কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা, ২ অক্টোবর, দিল্লি। ছবি: পিটিআই।
রাজধানীতে দুই দিনের প্রতিবাদ-ধর্না আন্দোলনের পরিকল্পনা করার সময় পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সাংসদরা হয়তো আন্দাজ করতে পারেননি, তাঁদের পরিকল্পনার ফলাফল কতখানি বড় হতে চলেছে। শেষ অবধি যখন বলপূর্বক তাঁদের গ্রেফতারের সংবাদ শোনা গেল, বোঝা গেল সর্বভারতীয় স্তরে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হিসাবে তৃণমূল নেতৃবর্গের নম্বর খানিক বাড়ল। কৃষি ভবনের সামনে থেকে রাজধানীর পুলিশ টানাহেঁচড়া করে মহুয়া মৈত্র, ডেরেক ও’ব্রায়েন প্রমুখ প্রথম সারির নেতা-সহ ত্রিশ জনকে গাড়িতে তুলল। একে তো সরকার পক্ষ থেকে তাঁদের বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, নিয়মমাফিক এগোনোর পরও মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁদের দাবি জানানোর সুযোগ দেওয়া হয়নি। তদুপরি তাঁরা শান্তিপূর্ণ ধর্নায় বসার পর তাঁদের এ ভাবে বলপূর্বক সরানো হল। বিরোধী নেতাদের গৌরব এমন ঘটনায় বাড়ে বই কমে না। যদিও বর্তমান ভারতে বিরোধী রাজনীতির এই সব ছবি প্রচারমাধ্যমে বিশেষ ‘প্রচারিত’ হওয়ার চল নেই, বিরোধিতার সংবাদও কিছু খর্বিত ও খণ্ডিত ভাবেই দেখা ও শোনা হয়— তার মধ্যেও যেটুকু কথা ও ছবি দেশের নানা কোণে তৈরি হয়ে উঠল, বিরোধী রাজনীতির পটভূমিতে তার গুরুত্ব কম নয়। ‘ইন্ডিয়া’ জোটেরও এতে সুবিধা হওয়ারই কথা, তবে কিনা জোটের রসায়ন ও পদার্থতত্ত্ব এতই ঘোলাটে যে, শেষ পর্যন্ত যমুনা-গঙ্গা-শোন থেকে গোদাবরী-কাবেরী, কার জল কোথায় দাঁড়ায়, বলা কঠিন।
ধরপাকড়ের ছবিটি অবশ্য ভারতের মতো দেশে অপরিচিত নয়। কেন্দ্রে, রাজ্যে যুগে-যুগে বিরোধিতা দমনের এ-হেন অপচেষ্টা দেখে ভারতীয় সমাজ অভ্যস্ত। সুতরাং ঘটনাটি যতই অবাঞ্ছনীয় হোক, বিরোধী নেতারাও নিশ্চয়ই এমন কোনও সম্ভাবনার জন্য মনে মনে প্রস্তুত ছিলেন! তাই গ্রেফতারে নয়, এই ঘটনার প্রকৃত গুরুত্ব অন্যত্র। তৃণমূল নেতারা প্রতিরোধ তৈরি করছিলেন কেন্দ্রের কাছ থেকে রাজ্যের পাওনা আদায়ের দাবিতে। পশ্চিমবঙ্গে মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ কর্মসংস্থান যোজনা, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা ইত্যাদি প্রকল্পের প্রাপ্য বিরাট পরিমাণ টাকা আটকে আছে বলে রাজ্য সরকারের অভিযোগ: বারংবার অনুরোধ এবং দাবি জানানো সত্ত্বেও কেন্দ্র থেকে টাকা আসেনি। এবং আগামী ভোটের আগে আসার সম্ভাবনাও নেই। রাজ্যের যে ধরনের প্রকল্প কেন্দ্রের প্রেরিত অর্থের উপর নির্ভরশীল, তা আটকে দেওয়ার পিছনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করার হিসাব সাধারণ বুদ্ধিতেই সুবোধ্য। বিষয়টিকে সামনে আনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রীয়তার প্রশ্নটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের প্রয়াস আছে। যে-হেতু বিরোধী জোটের কান্ডারিরা অনেকেই আঞ্চলিক দলের প্রতিভূ, তাঁদের কাছে এই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের আলাদা গুরুত্ব থাকার কথা। বাস্তবিক, মোদী সরকারের শাসনে শিক্ষা, কৃষি, গ্রামীণ কর্মসংস্থান ইত্যাকার বিষয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতা নিয়মিত ভাবে ধ্বস্ত হয়েছে। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের মানসিকতার রাজনৈতিক সুযোগ নিতে তৃণমূল সরকারও ছাড়েনি। আর এই দ্বৈরথের মাঝে পড়ে প্রবল ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ।
এইখানেই আসল প্রশ্ন। এখনকার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অত্যধিক মাত্রায় প্রদর্শন-নির্ভর, ‘অপটিকস’-বিলাসী। এক দিকে অবরোধ ধর্না প্রতিরোধ, অন্য দিকে আক্রমণ দমন, সব দিয়েই রাজনীতি-নাট্য। কেন্দ্রের গ্রামীণ উন্নয়ন ও পঞ্চায়েত মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ হিসাব দিয়ে দেখাতে চাইছেন, ইউপিএ সরকারের আমলের তুলনায় কত পরিমাণ বেশি টাকা ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গে দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল নেতাদের হিসাব আলাদা, যদিও রাজ্যের বণ্টন-কার্যক্রমও সন্তোষজনক নয়। দাবি-প্রতিদাবির মধ্যে যে কথাটি ধারাবাহিক ভাবে চাপা পড়ে যায় তা হল, রাজনৈতিক চাপানউতোরে গ্রামীণ যোজনা স্থগিত বা বাধাপ্রাপ্ত হলে জনসাধারণের বিরাট ক্ষতি। অবশ্য তা নিয়ে কারই বা মাথাব্যথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy