Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Income Of The Farmers

নীতির আগে তথ্য

কৃষক আন্দোলন দমন করলেই হবে না, সরকারকে তার কৃষি উন্নয়ন নীতি স্পষ্ট করতে হবে। তথ্যের অভাব থাকলে নীতি তৈরি অসম্ভব।

farmers

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৪ ০৮:১৭
Share: Save:

ভারতে চাষির আয় এখন কত, তা বোঝার কোনও উপায় নেই। কারণ, তার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য নেই বিশেষজ্ঞদের হাতে। সম্প্রতি নীতি আয়োগের এক সদস্যই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, কৃষক পরিবারের আয় কত, তা গণনা করতে হলে জানা দরকার, কৃষির বাইরে অন্যান্য উৎস থেকে তাঁদের আয়ের পরিমাণ কত। কিন্তু ২০১৮-১৯ সালের পর থেকে সে তথ্য আর পাওয়া যায়নি। কৃষি অর্থনীতিবিদ রমেশ চাঁদের এই স্বীকারোক্তির পরে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য— এত জরুরি তথ্য কেন সংগ্রহ করা হয়নি? ২০২২ সালের মধ্যে ভারতে চাষির আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার পর থেকে কৃষকদের সহায়তায় বিপুল অর্থ প্রতি বছর খরচ হচ্ছে রাজকোষ থেকে। ভারতে আন্দোলনরত কৃষকদের দাবি, তা সত্ত্বেও কৃষি লাভজনক নয়, তাই সরকারকেই ন্যায্য দামে ফসল কিনতে হবে— এই দাবি কতটা যথার্থ, তা বুঝতে হলে দরকার কৃষক পরিবারগুলির আয়ের ধারণা। অথচ, সরকার তা দিতে অক্ষম। এ বিষয়ে সাংসদদের নানা প্রশ্নের উত্তরে কৃষিমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা এ বছর লোকসভায় জানিয়েছেন যে, কৃষি গৃহস্থালিগুলিতে একটি জাতীয় সমীক্ষা (সিচুয়েশন অ্যাসেসমেন্ট সার্ভে) থেকে জানা গিয়েছে, গড় মাসিক আয় ২০১২-১৩ সালের ৬৪২৬ টাকা থেকে ২০১৮-১৯ সালের ১০,২১৮ টাকা হয়েছে, যা প্রায় ষাট শতাংশ বৃদ্ধি।

এমন উত্তরে অবশ্য স্বচ্ছতার থেকে ধোঁয়াশাই তৈরি হয় বেশি। যেমন, মূল্যবৃদ্ধির হারের নিরিখে এই বৃদ্ধির হিসাব কষা হয়েছে কি না, ভারতের নানা রাজ্যে বৃদ্ধির এই হারে কতটা হেরফের রয়েছে, বড় চাষি ও ছোট চাষির আয়বৃদ্ধিতে কতটা অসাম্য রয়ে গিয়েছে, এবং সর্বোপরি, এই বর্ধিত আয়ে কৃষিকাজের অংশ কত, তা বোঝা প্রায় অসম্ভব। রমেশ চাঁদ যে প্রশ্নটি তুলেছেন, অর্থাৎ কৃষি-বহির্ভূত কাজে চাষি পরিবারের আয় বৃদ্ধির পরিমাণ, তা নিয়েও বিশদে বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে। নানা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বড় চাষিরা নানা ব্যবসা ও উদ্যোগ থেকে আয় করেন, যেখানে ছোট চাষিরা প্রধানত মজুরির উপরে নির্ভরশীল। ফলে গ্রামীণ বাজারে মজুরি বৃদ্ধি না হলে তাঁদের আয় বাড়বে না। পাশাপাশি, ছোট চাষিদের জন্য ফসলের যথাযথ দামও নিশ্চিত করতে হবে। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরে একটি আন্তঃমন্ত্রক কমিটি তৈরি করে কেন্দ্র। ২০১৮ সালে তার রিপোর্টে ওই কমিটি চাষির আয় বাড়ানোর সাত ধরনের উপায় সুপারিশ করে। এর মধ্যে রয়েছে উৎপাদনের হারে বৃদ্ধি, প্রাণিসম্পদের উৎপাদনে বৃদ্ধি, সার-জল প্রভৃতির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে চাষের খরচ কমানো, একই জমিতে সম্বৎসর নানা ফসল উৎপাদন, অধিক মূল্যের ফসলের চাষ, ফসলের যথাযথ দাম নিশ্চিত করা, এবং কৃষি-নির্ভরতা কমিয়ে শ্রমসম্পদকে অকৃষি কাজে নিয়ে আসা।

প্রতিটি পরামর্শই মূল্যবান, কিন্তু রাষ্ট্র সেগুলি কার্যকর করার জন্য কী করছে? তার উত্তর কেন্দ্র দেয় বাজেট বরাদ্দ দিয়ে। কৃষি ও সংশ্লিষ্ট নানা মন্ত্রকে (প্রাণিপালন ও ডেয়ারি, মৎস্য প্রভৃতি) বরাদ্দ এবং কৃষকের সহায়তার নানা প্রকল্পে বরাদ্দ বেড়েছে। কিন্তু তার কতটুকু চাষির কাজে আসছে? সংসদে প্রদত্ত তথ্য— ২০১৯-২০ থেকে ২০২২-২৩ সালের মধ্যে কৃষি মন্ত্রকের বরাদ্দের প্রায় আটাশ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়নি। এ ছাড়া দেশবাসীর মিলেছে এমন কিছু সরকারি প্রতিবেদন, যার অর্থ উদ্ধার করা দুষ্কর। যেমন, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচারাল রিসার্চ পঁচাত্তর হাজার চাষির তথ্য প্রকাশ করেছে, যাঁদের আয় দ্বিগুণ হয়েছে। ভারতের প্রায় তেরো কোটি চাষির পরিস্থিতির কতটুকু বোঝা যাবে এই প্রতিবেদন থেকে? কৃষক আন্দোলন দমন করলেই হবে না, সরকারকে তার কৃষি উন্নয়ন নীতি স্পষ্ট করতে হবে। তথ্যের অভাব থাকলে নীতি তৈরি অসম্ভব। কতকগুলি সদিচ্ছার ঘোষণাকে ‘নীতি’ বলা চলে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Farmers Central Government India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy