Advertisement
১৩ জানুয়ারি ২০২৫
Education in West Bengal

মূল্য তিন সহস্র

রাজ্য সরকার হয়তো জানে না, কোনও দেশ বা রাজ্যের অর্থনীতির উপর শিক্ষার প্রভাব কতখানি গভীর। জানলে, শিক্ষাদানে যুক্তদের বেতনকাঠামোও এ রাজ্যে তদনুরূপ হত।

education

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৪২
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার বিবর্ণ চিত্রটি সাম্প্রতিক কালের নয়। বাম আমলের বাস্তবজ্ঞানহীন শিক্ষানীতি নির্ধারণের দায় থেকে এ রাজ্য কখনও মুক্ত হতে পারেনি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বর্তমান তৃণমূল সরকারের শিক্ষার প্রতি চরম অবহেলা এবং সীমাহীন দুর্নীতি, যা সামগ্রিক ভাবে শিক্ষাকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছে। অবস্থা এমনই, ‘মানুষ গড়ার কারিগর’দের মূল্য বর্তমানে এ রাজ্যে এসে দাঁড়িয়েছে মাসপ্রতি তিন হাজার টাকা। হুগলির পুরশুড়ার এক বিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অতিথি-শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি তেমনটাই জানাচ্ছে। দৈনিক মজুরির তুলনামূলক আলোচনা করলে দেখা যাবে, এই রাজ্যেই একশো দিনের কাজের দিনপ্রতি মজুরি অতিথি শিক্ষকদের জন্য ধার্য মজুরির দ্বিগুণেরও বেশি। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এক জন গৃহসহায়িকাও মাসে এর বেশি বেতন পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ, শিক্ষকের স্থান এঁদের সকলের নীচে। তৎসত্ত্বেও স্কুলটির শিক্ষক পেতে যে অসুবিধা হয়নি তার কারণ— এ রাজ্যের চাকরির বাজারটিরও কঙ্কালসার দশা।

পেশা হিসাবে এ রাজ্যে স্কুলশিক্ষকতা ‘ভাল’ ছাত্রছাত্রীদের কাছে দীর্ঘ দিনই তার আবেদন হারিয়েছে। উচ্চশিক্ষিত, মেধাবীরা ভবিষ্যৎ গড়তে হয় রাজ্য বা দেশের বাইরে পা রাখছেন, অথবা এমন পেশা বেছে নিচ্ছেন যাতে অর্থ এবং সম্মান দুই-ই সুপ্রচুর। অন্য পেশাগুলির তুলনায় স্কুলশিক্ষকদের বেতন এখনও যথেষ্ট কম। সম্মানও, অর্থের বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি প্রকাশ্যে আসার পর, একেবারে তলানিতে। তদুপরি, নিয়োগ-দুর্নীতি স্পষ্ট হওয়ার আগে থেকেই সরকারি ও সরকারপোষিত বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াটি অনিয়মিত হয়ে পড়েছিল। হুগলির বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক জানিয়েছেন, তাঁদের বিদ্যালয়ে দীর্ঘ দিন শূন্যপদে নিয়োগ নেই। দৈনন্দিন পঠনপাঠন চালানোর জন্য অতিথি-শিক্ষক নিয়োগ জরুরি। অথচ, এর জন্য সরকারি কোনও ব্যয়বরাদ্দ থাকে না। বক্তব্যটি রূঢ় সত্য। বাস্তবে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত কিছু ক্ষেত্রে এতই বিসদৃশ যে, উঁচু ক্লাসে বিজ্ঞান পড়ানো বন্ধ রাখতে হয়েছে, একই শিক্ষককে এক সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় পড়াতে হচ্ছে, নয়তো, সামান্য বেতনের বিনিময়ে অতিথি-শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু এত কম বেতনের বিনিময়ে স্বল্প সময়ের জন্য যাঁরা শিক্ষাদানে এগিয়ে আসেন, ছাত্রছাত্রীদের প্রতি তাঁদের সকলের দায়িত্ববোধ যথেষ্ট থাকে কি না, প্রশ্ন তোলা অনুচিত হবে না।

রাজ্য সরকার হয়তো জানে না, কোনও দেশ বা রাজ্যের অর্থনীতির উপর শিক্ষার প্রভাব কতখানি গভীর। জানলে, শিক্ষাদানে যুক্তদের বেতনকাঠামোও এ রাজ্যে তদনুরূপ হত। অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু এক প্রবন্ধে মন্তব্য করেছিলেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় স্কুলশিক্ষকদের বেতন বেশির ভাগ দেশের চেয়ে বেশি, তাই ‘ভাল’ ছাত্রছাত্রীরা স্কুল শিক্ষকতার পেশা বেছে নেন। স্কুলশিক্ষার ক্ষেত্রে বেতন ভাল হলে তার সুফল এক প্রজন্মের গণ্ডি ছাপিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে যায়। প্রমাণ, বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি পেটেন্টের মালিক। অর্থনীতির পরিভাষায় একেই ইতিবাচক অতিক্রিয়া বলে। শিক্ষকদের ইতিবাচক অতিক্রিয়ার মূল্য সরকার দিতে চায় কি না, সেটা সরকারই ঠিক করুক।

অন্য বিষয়গুলি:

Education West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy