দোলের দিন ব্যবহৃত ক্ষতিকর রং, আবিরের পরিবর্তে প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্ট আবির ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার কথা বিশেষজ্ঞরা বহু বারই বলেছেন। সেই পথে হেঁটে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কিছু বছর আগেই ফুলের আবির তৈরির হদিস দিয়েছিল। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারও সেই বিষয়ে সরাসরি আগ্রহ দেখাল। বস্তুত, দোলের আগেই ঘরে ঘরে প্রাকৃতিক আবির পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ করতে দেখা গেল সরকারের কৃষি বিপণন দফতরের তরফে। জানানো হয়েছিল, জেলার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েদের হাতে তৈরি আবির মূলত সুফল বাংলার মঞ্চটিকে ব্যবহার করে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। এই উদ্যোগে সাড়াও মিলেছে যথেষ্ট। আশা করা যায়, ভবিষ্যতেও রাসায়নিক মিশ্রিত আবিরের পরিবর্তে দোল খেলার থালাটি আলো করে থাকবে বিট, কাঁচা হলুদ, পালং শাক, রক্তগোলাপ, অপরাজিতা থেকে তৈরি রং।
এই উদ্যোগ স্বাগত। কিন্তু, খোলা বাজারে যে আবির এবং রঙের বহুল ক্রয়-বিক্রয় দেখা যায়, তার গুণমান ঠিক থাকছে কি না, সেই বিষয়ে নজরদারির কাজটি যথাযথ হচ্ছে কি? বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার যে আবির এবং রঙের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বন্ধ করা যায়নি, সেটা তো কোনও নতুন তথ্য নয়। প্রতি বছরই দোলের সময় চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে বাজারে সহজলভ্য রং, আবিরের গুণমান নিয়ে সতর্কবাণী শোনা যায়। কিন্তু তাতে কান দেন ক’জন? দোলের রঙে অবাধে মেশানো হয় লেড অক্সাইড, কপার সালফেট-সহ নানাবিধ রাসায়নিক। এই জাতীয় পদার্থের কারণে শরীরে বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া চলে না। আবিরও পিছনে পড়ে নেই। অনেক সময়ই তাতে অভ্র এবং মিহি কাচের গুঁড়ো মেশানো থাকে। অথচ, ভেষজ রঙের ব্যবহার বাজারে নতুন নয়। কিন্তু ‘ভেষজ রং’ নামে যা বিক্রি করা হয়, তা আদৌ ভেষজ কি না, সেই বিষয়টি কে নিশ্চিত করবে? অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্ট আবির, রঙের দাম তুলনায় যথেষ্ট বেশি থাকে। এমতাবস্থায় সকলের পক্ষে তা ক্রয় করা সম্ভবপর হয় না। খাঁটি ভেষজ রং, আবির কোথায় পাওয়া যেতে পারে, সেই খোঁজও সাধারণ ক্রেতার কাছে থাকে না। এর সুযোগ নিয়েই ক্ষতিকর রং, আবির বাজার দখল করে। সুতরাং, যথাযথ নজরদারি এবং বিপণন ব্যবস্থাটিকে ঢেলে সাজানো— যুগপৎ না করলে ঘরে ঘরে ভেষজ আবির পৌঁছনোর উদ্যোগটি কবে সফল হবে, প্রশ্ন থেকে গেল।
বস্তুত বাজির ক্ষেত্রেও এই নজরদারির অভাবটি প্রকট। কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ বাজির ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করা যায়নি। এবং গত বছর আদালতের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র ‘পরিবেশবান্ধব’ বাজির যে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল, তা-ও যথাযথ ভাবে মানা হয়নি। সর্বোপরি, পরিবেশবান্ধব বাজি বস্তুটি কী, কোথায় পাওয়া যাবে, সেই বিষয়ে সরকার স্বয়ং ধোঁয়াশায় ছিল। ফলে, পরিবেশের প্রশ্নটি উপেক্ষিতই থেকে গিয়েছে। সেই সিঁদুরে মেঘই ফের ভয় ধরাচ্ছে। ক্ষতিকর রং, আবির তৈরির গোড়াটিতে লাগাম পরানো না হলে মূল সমস্যাটি থেকেই যাবে। ভেষজ আবির তৈরির পাশাপাশি সরকার আগামী বছরের জন্য এখন থেকেই সেই লাগাম পরানোর উদ্যোগ করুক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy