—প্রতীকী ছবি।
শেষ হয়েও ফের শুরুর ইঙ্গিত। শীত এবং উৎসবের মরসুমে গোটা পৃথিবীর সঙ্গে ভারতেও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনাভাইরাসের প্রকোপ। খোঁজ মিলেছে নতুন উপরূপ জেএন.১-এর। এই উপরূপের কারণে ইতিপূর্বে বিশ্বে আমেরিকা-সহ বেশ কিছু দেশে ফের কোভিড-আক্রান্তদের সংখ্যাধিক্য চোখে পড়েছে। ভারতেও যে কেরল, কর্নাটক-সহ বেশ কিছু রাজ্যে কোভিড-এর হঠাৎ-বৃদ্ধি নজরে এসেছে, তার পশ্চাতে সেই নতুন উপরূপটিই দায়ী কি না, টিকার সুরক্ষাকবচকে সে অনায়াসে ভেদ করতে পারবে কি না, কোভিডবিধির কড়াকড়ির মুখে ফের জনসমাজকে পড়তে হবে কি না— এতবিধ প্রশ্নের উত্তর মিলতে এখনও বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। তবে আগাম সতর্কতার বিকল্প নেই। কেরল, কর্নাটক-সহ কিছু রাজ্য জনবহুল স্থানে মাস্ক পরার মতো নিয়মাবলি ফিরিয়ে এনেছে। সচেতন এবং সাবধান হওয়ার পালা এখন অন্য রাজ্যগুলির প্রশাসনের, একই সঙ্গে নাগরিকেরও।
পরিস্থিতি আতঙ্কের নয় এখনও, তবে অবশ্যই তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া আটকানো জরুরি। অতিমারির প্রথম পর্বের মতো অবিন্যস্ত, অ-প্রস্তুত অবস্থা এখন নয়। সুরক্ষার উপায়গুলি সম্পর্কে প্রত্যেকেই কম-বেশি সচেতন। দেশের অধিকাংশ মানুষেরই টিকার দু’টি ডোজ় গ্রহণ সম্পন্ন, তৃতীয় ডোজ়ও নিয়েছেন অনেকেই। নতুন উপরূপটি যে অধিক বিপজ্জনক— তেমন সতর্কবার্তাও এখনও মেলেনি। কিন্তু তাতে নিশ্চিন্ত থাকার উপায় নেই। ভাইরাস এবং তজ্জনিত রোগের মতিগতি সম্পূর্ণত মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। তাই রোগ নিরাময় অপেক্ষা গোড়াতেই তার জনসমাজে ছড়িয়ে পড়া রুখতে হবে— সুষ্ঠু পরিকল্পনা অনুযায়ী এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে। উভয় ক্ষেত্রেই ইতিপূর্বে কেন্দ্র এবং বিভিন্ন রাজ্যগুলিতে লক্ষণীয় ঘাটতি দেখা গিয়েছে। কোভিডের ঢেউ আছড়ে না পড়া অবধি প্রশাসনের শীতঘুম ভাঙেনি। এবং সেই রোগের ব্যাপ্তি ও বিপদের গভীরতা বিষয়েও বিস্তর জলমেশানো তথ্য পাওয়া গিয়েছে। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মৃত্যুমিছিল কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্যগোপনের প্রবণতারই এক মর্মান্তিক পরিণতি। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থাও তথৈবচ। সেখানে রোগ নিয়ে সরকারি লুকোচুরি এক অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। অথচ, জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়কারী রোগগুলির চরিত্র এমনই যে, যতই তা চেপে রাখা হয়, ততই সে নীরবে ধ্বংসলীলা চালিয়ে যায়। তা ডেঙ্গির ক্ষেত্রেও যেমন সত্য, কোভিডের ক্ষেত্রেও তা-ই। আশা, এই বার অন্তত রাজ্য প্রশাসন উৎসব উদ্যাপন থেকে কিছু কাল বিরতি নিয়ে আগামী দিনের সংক্রমণ বিষয়ে সতর্ক হবে।
অবশ্য, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব প্রশাসনের উপর ছেড়ে দিয়ে নাগরিক জনস্রোতে গা ভাসাবে— এমন দাবিও অনুচিত। যদিও বড়দিনের সপ্তাহান্তে কলকাতার জনজোয়ার যেন কতকটা সেই অনৈতিক দাবির পক্ষেই সায় দিল। যত ক্ষণ না প্রশাসন থেকে লাঠ্যৌষধি প্রয়োগের বন্দোবস্ত হবে, তত ক্ষণ অবধি লাগামহীন উল্লাস চলবে— এমন মন্ত্রই কণ্ঠস্থ করে ফেলেছেন নাগরিকদের একাংশ। মাস্ক পরা, জনবহুল স্থান এড়িয়ে চলা— এমন সামান্য কিছু উপদেশ মেনে চললে যে উৎসবের রং ফিকে হয় না, বরং আগামী উৎসবগুলিতে যোগদান নিশ্চিত করা যায়, তা এঁদের বোধগম্য হয় না। কেননা, নাগরিক অধিকার একটি আলোচিত বিষয়— নাগরিক দায়িত্ব একেবারেই নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy