—প্রতীকী ছবি।
উৎসবের আলো স্তিমিত হলে শহরের আনাচকানাচ থেকে বেরিয়ে আসে জমাটবাঁধা অন্ধকার। এই বছরও যেমন দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানে সেই অন্ধকার ফের প্রকাশ্যে চলে এল। স্বস্তি এইটুকুই, গত বছরের তুলনায় শহরে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমেছে। গত বছর যেখানে উৎসবের পাঁচ দিনে ঝরে গিয়েছিল পাঁচটি অমূল্য প্রাণ, এই বছর সেই সংখ্যা ১-এই আটকে থেকেছে। কিন্তু সেই স্বস্তি স্থায়ী হয় না যখন জানা যায়, পঞ্চমীর রাত থেকে দশমীর মধ্যে শহরে ২০টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৯ জন, প্রাণহানি হয়েছে এক যুবকের। অর্থাৎ, মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও এ শহর তার চরিত্র বদলায়নি। উৎসবের দিনে-রাতে সে একই রকম বেপরোয়া, লাগামছাড়া। সেই উদ্দামতারই মাসুল নিজের প্রাণ দিয়ে চুকিয়েছেন বছর বাইশের এক যুবক। হেলমেটহীন অবস্থায় বেপরোয়া গতিতে যাওয়ার সময় বাইকটি রাস্তার পাশে ধাক্কা দিলে তাঁর মৃত্যু হয়।
এই মৃত্যু মর্মান্তিক, একই সঙ্গে শিক্ষারও। যে সতর্কতামূলক কথাগুলি বহু বার নানা ভাবে উচ্চারণ করা হয়, সেগুলি অগ্রাহ্য করলে পরিণতি কী হতে পারে, তার শিক্ষা। দুর্ভাগ্য এটাই যে, হাতের কাছে অসংখ্য উদাহরণ সাজানো থাকলেও রাস্তায় বেরিয়ে কোনও এক মন্ত্রবলে সেগুলি সম্পূর্ণ ভুলে যান এক শ্রেণির মানুষ। অতঃপর অন্য প্রাণকে তো তাঁরা বিপন্ন করেনই, নিজের প্রাণের মায়াটুকুও ত্যাগ করেন। তাই বিনা হেলমেটে বাইক চালানো, মত্ত অবস্থায় অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, একাধিক জনকে বাইকে বসিয়ে যাওয়া— প্রত্যেকটি দৃশ্যই উৎসবের অতিপরিচিত ছবি হয়ে উঠেছে। এই ‘অপরাধী’দের একটা বড় অংশেরই কোনও শাস্তি হয় না। প্রতি উৎসব-শেষে পুলিশ-প্রশাসনের তরফ থেকে কত জনকে আইন ভাঙার অপরাধে ধরা হয়েছে, সেই হিসাব জনসমক্ষে আনা হয়। কিন্তু যে আইনভঙ্গকারীদের দেখেও তাঁদের একাংশ নীরব থাকলেন, সেই সংখ্যাটা সামনে আসে না। এই বছর এক কর্তব্যরত পুলিশকর্মীর কথাটি উল্লেখযোগ্য— রাত হলে উৎসবের নামে বাইক থেকে গাড়ি এমন ভাবে যাতায়াত করে যে দেখেও কিছু করার থাকে না। সামনে গিয়ে থামাতে গেলেই বিপদ। এ প্রসঙ্গে বলা যায়, আইনভঙ্গকারীদের চোখের সামনে দেখে যদি খোদ পুলিশেরই কিছু করার না থাকে, তবে তো গোটা ব্যবস্থাতেই বড় রকমের ফাঁক থেকে গিয়েছে। আইন পালনের ক্ষেত্রে উৎসব আদৌ কোনও ব্যতিক্রম হতে পারে কি? যান নিয়ন্ত্রণে নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করার আগে এই ফাঁকগুলি পুলিশ-প্রশাসনের এক বার দেখে নেওয়া উচিত ছিল।
উৎসবের নামে এই যথেচ্ছাচার শুধুমাত্র আহত-নিহতের সংখ্যাতেই সীমাবদ্ধ নয়, প্রকৃতপক্ষে এক বৃহত্তর সামাজিক অবক্ষয়ের ইঙ্গিতবাহী। যেখানে সবাইকে নিয়ে চলার মানসিকতা নেই, আছে এক উগ্র আত্মসর্বস্বতা। আর আছে এক ক্ষণিকের আনন্দ লাভের কাণ্ডজ্ঞানহীন তাড়না। এই মুহূর্তটুকুর জন্যই যেন বেঁচে থাকা। মানুষ মুহূর্তে বাঁচে, এ কথা সত্য। অনিশ্চয়তায় ভরা জীবনে তার গুরুত্বও হয়তো উড়িয়ে দেওয়া চলে না। কিন্তু সেই বাঁচা অন্যের আনন্দকে ফিকে করে নয়, অন্যের অস্তিত্বকে অগ্রাহ্য করে নয়। সকলকে সঙ্গে নিয়ে, পরস্পরের হাত ধরে চলার মধ্যেই লুকিয়ে আছে উৎসবের আনন্দ। দু’চাকা-চার চাকায় গতি তোলার আগে সেই কথাটি যেন কেউ বিস্মৃত না হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy