Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Mid Day Meal

খাবারে টান

কেন খাবারে টান, বুঝতে গেলে বাজারে খাদ্যবস্তুর দাম এবং মিড-ডে মিলে শিশুপ্রতি বরাদ্দের দিকে চোখ রাখতে হয়।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২২ ০৬:১১
Share: Save:

এক বেলা ভরপেট পুষ্টিকর খাবারের মূল্য দরিদ্র পরিবারের শিশুর কাছে কম নয়। এ কথা অনস্বীকার্য যে, ওই নিশ্চিত খাবারটুকুর টানই বহু পড়ুয়াকে নিয়মিত স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে। স্কুলগুলিতে সরকারি মিড-ডে মিল প্রকল্পের সূচনার পিছনে শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সেই উদ্দেশ্যটিও ছিল। কিন্তু প্রায়শই দেখা গিয়েছে, যে পুষ্টির কথা ভেবে মিড-ডে মিলের খাদ্যতালিকা রচিত হয়েছিল এবং বাস্তবে তাদের পাতে যা পড়ে— দুইয়ের মধ্যে দূরত্ব বিপুল। সম্প্রতি যেমন বাজার অগ্নিমূল্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের পাতে ডিম, ডালের দেখা মেলাই দুষ্কর হয়ে উঠেছে। নয়তো আপস করতে হচ্ছে খাবারের মানের সঙ্গে। সপ্তাহে দু’দিন ডিমের বদলে এক দিন করে জুটছে। যে দিন ভাত, ডালের সঙ্গে সয়াবিন থাকার কথা, সে দিন ডাল অনুপস্থিত থাকছে। অর্থাৎ, শিশুর পুষ্টির ভান্ডারটি অপূর্ণই থেকে যাচ্ছে।

কেন খাবারে টান, বুঝতে গেলে বাজারে খাদ্যবস্তুর দাম এবং মিড-ডে মিলে শিশুপ্রতি বরাদ্দের দিকে চোখ রাখতে হয়। বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া প্রতি দৈনিক বরাদ্দ চার টাকা সাতানব্বই পয়সা। এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া প্রতি দৈনিক বরাদ্দ সাত টাকা পঁয়তাল্লিশ পয়সা। অন্য দিকে, বাজারে একটা ডিমের দামই পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ টাকা। মিড-ডে মিলের চালটুকু পাওয়া যায় বিনামূল্যে। বাকি আনাজ, রান্নার তেল, মশলাপাতি, এমনকি রান্নার গ্যাসের দামও যে ভাবে বেড়েছে, তাতে কুলিয়ে ওঠা অসম্ভব। সুতরাং স্বাভাবিক বুদ্ধি বলে, বরাদ্দ বৃদ্ধি অবিলম্বে প্রয়োজন। বর্তমানে এই প্রকল্পে চাল বাবদ কেন্দ্রের বরাদ্দ ১০০ শতাংশ। রান্নার অন্যান্য সামগ্রী খাতে বরাদ্দের মধ্যে কেন্দ্রের ভাগ ৬০ শতাংশ, এবং রাজ্যের ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ, পড়ুয়াদের পুষ্টির দায়িত্ব প্রায় সমান ভাবেই দুই সরকারের উপর বর্তায়। অথচ, মিড-ডে মিলে বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রসঙ্গ উঠলেই পারস্পরিক দোষারোপের পর্ব শুরু হয়। উপেক্ষিত হয় শিশুকল্যাণের বিষয়টি। শিশুদের ভোট নেই, ভুললে চলবে না।

মনে রাখা দরকার যে, মিড-ডে মিলের সঙ্গে খাদ্যের অধিকারের প্রশ্নটি জড়িয়ে। আর শিশুর খাদ্যের অধিকার বলতে সে যাতে পর্যাপ্ত সুষম খাদ্য পায়, সেটা নিশ্চিত করা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। অথচ, এই কাজেই বিরাট ফাঁক থেকে যাচ্ছে। অতিমারিতে দীর্ঘ কাল প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির জন্য স্কুল বন্ধ থাকায় এই রাজ্যে শিক্ষার পাশাপাশি পুষ্টির ক্ষেত্রেও লক্ষণীয় ঘাটতি থেকে গিয়েছে। লকডাউন চলাকালীন শুকনো খাবার হিসাবে তাদের হাতে যা তুলে দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনের তুলনায় তা অনেক কম। স্কুল খোলার পর দেখা গিয়েছে মিড-ডে মিলের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক পরিবারের আয় হ্রাস পাওয়ায় স্কুলে প্রদেয় খাবারের উপর নির্ভরতা বেড়েছে। এমতাবস্থায় স্কুলগুলি এই বাড়তি চাহিদা সামাল দেবে কী উপায়ে? অনেক সময় স্কুলের পুষ্টি-বাগান বা শিক্ষকদের নিজস্ব ফান্ড থেকে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করা হলেও, এই সকল প্রশংসনীয় উদ্যোগ সরকারের দায়িত্বের বিকল্প হতে পারে না। সরকারকে বাজারমূল্য অনুসারেই পড়ুয়াদের বরাদ্দ স্থির করতে হবে। প্রয়োজনে স্কুলগুলির হাতে অগ্রিম অর্থ প্রদান করতে হবে। বিষয় যখন শিশুস্বাস্থ্য, তখন কোনও মূল্যেই তার সঙ্গে আপস চলতে পারে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Mid Day Meal poor students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE