Advertisement
E-Paper

অনিচ্ছার কারণ

তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, দুর্নীতির প্রভাব ভোটবাক্সে পড়ে না। অস্বীকার করা যাবে না যে, এ কথা বুক ঠুকে বলার জোর এই মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের বিলক্ষণ আছে।

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:২৮
Share
Save

দুর্নীতির প্রশ্নে তৃণমূল কংগ্রেসের অবস্থানকে কি বিস্ময়মিশ্রিত কৌতূহল বা কৌতূহলপূর্ণ বিস্ময় বলা চলে? আদানি-কাণ্ডে ইন্ডিয়া জোটের প্রতিবাদে শামিলনা-হওয়ার পিছনে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, দুর্নীতির প্রভাব ভোটবাক্সে পড়ে না। অস্বীকার করা যাবে না যে, এ কথা বুক ঠুকে বলার জোর এই মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের বিলক্ষণ আছে। ২০২৪ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে সর্বব্যাপী অভিযোগ উঠেছিল, তারই মধ্যে দশটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে দশটিতেই জয়ী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা। কেউ বলতেই পারেন যে, এটি দুর্নীতি বিষয়ে মানুষের উদাসীনতার প্রতিফলন নয়— রাজ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি কতখানি ক্ষীণবল, উপনির্বাচনের ফলাফল তারই প্রমাণ। কিন্তু, দুর্নীতির পাহাড়প্রমাণ অভিযোগকেও যদি বিরোধী দলগুলি নিজেদের পক্ষে জনমত গঠনের কাজে ব্যবহার না করতে পারে, তা কি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে দুর্নীতির অভিযোগের গুরুত্বহীনতাই প্রমাণ করে না? কিন্তু, পাশাপাশি নেত্রী তাঁর দলের বিধায়কদেরই মুখের উপরে শুনিয়ে দিচ্ছেন যে, তাঁরা এত টাকা কোথায় পান, সে কথা নেত্রীর জানা আছে। অর্থাৎ, দলের উচ্চ স্তরের নেতারা যে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তিনি সে কথাটি জানেন; এবং প্রকাশ্যেই তার উল্লেখ করছেন মানে সে বিষয়ে উদ্বিগ্নও বটে। প্রশ্ন হল, দুর্নীতি যদি ব্যালট বাক্সে প্রভাব না ফেলে, তা হলে উদ্বেগ কিসের? তৃণমূল কংগ্রেসের মতো নির্বাচনসর্বস্ব একটি দলে নির্বাচনী স্বার্থ নির্বিশেষেই অভ্যন্তরীণ শুচিতা রক্ষার তাগিদ তীব্র হয়েছে, এ কথা বিশ্বাস করা একটু কঠিনই বটে। তা হলে, রহস্য কোথায়?

দুর্জনে বলবে, আপাতত দ্বিমেরু তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে দুর্নীতি বিষয়ক বৃহত্তম চিন্তাটি হল, তার ফল শেষ অবধি কোন মেরুতে পৌঁছচ্ছে। কিন্তু, দুর্জনের কথায় কান দেওয়ার প্রয়োজন নেই— রাজ্যবাসী প্রশ্ন করতে পারেন, শীর্ষনেত্রী যদি দলীয় দুর্নীতি বিষয়ে এতখানি অবগতই হন, তা হলে তা বন্ধ করতে উদ্যোগী হচ্ছেন না কেন? এই প্রশ্নের উত্তরটি বিশেষ জটিল নয়— মেজো-সেজো নেতাদের খাজনা আদায়ের অধিকার প্রত্যাহার করে নিলে দলের বিড়াল আর থাকবে না, বড় জোর দু’টি লেজের ডগা পড়ে থাকবে। ফলে, দলীয় দুর্নীতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে; পাশাপাশি চলতে থাকে প্রত্যক্ষ হস্তান্তরভিত্তিক বিবিধ সরকারি প্রকল্প। দুর্নীতি বিষয়ে ক্ষুব্ধ ধনী-দরিদ্রনির্বিশেষে রাজ্যের সব স্তরের মানুষই— কিন্তু, ব্যালট বাক্সে সেই ক্ষোভের প্রতিফলন তাঁরাই ঘটান, যাঁরা এই প্রকল্পগুলির প্রাপক নন। যাঁরা জীবনধারণের জন্য বিবিধ সরকারি প্রকল্পের উপরে নির্ভরশীল, তাঁরা দুর্নীতিজনিত ক্ষোভ হজম করে ফেলেন সেই হস্তান্তরের কথা ভেবে। বিষয়টির রাজনৈতিক তাৎপর্য অনস্বীকার্য— পশ্চিমবঙ্গে লক্ষ্মীর ভান্ডারের তীব্র বিরোধী বিজেপি মহারাষ্ট্রে ‘লাডকী বহীণ’ প্রকল্প ঘোষণা করে ভোটে জেতে। দুর্নীতি ও ভোটের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী যে দ্বিঘাত সমীকরণটি রচনা করেছেন, তার চরিত্র বোঝা কঠিন নয়।

জটিলতর প্রশ্ন হল, গৌতম আদানির মতো প্রধানমন্ত্রীর অতি-ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত এক শিল্পপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির এই বিপুল অভিযোগটিকে বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে তৃণমূল এত অনিচ্ছুক কেন? কোনও বিষয়কে কী ভাবে রাজনৈতিক প্রশ্ন করে তুলতে হয়, সে বিষয়ে রাহুল গান্ধীর দক্ষতা অত্যন্ত প্রশ্নযোগ্য— কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নয়। মাত্র এক হাজার একর জমিকে তিনি একদা রাজ্যের বৃহত্তম রাজনৈতিক প্রশ্নে পরিণত করতে পেরেছিলেন। অথচ, গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ক্ষেত্রে সেই দক্ষতা ব্যবহারে তিনি গররাজি কেন? এটা কি ইন্ডিয়া জোটের অভ্যন্তরে কংগ্রেসকে চাপে রাখার কৌশল? না কি, এই অনিচ্ছার পিছনে অন্য গভীরতর কোনও কারণ রয়েছে? অ্যালিস এই প্রশ্নটির সামনে দাঁড়িয়েই বিস্মিত হবে। রাজ্যবাসীর মতোই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Election TMC BJP Congress Scam

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}