Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Manipur

বিপুল ব্যর্থতা

মোদী সরকারের ন’বছরের রাজত্বকালে চূড়ান্ত অপশাসনের দৃষ্টান্ত হিসাবে কাশ্মীরের পরই জায়গা করে নিয়েছে মণিপুর।

manipur.

মণিপুরের মানুষের প্রাণরক্ষাই এখন প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৩ ০৪:৪১
Share: Save:

ডাবল ইঞ্জিন সরকার নামক ধারণাটির গৌরব যে ভাবে নরেন্দ্র মোদী সরকারের শাসনকালে নন্দিত ও বন্দিত হয়েছে, দুই ইঞ্জিন থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে রেলগাড়ি ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে পারে, তা নিয়ে তার ভগ্নাংশমাত্রও আলোচনা ইতিমধ্যে শোনা যায়নি। অথচ মণিপুরে যা চলছে, সেই দিকে তাকিয়ে এই কথাটিই সর্বাগ্রে মনে হতে পারে। গত কিছু কাল ধরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহ যে বিপুল ভাবে ব্যর্থ, সেই একই মাত্রার ব্যর্থতা দেশের কেন্দ্রীয় সরকারেরও। বেলাইনে ছুটে চলা রাজ্য ইঞ্জিনকে কেন্দ্রীয় ইঞ্জিন কোনও ভাবেই লাইনে ফিরিয়ে আনতে পারেনি, পরিস্থিতির রাশ সম্পূর্ণ হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। দুই বিবদমান জনসমাজের ভয়ঙ্কর আক্রমণ প্রতি-আক্রমণের চেহারা ক্রমশ এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, পঁচাত্তর বছরে উপনীত স্বাধীন ভারতের ‘অমৃত মহোৎসব’কে মণিপুর রাজ্য এখন একাই ম্লান করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। দেশের কঠিন পরিস্থিতিতে স্বভাবত ‘নীরব’ প্রধানমন্ত্রী মোদী এ বারও তাঁর নীরবতা অক্ষুণ্ণ রেখেছেন, এবং তাঁর অন্যান্য কার্যক্রমে সহাস্যে সগৌরবে ব্যাপৃত আছেন। এখনও তিনি মণিপুরে আসার সময় পাননি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অবশ্য জুনের শেষ সপ্তাহে মণিপুরে এসেছিলেন, এবং রায় দিয়ে গিয়েছিলেন যে, সঙ্কট নাকি ‘শেষ’-এর পথে। পরবর্তী অশান্তি নাকি কেবল বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীর সফর-প্রণোদিত ক্ষোভ-বিক্ষোভ মাত্র— আর কিছু নয়। মণিপুরের বাস্তব তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন প্রমাণ করেছে, এবং বুঝিয়ে দিয়েছে যে এই স্বার্থগন্ধময় সঙ্কীর্ণ রাজনীতির বাইরে এখনও কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে মেইতেই বনাম অন্যান্য জনজাতি লড়াইয়ের কোনও সমাধানসূত্র নেই, ভবিষ্যতে সে সূত্র মিলবে এমন আশ্বাসও পাওয়া যায়নি। এ দিকে সংঘর্ষের মূল হেতুটি সংরক্ষণ নীতি-সংক্রান্ত হওয়ায় কেন্দ্রের ভূমিকাই এখানে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কথা ছিল। কুকি নেতারা দিল্লিতে গিয়েও দরবার করেছেন, কিন্তু সমাধানের পথ তাঁদের বলা হয়নি। বাস্তবিক, মোদী সরকারের ন’বছরের রাজত্বকালে চূড়ান্ত অপশাসনের দৃষ্টান্ত হিসাবে কাশ্মীরের পরই জায়গা করে নিয়েছে মণিপুর।

মেইতেই গোষ্ঠী তফসিলি জনজাতি হিসাবে গণ্য হতে চাওয়া থেকেই এই সংঘর্ষের শুরু। সংরক্ষণ সম্পর্কিত এই জটিল সমস্যার মীমাংসা সহজসাধ্য নয়। তবে এ কথা যেমন সত্য, তেমনই সত্য— রাজনীতিতে মীমাংসার থেকেও বড় মীমাংসার প্রচেষ্টাটি। মানবিকতার ছোঁয়া পৌঁছে দেওয়ার মধ্যেও সেই প্রচেষ্টা থাকতে পারত। দাঙ্গাকম্পিত নোয়াখালির পথে পথে হেঁটে সে দিনের সঙ্কটের মীমাংসা আনা যাবে, এ কথা মহাত্মা গান্ধী ভাবেননি। বরং ভেবেছিলেন, হতাহত-সন্ত্রস্ত সমাজের কাছে মানবিকতার ছোঁয়া পৌঁছে দেওয়াটাই নেতৃত্বের দায়িত্ব রক্ষার প্রথম ধাপ। সম্প্রতি রাহুল গান্ধীর সফরে মানবিকতার সেই ছোঁয়া দেখা গেল। স্বীকার করতেই হয়, মানুষের সঙ্গে সংযোগ রাখা যে রাজনীতির একটি অত্যন্ত জরুরি প্রকরণ, এই ভারতের জাতীয় নেতাদের মধ্যে একমাত্র তিনিই তা সাম্প্রতিক কালে দেখিয়ে চলেছেন।

পরিস্থিতি আরও সঙ্কটময় হয়ে উঠছে অসমের কারণে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা সপ্তাহখানেক আগে ‘দশ দিনের মধ্যে’ সংঘর্ষ থেমে যাবে বলার পর পরই জনজাতি আক্রমণের মুখ যেন আরও বেশি করে ঘুরে গিয়েছে ইন্ডিয়ান রিজ়ার্ভ ব্যাটালিয়ন ও অসম রাইফেলস-এর দিকে। অসমের জওয়ান নিহত হয়েছেন আক্রমণকারীদের হাতে। জনজাতির সংখ্যা ও চরিত্রের দিক দিয়ে অসমের বাস্তবও অনেকাংশে প্রভাবিত হতে পারে মণিপুরের ঘটনায়, এই আশঙ্কা সত্যি হলেও অসমের মুখ্যমন্ত্রী আপাতত মণিপুরে ‘নাক না গলালেই ভাল হয়’, প্রাক্তন মন্ত্রী ও কংগ্রেসি নেতা চিদম্বরমের এই সতর্কবাণীটি মনে রাখা জরুরি। জল আরও ঘোলা না করে সর্বশক্তিতে সংঘর্ষ থামানো দরকার। মণিপুরের মানুষের প্রাণরক্ষাই এখন প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Manipur PM Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy