Advertisement
০৯ অক্টোবর ২০২৪
Tv Serials

পর্বান্তর

প্রশ্ন হল, দশক দুয়েক আগে মেগা সিরিয়ালের চাহিদা বেড়েছিল কেন, এখন কমছেই বা কেন? নিতান্ত জনরুচির পরিবর্তন? যদি তা-ই হয়, তবে সেই পরিবর্তনের পিছনে প্রমাণযোগ্য কোনও কারণ কি দৃশ্যমান?

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:১০
Share: Save:

বছর কয়েক আগেও টেলিভিশনের বেশ কিছু সান্ধ্য সিরিয়াল চলত এক বছরের অনেক বেশি সময় ধরে। বাংলায়, হিন্দিতে, অন্য ভারতীয় ভাষাতেও। সাম্প্রতিক কালে ছবিটি পাল্টে গিয়েছে। বঙ্গীয় বিনোদন শিল্পমহলের মতে, এখন কোনও সিরিয়াল এক বছর চললে সেই সাফল্য রীতিমতো ব্যতিক্রমী। সর্বভারতীয় পরিপ্রেক্ষিতেও ছবিটি একই রকম— এমনকি ছ’মাসের মধ্যেও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মেগা সিরিয়াল। কারণ, নিম্নমুখী টিআরপি। বাজার তার স্বধর্মে পরিচালিত— যে পণ্যের চাহিদা নেই, তার জোগানও কমে। প্রশ্ন হল, দশক দুয়েক আগে মেগা সিরিয়ালের চাহিদা বেড়েছিল কেন, এখন কমছেই বা কেন? নিতান্ত জনরুচির পরিবর্তন? যদি তা-ই হয়, তবে সেই পরিবর্তনের পিছনে প্রমাণযোগ্য কোনও কারণ কি দৃশ্যমান?

এই প্রশ্নের উত্তরে প্রথম যে যুক্তিটি শোনা যায়, তার নাম ওটিটি। সস্তা ইন্টারনেটের দৌলতে যে কোনও বিনোদন এখন দিনের যে কোনও সময় হাতের মোবাইল ফোনটিতেই পাওয়া সম্ভব— তার জন্য প্রতি দিন নির্দিষ্ট সময়ে টেলিভিশন চালানোর প্রয়োজন নেই। কথাটি হয়তো সত্যি, কিন্তু শুধু এই যুক্তিতেই মেগা সিরিয়ালের চাহিদা হ্রাসের ঘটনাকে সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা করা মুশকিল। তার প্রাথমিক কারণ হল, ওটিটি এখন সস্তা হলেও কেব্‌ল টিভির সংযোগের চেয়ে অনেক বেশি খরচসাপেক্ষ। দ্বিতীয়ত, অভিজ্ঞ জনেরা বলবেন যে, ওটিটি এবং টেলিভিশন সিরিয়ালের দর্শককুল পৃথক। ফলে, চায়ের চাহিদা বেড়েছে বলে কমলালেবুর চাহিদা কমেছে, এই কথাটি যত দূর যুক্তিসঙ্গত, টেলিভিশন ও ওটিটির ব্যাখ্যা সম্ভবত তার বেশি নয়। বরং, কেউ ‘রিল’-এর কথা তুলতে পারেন। নিখরচায় এক মিনিটের বিনোদনে মানুষের মন মজলে প্রতি দিনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বাইশ মিনিটের সিরিয়াল দেখার ধৈর্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে কি না, ভেবে দেখা যায়। মনঃসংযোগের উপরে এই রিলগুলি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তার প্রমাণ ইতিমধ্যেই মিলছে।

জনরুচি বস্তুটি অপরিবর্তনীয়, নিশ্চল নয়— আবার তা বহুলাংশে স্বতশ্চালিতও নয়। জনরুচি নির্মিত হয়েই থাকে। সেই নির্মাণের পিছনে যার অনস্বীকার্য ভূমিকা আছে, অর্থশাস্ত্রের পরিভাষায় তার নাম ব্যান্ডওয়াগন এফেক্ট। আর পাঁচ জন যেটা করছে, আমিও সেটাই করব, এই হল ব্যান্ডওয়াগন এফেক্টের মূল কথা। মেগা সিরিয়াল যখন তৈরি হতে শুরু হল, তার পিছনে বিশ্ব বাজারের সঙ্কেত ছিল— আমেরিকান বাজারে সোপ অপেরার সাফল্য ভারতের মেগা সিরিয়ালগুলির প্রেরণা হিসাবে কাজ করেছিল। যে-হেতু সবাই মেগা সিরিয়াল বানাতে আরম্ভ করলেন, ফলে সবাই মেগা সিরিয়াল বানাতে আরম্ভ করলেন— এ যদি জোগানের দিকের ব্যান্ডওয়াগন এফেক্ট হয়, চাহিদার দিকেও তা একই রকম ছিল: সবাই যে-হেতু মেগা সিরিয়াল দেখছিলেন, ফলে সবাই মেগা সিরিয়াল দেখছিলেন। এই ভারসাম্য রাতারাতি পাল্টে যাওয়া কঠিন, কিন্তু কোনও বিশেষ কারণে এক বার প্রবণতায় পরিবর্তন ঘটলে তার পর চলতে থাকে সেই ব্যান্ডওয়াগন এফেক্টের খেলা। তখন পরিবর্তনের কারণেই রুচির পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এ ক্ষেত্রেও কোনও একটি-দু’টি মেগা সিরিয়ালের টিআরপি হ্রাসের ফলে মেগা বানানোয় অনীহা, এবং দেখায় অনীহা তৈরি হয়েছে কি না, সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যেতে পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Tv Serials Bengali Serials TV Show OTT Platforms
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE