বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ফাইল চিত্র।
ছয় বছর আগের নিয়মাবলিতে পরিবর্তন আনল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের পিএইচ ডি স্তরে গবেষণার ক্ষেত্রে। জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারে চার বছরের স্নাতক পাঠ্যক্রম ঘোষিত ও অনুমোদিত হয়েছিল আগেই, এ বার বলা হল, এই চার বছর পড়াশোনা শেষেই শিক্ষার্থী পিএইচ ডি-তে যোগ দিতে পারবেন, যদি তাঁর ৭৫ শতাংশ নম্বর বা সমতুল্য গ্রেড থাকে। যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে স্নাতক পাঠ্যক্রম তিন বছরের, সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের এক বছর স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ে এবং ৫৫ শতাংশ নম্বর বা গ্রেড পেয়ে আসতে হবে। আরও বড় কথা, ইউজিসি-র তালিকাভুক্ত জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ করা এবং গবেষণাকালীন নির্দিষ্ট সংখ্যক সেমিনারে সক্রিয় অংশগ্রহণ এত দিন ছিল আবশ্যক, এ বার থেকে তা আর প্রয়োজনই হবে না! এই পরিবর্তনগুলি আর ‘প্রস্তাবিত’ নয়, ঘোষণামাত্র কার্যকর।
নতুন নিয়মে উচ্চশিক্ষা মহলে হইচই পড়েছে, তা-ই স্বাভাবিক। ইউজিসি-র মতে আরও বেশি শিক্ষার্থীকে গবেষণায় উৎসাহিত করতেই এই পদক্ষেপ; গবেষণার পথ দুস্তর ছিল, সহজ হল। সত্যিই কি তা-ই? চার বছরের স্নাতক পাঠ্যক্রম অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই এখনও চালু হয়নি। যদি তা হয়ও, স্নাতক-অন্তে এক জন শিক্ষার্থীর অধীত বিদ্যা কি গবেষণা-শুরুর ভিত্তি তথা উপযুক্ত বলে বিবেচিত হতে পারে? স্নাতক স্তরে বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় ঘটে মাত্র, তার বিশেষ দিক-আঙ্গিক বা ‘স্পেশালাইজ়েশন’-এর অভিজ্ঞতা ঘটে স্নাতকোত্তর পর্বে, তারও পরে আসে গবেষণার প্রশ্ন। এত দিন স্নাতকোত্তর ও পিএইচ ডি-র সেতুবন্ধ হিসাবে ‘এম ফিল’ পর্বটি ছিল, ইউজিসি নতুন নির্দেশিকায় সেটিকেও পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলেছে। স্নাতকের পরেই গবেষণা শুরুর সুযোগ বাইরে থেকে দেখলে আকর্ষণীয়, কিন্তু গবেষণার জন্য প্রয়োজন যে গভীর ভাবনা ও মানসিকতা, স্নাতকের পরেই তা শিক্ষার্থীদের আয়ত্ত হয়ে গিয়েছে, ধরে নেওয়া কি সঙ্গত? গবেষণাক্ষেত্র সকল শিক্ষার্থীর জন্য নয়, সকলের তা দরকারও নেই— অতি উত্তেজনা ও তাড়াহুড়ো না করে বরং ধীর-স্থির পথে এগোনোই উচিত ছিল। গবেষকদের ‘েরফার্ড’ বা নির্দিষ্ট তালিকাভুক্ত জার্নালে গবেষণাপত্রের মান নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠছে আঝকাল, সম্ভবত সেই সঙ্কটের অভিঘাতেই এমন সিদ্ধান্ত গৃহীত হল। কিন্তু গবেষণার মানরক্ষার উদ্বেগে গবেষণাকেই বাদ দেওয়ার এই সুচিন্তিত বন্দোবস্ত কি ঠিক নীতি দাঁড়াল? স্নানের জলের সঙ্গে শিশুকেও বিসর্জন?
উচ্চশিক্ষা আসলে জ্ঞানচর্চার পরিসরে নিরন্তর ‘এক্সেলেন্স’ বা শ্রেষ্ঠত্বের খোঁজ। গবেষণাও তা-ই। আর সেই কারণেই প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার ক্ষেত্রে যোগ্যতা, পরীক্ষা ও অন্যান্য মাপকাঠি নির্ধারিত হওয়া দরকার অতি উচ্চে। তার বদলে শিক্ষার্থীদের গবেষণায় আসার পথ সহজ করে দেওয়ার নামে এই সব কিছুকেই অতিসরল করে দিলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা, তখন গবেষণার বিষয় ও মান দুই-ই হয়ে উঠবে হাস্যকর। কয়েক বছর আগে আইআইটি দিল্লির কাছে গোমূত্রের অযুত গুণাবলি নিয়ে ৫০টি গবেষণাপ্রস্তাব এসেছিল, ইউজিসি-র এখনকার পদক্ষেপে অবস্থা কী দাঁড়ায় সেটাই দেখার। ইউজিসি-র বোঝা দরকার, গবেষণার ক্ষেত্রটি জলবৎ তরল করলে বেনো জল আটকানো অসম্ভব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy