ফাইল চিত্র।
রাজ্যে করোনা-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ চলিতেছে। অন্তত সরকারি নির্দেশিকা বলিতেছে, তাহার মেয়াদকাল এই মাসের শেষাবধি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গবাসীকে দেখিয়া বুঝিবার উপায় নাই। যে মুহূর্তে রেস্তরাঁ, শপিং মল খুলিল, তাঁহারা যেন ধরিয়াই লইলেন যে অতিমারি শেষ— অতএব নির্দ্বিধায় আড্ডা চলিতে পারে, অপ্রয়োজনে বেড়ানো যাইতে পারে, দল বাঁধিয়া বিক্ষোভ দেখানো যাইতে পারে, এবং মাস্ক পরিবারও বিশেষ প্রয়োজন নাই। তাঁহারা সম্পূর্ণ ভুলিলেন, গত মাসেই প্রতি দিন শতাধিক সহ-নাগরিক প্রাণ হারাইয়াছেন এই অতিমারির কারণেই। আগামী জুলাই মাস হইতে বিধিনিষেধ সম্পূর্ণ উঠিয়া যাইবে, না কি সীমিত ভাবে তাহা বলবৎ থাকিবে, এখনও জানা যায় নাই। কিন্তু বিধিনিষেধ চলিবার কালেই যে বিপুল ঔদ্ধত্যে নিয়ম ভাঙিবার প্রবণতা পরিলক্ষিত হইল, তাহা শুভ সঙ্কেত নহে। প্রশাসন রাস্তায় নামিয়া লাঠিপেটা করিবে, তবে মানুষ নিয়ম মানিবেন— ইহা কোনও সভ্য দেশের চিত্র হইতে পারে না। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের সম্মুখে দাঁড়াইয়া এই বেপরোয়া মনোভাব রীতিমতো আশঙ্কা জাগাইতেছে।
প্রশ্ন উঠিতে পারে, উঠিতেছেও, জীবিকার কী হইবে? গণপরিবহণ এখনও বন্ধ। এমতাবস্থায় সরকারি, বেসরকারি অফিসগুলিকে সীমিতসংখ্যক কর্মী লইয়া কাজ করিবার অনুমতি দিবার কারণে চাকুরিজীবী মানুষ চরম অসুবিধার সম্মুখীন। অবিলম্বে গণপরিবহণ চালু করিবার দাবি উঠিতেছে বিভিন্ন ক্ষেত্র হইতে। অনস্বীকার্য, দ্রুত স্বাভাবিকতা না ফিরিলে জীবিকাসঙ্কটে পড়িবেন অসংখ্য মানুষ। কিন্তু ইহাও সত্য যে, এই মুহূর্তে গণপরিবহণ চালু করিলে সংক্রমণে রাশ টানা কঠিনতর হইবে। সুতরাং, দৈনিক সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসিবার পরেও যে কেন রাজ্য সরকার গণপরিবহণ চালু করে নাই, সেই কারণটি বোঝা যায়। এই প্রসঙ্গে যে তত্ত্বটি খাড়া করা হইতেছে— গণপরিবহণ সম্পূর্ণ চালু হইলেই ভিড় নিয়ন্ত্রিত হইবে, তাহা বাস্তবোচিত নহে। গত বৎসর লকডাউন-শেষে গণপরিবহণ চালু করিবার কিছু দিন পরেই পরিচিত ভিড় ফিরিয়া আসিয়াছিল, এবং বহু নাগরিক নিয়মবিধির তোয়াক্কা করেন নাই।
জীবন এবং জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার কাজটি প্রশাসনের নিকটও সহজ নহে। আজ না হউক পরশু স্বাভাবিকতায় প্রত্যাবর্তন করিতে হইবে, গণপরিবহণও খুলিয়া দিতে হইবে— অনন্ত কাল এই অচলাবস্থা চলিতে পারে না। তখন যাহাতে সংক্রমণ হার না বাড়ে, তাহার জন্য কিছু বিশেষ ভাবনা প্রয়োজন। তাহার জন্য সীমিত সংখ্যক যাত্রী লইয়া গণপরিবহণ চালু করিবার কথা ভাবা যাইতে পারে। বিধিনিষেধ তুলিবার পূর্বেই সেই সংক্রান্ত নির্দেশাবলি প্রস্তুত করিতে হইবে। এবং সংক্রমণ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে না-আসা পর্যন্ত সেই নির্দেশ যাহাতে কঠোর ভাবে পালন করা হয়, তাহার জন্য নজরদারি চালাইতে হইবে। কিন্তু তাহার পরেও নাগরিকের দায়িত্বের প্রশ্নটি থাকিয়াই যায়। নাগরিক যদি সচেতন না হয়, তবে প্রশাসনের শত চেষ্টাতেও বিপদ প্রতিহত করা যায় না। একাংশ নাগরিকের চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে বারংবার লকডাউনের ন্যায় বিধিনিষেধ ফিরিয়া আসিলে তাহার পরিণতি মর্মান্তিক হইবে। জীবন থাকিলে, জীবিকা বাঁচিলে আমোদ-আহ্লাদের সুযোগ ফের মিলিবে, এই কথাটি স্মরণ রাখা জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy