২০১৮-২০২০ সালে পশ্চিমবঙ্গে শিশুকন্যার অনুপাত ৯৪১, শহর এলাকায় ৯২০। প্রতীকী ছবি।
পশ্চিমবঙ্গে শিশুকন্যার অনুপাত কমছে, এই তথ্য উদ্বেগজনক। সারা দেশে যেখানে শিশুকন্যার জন্মকালীন অনুপাত ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২০ সালে বেড়েছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে তা কমেছে। যদিও জাতীয় গড়ের (প্রতি হাজার শিশুপুত্রে ৯০৭ কন্যা) তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের গড় (প্রতি হাজার শিশুপুত্রে ৯৩৬) অনেক উন্নত, তবুও প্রশ্ন করতেই হয়, ২০১৮ সালের গড় (প্রতি হাজারে ৯৪৪ শিশুকন্যা) থেকেও কেন কমল পশ্চিমবঙ্গের মেয়েদের অনুপাত? মনে রাখা দরকার, পুত্র বা কন্যার চাহিদা, এবং জনসংখ্যায় তার প্রতিফলন, একটি বহুমাত্রিক ও দীর্ঘমেয়াদি বিষয়। চটজলদি বিশ্লেষণ বা সমাধান করা সম্ভব নয়। সরকার সাধারণত বিষয়টিকে আইনশৃঙ্খলার সমস্যায় পর্যবসিত করে। গর্ভস্থ ভ্রূণের লিঙ্গনির্ধারণ ও কন্যাভ্রূণের বিনাশ নিষিদ্ধ করে আইন হয়েছে ১৯৯৪ সালে। তা সত্ত্বেও ওই প্রযুক্তির ব্যবহার অপ্রতিহত, ভারতের বিপুল সংখ্যক ‘নিখোঁজ কন্যা’ তার সাক্ষী। অতএব কোথাও শিশুকন্যার অনুপাত কমলেই নতুন করে নজর পড়ে অসাধু চিকিৎসক ও ক্লিনিকগুলির দিকে। জাতীয় নমুনা সমীক্ষায় প্রাপ্ত পশ্চিমবঙ্গের সর্বশেষ জন্মকালীন লিঙ্গ বিষয়ক তথ্য সামনে আসার সঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তারাও নজরদারি বাড়ানোর কথা বলেছেন। সন্দেহ নেই যে ভারতে লিঙ্গনির্ধারণ ও গর্ভপাত একটা শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছেছে। তার নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গেও তার প্রকোপ যথেষ্ট। জাতীয় নমুনা সমীক্ষা দেখাচ্ছে, ২০১৮-২০২০ সালে পশ্চিমবঙ্গে শিশুকন্যার অনুপাত ৯৪১, শহর এলাকায় ৯২০। উচ্চপ্রযুক্তি নাগালে থাকায় বহু দম্পতি ‘পছন্দ’ অনুসারে পরিবার তৈরি করছেন, যেখানে পুত্রই অভিপ্রেত।
কিন্তু তিন দশকের অভিজ্ঞতা বলে যে ক্লিনিকগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার কাজে সরকারের সাফল্য অতি সামান্য। সামগ্রিক ভাবে চিকিৎসক সমাজ তার বিরোধিতাই করে এসেছে, চিকিৎসক সংগঠনগুলি বার বার অভিযুক্তদের সপক্ষে দাঁড়িয়েছে, অভিযুক্তকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া যায়নি। অতএব কেবল ক্লিনিকে নজরদারিই যথেষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞরা জনসংখ্যার বিশ্লেষণ করে, এবং সমীক্ষার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তেও পৌঁছেছেন যে, কেবল লিঙ্গ-নির্ণয় ও গর্ভপাত দিয়ে শিশুকন্যার অনুপাত কমে আসাকে ব্যাখ্যা করা চলে না। বহু দম্পতি একটি পুত্রসন্তান জন্মালে আর সন্তান চান না। তাঁরা দীর্ঘমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেন। এর ফলেও কন্যাসন্তানের জন্ম কমছে।
অতীতে শিশুকন্যার স্বাস্থ্যের প্রতি উপেক্ষা করে, তার চিকিৎসায় অবহেলা করে মৃত্যু ত্বরান্বিত করার চেষ্টাও দেখা গিয়েছে। সেই ঝোঁক এখন কমেছে, তা-ও বলা চলে না। এ বারের নমুনা সমীক্ষাতেও পশ্চিমবঙ্গ-সহ নানা রাজ্যে শিশুপুত্রের তুলনায় কিছু বছরে শিশুকন্যার মৃত্যুহার বেশি। আসল প্রশ্নটি মৌলিক। তা হল, শিশুকন্যার প্রতি পরিবারের আগ্রহ বাড়ছে না কেন? পশ্চিমবঙ্গে যে নাবালিকা বিবাহ, অকালমাতৃত্ব বেশ কিছু জেলায় বেড়েছে, তা থেকে শিশুকন্যার অনুপাতের পতনকে আলাদা করে দেখা চলে না। মেয়েদের শিক্ষার হারে উন্নতির একটি সুফল, সন্তানসংখ্যায় হ্রাস। অথচ, মেয়েদের শিক্ষায় উন্নতি, পরিবারের দারিদ্র নিরসন, কোনও কিছুর সঙ্গেই শিশুকন্যার সংখ্যায় বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে না। লিঙ্গসাম্যের পথ এমনই দীর্ঘ ও কঠিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy