Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Diabetes

নীরব ঘাতক

ভারতে কর্মক্ষম বয়সের মধ্যেও ডায়াবিটিসের প্রকোপ যথেষ্ট, তাই কর্মক্ষমতা হারানোর ফলে ভারতের জিডিপি-তে বহু কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

diabetes.

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৩ ০৬:২৫
Share: Save:

ভারতে ডায়াবিটিসের হার উদ্বেগজনক। সাম্প্রতিক একটি নমুনা সমীক্ষার ফল থেকে ইঙ্গিত মিলেছে যে, ভারতে ডায়াবিটিস (মধুমেহ বা বহুমূত্র রোগ) আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা, যা এত দিন সাত কোটি মনে করা হচ্ছিল, বস্তুত দশ কোটি ছাড়িয়েছে। আরও তেরো কোটি মানুষ ডায়াবিটিসের ঠিক আগের ধাপে (প্রি-ডায়াবিটিস) রয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এঁদের একটি বড় অংশের রক্তে শর্করা আরও বাড়ায় তাঁরা ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হবেন, কারণ ভারতীয় তথা দক্ষিণ এশিয়ার বাসিন্দাদের মধ্যে প্রি-ডায়াবিটিস থেকে ডায়াবিটিসে এগোনোর হার বিশ্বে সর্বাধিক। পশ্চিমবঙ্গের মানুষেরও চিন্তার বিশেষ কারণ রয়েছে, বলছে সমীক্ষা। সংগৃহীত নমুনার ইঙ্গিত, এ রাজ্যে চার জনের এক জন রয়েছে প্রি-ডায়াবিটিস পর্যায়ে, চোদ্দো শতাংশ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত। এই হার বিশ্বের গড় হার ৯.৩ শতাংশের (২০১৯) চাইতে অনেকটাই বেশি। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে কী করে? কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যকলাপের দিকে তাকালে রোগ প্রতিরোধের কাজ আরও দুঃসাধ্য মনে হয়, কারণ অসংক্রামক ব্যাধি (ক্যানসার, ডায়াবিটিস, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক প্রভৃতি) নিয়ন্ত্রণের খাতে এ বছর টাকা কমেছে। ২০২২-২৩ সালে সারা দেশের জন্য পাঁচশো কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল, ২০২৩-২৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৮৯ কোটি টাকা। এই টাকায় ভারতের মতো জনবহুল দেশে ডায়াবিটিস প্রভৃতি রোগের সচেতনতার প্রচার, প্রান্তিক এলাকায় রোগনির্ণয়ের শিবির করা, স্বাস্থ্যব্যবস্থার নানা ধাপের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ, এবং অ-সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্রীয় নীতিতে (২০১০) উল্লিখিত বিভিন্ন উদ্যোগ করা হবে, তা আন্দাজ করা বড়ই কঠিন।

অথচ, ভারতে কর্মক্ষম বয়সের মধ্যেও ডায়াবিটিসের প্রকোপ যথেষ্ট, তাই কর্মক্ষমতা হারানোর ফলে ভারতের জিডিপি-তে বহু কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্য দিকে, চিকিৎসার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ খরচ বহু পরিবারকে দারিদ্রসীমার নীচে ঠেলে দিচ্ছে। আশঙ্কার কারণ আরও এই যে, যে কোনও অসংক্রামক ব্যাধির মতো, ডায়াবিটিসেরও উৎস জীবনযাপনের শৈলী এবং খাদ্যাভ্যাসে। নগরায়ণ যত বেড়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডায়াবিটিস। ১৯৩৮ সাল এবং ১৯৫৯ সালে ভারতের বড় শহরগুলিতে ডায়াবিটিসের হার ছিল মাত্র এক শতাংশ, বা তারও কম। আশির দশক থেকে তা দ্রুত বাড়তে শুরু করে, ২০০০ সালে তা দাঁড়ায় বারো শতাংশে। গ্রামের মানুষের ঝুঁকিও অবশ্য দ্রুত বাড়ছে, দেড় দশকের মধ্যে তাও দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে কোথাও।

ডায়াবিটিস অন্যান্য সংক্রমণের সম্ভাবনাও অনেক বাড়িয়ে দেয়, কোভিডের সময়ে সে তথ্য বার বার প্রচারিত হয়েছিল। ডায়াবিটিসকে তাই বলা হয় ‘নীরব ঘাতক’, আর বিশ্বের সর্বাধিক ডায়াবিটিস-আক্রান্ত ভারতকে বলা হয়, বিশ্বের ‘ডায়াবিটিস রাজধানী’। সরকার যাতে ডায়াবিটিসকে গুরুত্ব দেয়, তার জন্য সচেষ্ট হওয়া দরকার। কেবল সুলভ চিকিৎসা নয়, প্যাকেটজাত চটজলদি খাবারে ফ্যাট ও শর্করার পরিমাণ যথাযথ কি না, তাও দেখার কাজ খাদ্য ও ক্রেতা দফতরের। শৈশব থেকেই খেলাধুলো ও স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস গড়ে ওঠা দরকার। নয়তো বিপদ আটকানো কঠিন।

অন্য বিষয়গুলি:

Diabetes India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy