Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Police

পুলিশের আইন

সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্ট স্বয়ং একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিধাননগরের নগরপালকে নির্দেশ দিয়েছে, স্ব-এক্তিয়ারভুক্ত সমস্ত থানাকে আইনের ধারা সম্পর্কে অবগত করতে।

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৪০
Share: Save:

আইনের রক্ষকেরই যদি আইনের ধারাগুলি সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান না থাকে, তবে সুবিচার চাইতে মানুষ যাবে কোথায়? সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্ট স্বয়ং একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিধাননগরের নগরপালকে নির্দেশ দিয়েছে, স্ব-এক্তিয়ারভুক্ত সমস্ত থানাকে আইনের ধারা সম্পর্কে অবগত করতে। উক্ত মামলাটিতে অভিযোগ উঠেছিল রাজারহাট-গোপালপুর এলাকায় একটি জমি-বিবাদের ঘটনায় পুলিশের হেনস্থার। পুলিশ এক দিকে মামলাকারীর কাছে লক্ষাধিক টাকা ঘুষ চেয়েছে, অন্য দিকে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা-র ভুল ধারায় আবেদনকারীর কাছ থেকে মুচলেকা লিখিয়ে নিয়েছে। সমগ্র বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ হাই কোর্ট। এবং এই মামলা ব্যতিক্রম নয়। স্বয়ং হাই কোর্ট যখন কমিশনারেট-কে নির্দেশ দেয়, পুলিশি নোটিসের ছক ঢেলে সাজাতে এবং কোনও মামলায় কোনও পক্ষকেই যাতে হয়রানির মুখে পড়তে না হয় তা নিশ্চিত করতে, তখন বোঝা যায়, পুলিশের উদাসীনতা কিংবা অতিসক্রিয়তা কোথায় পৌঁছেছে। আইন রক্ষকদের এ-হেন আচরণ কোনও সভ্য দেশে বিরল।

প্রসঙ্গত, দেশের অভ্যন্তরের আইনকানুন রক্ষার গুরুদায়িত্বটি পুলিশবাহিনীর উপর অর্পিত। সে কাজে শুধুমাত্র পেশিশক্তি প্রদর্শনই যথেষ্ট নয়, আইনজ্ঞানও প্রত্যাশিত। পুলিশ প্রশিক্ষণে শারীরিক কসরতের পাশাপাশি আইন শিক্ষাতেও জোর দেওয়া হয়। সেই কারণেই তাদের প্রশিক্ষণ-পর্ব সময়সাপেক্ষ। এবং সেই কারণেই সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষ প্রশাসনিক মহল থেকে ‘ম্যান পাওয়ার’-এর অভাবের অজুহাতে প্রশিক্ষণ-পর্বটিকে সংক্ষিপ্ত করার যে কথা বলা হয়েছে, তা অবৈজ্ঞানিক এবং আইনের অপপ্রয়োগের আশঙ্কায় ভরপুর। অন্য দিকে, পুলিশের কাছে যাঁরা অভিযোগ নিষ্পত্তির আশায় যান, তাঁদের এক বড় অংশের পক্ষে সরাসরি আদালত অবধি পৌঁছনো সম্ভব হয় না। এমতাবস্থায় পুলিশই তাঁদের অভিযোগগুলিকে মান্যতা দিয়ে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপে সহায়তা করবে, এমনটাই কাম্য। কিন্তু বাস্তবে নাগরিকের বহু অভিযোগে পুলিশ যথোচিত গুরুত্ব দেয় না। গার্হস্থ নির্যাতনের মতো গুরুতর ক্ষেত্রেও ‘ঘরেই মিটমাট করে নেওয়া’-র মতো উপদেশ বর্ষণে ক্ষান্ত হয়। আবার, যে ক্ষেত্রে অভিযোগ ক্ষমতাশালীর বিরুদ্ধে, সে ক্ষেত্রে অতি সক্রিয় হয়ে নির্যাতিতকেই হেনস্থার উদাহরণও সুপ্রচুর। এই অন্যায্য আচরণই পুলিশের প্রতি নাগরিক ক্ষোভের অন্যতম কারণ।

ক্ষোভ আরও আছে। উর্দির অপব্যবহারকে ঘিরে ক্ষোভ। পুলিশ সম্পর্কে একটা কথা বহুল প্রচলিত— তিনি নিজেও আইন মানবেন, অন্যকেও আইন মানতে বাধ্য করবেন। কিন্তু সব ক্ষেত্রে তা হয় কি? অনেক ক্ষেত্রে পদ-গর্বী পুলিশ নিজেই অন্যায় ভাবে আইন ভেঙে পার পেয়ে যায়। সাধারণ মানুষের আস্থা পেতে হলে এই আচরণগুলিতে রাশ টানতে হবে। শুধুমাত্র প্রবীণদের বাজার সরকার হয়ে ওঠা বা পাড়ায় ফুটবল খেলা নয়, নাগরিকের অভিযোগগুলির প্রতি মনোযোগী হতে হবে। থানায় পৃথক ‘হেল্প বক্স’ রেখে বাসিন্দাদের অভিযোগ সংগ্রহ এবং নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। থানায় গেলে হেনস্থা হওয়ার বদলে প্রয়োজনীয় পরামর্শ যেন সকলে পান, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তাতে জনসংযোগের কাজটিও হবে, উর্দির প্রতি সুবিচারও।

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court Bribery Law
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy