গ্যাসের রফতানি বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে। এর কারণে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম যে বাড়বে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। এবং সেই আশঙ্কা থেকে ধীরে ধীরে বেড়েছে এর দাম। অপরিশোধিত তেলের দাম প্রবল হারে বৃদ্ধি পেয়ে ব্যারেলপ্রতি ১৩৯ ডলারে পৌঁছেছিল, যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। দিনকয়েক হল, বিভিন্ন কারণে অপরিশোধিত তেলের দাম অনেকখানি কমে ১০০ ডলার প্রতি ব্যারেলের কাছাকাছি দাঁড়িয়েছে। লক্ষণীয় যে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লেও ভারতে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বাড়েনি। কিন্তু, বৃদ্ধির প্রত্যাশাতেই মূল্যবৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রে কাঁচামালও মহার্ঘ হয়েছে। যেমন, বিশ্বে যে সমস্ত দেশ অ্যালুমিনিয়াম, তামা, নিকেল, দস্তা, ইস্পাত রফতানি করে, রাশিয়া তার অন্যতম। এই সব ধাতুর সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় নানা ক্ষেত্রের উৎপাদনের উপরে চাপ বেড়েছে। যেমন, অ্যালুমিনিয়াম, ইস্পাত, তামা ইত্যাদি গাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, ভোগ্যপণ্য তৈরিতে কাজে লাগে। এই সব ধাতুর দাম বাড়ায় উৎপাদকরা এই কাঁচামালের বর্ধিত দাম গ্রাহকের উপর চালান করছেন তাঁদের তৈরি জিনিসের দাম বাড়িয়ে। অন্য দিকে পেট্রোপণ্য এবং ভোজ্য তেল সাবান, প্রসাধনী এবং ডিটারজেন্ট তৈরির মুখ্য কাঁচামাল। বিশ্ববাজারে পেট্রোপণ্য এবং ভোজ্য তেলের দাম চড়া থাকায় দাম বেড়েছে এর থেকে তৈরি জিনিসপত্রেরও। ফলে টান পড়েছে ক্রেতার পকেটে। মূলত এই সব কারণেই পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার আরও বেশ কিছু দিন থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মূল্যবৃদ্ধির হার নামার বিষয়টি অনেকখানি নির্ভর করবে যুদ্ধ আর কত দিন চলবে তার উপরে। তা না হলে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় অর্থনীতিও যে গভীর বিপদের সম্মুখীন হবে, তাতে সন্দেহ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy