Advertisement
E-Paper

১ এপ্রিল থেকেই রাজ্য সরকারি কর্মীদের বর্ধিত হারে ডিএ, বিজ্ঞপ্তি নবান্নের, সুপ্রিম কোর্টে আবার পিছোল মামলার শুনানি

সুপ্রিম কোর্টে আবার পিছিয়ে গেল ডিএ মামলার শুনানি। এপ্রিল মাসে এই মামলা শুনতে পারে শীর্ষ আদালত। বিচারপতি জানান, কেন রাজ্যের আবেদন খারিজ করা হবে না, তা নিয়ে পরবর্তী শুনানিতে তাদের বক্তব্য জানাতে হবে।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৫ ১৫:৫২
Share
Save

বাজেট বক্তৃতার সময়েই রাজ্য সরকারি কর্মীদের চার শতাংশ ডিএ (মহার্ঘ ভাতা) বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ১ এপ্রিল থেকে এই বর্ধিত ডিএ কার্যকর হওয়ার কথা মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাল নবান্ন। এর ফলে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ বৃদ্ধি পেয়ে হল ১৮ শতাংশ। পেনশনভোগীরাও সুবিধা পাবেন। তাঁদেরও ডিআর (মহার্ঘ ত্রাণ) বৃদ্ধি পেয়ে হবে ১৮ শতাংশ। এই আবহে সুপ্রিম কোর্টে আবার পিছিয়ে গেল ডিএ মামলার শুনানি। আগামী এপ্রিল মাসে এই মামলা শুনতে পারে শীর্ষ আদালত।

কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে এ রাজ্যের কর্মীদের ডিএর ফারাক এখনও ৩৫ শতাংশ। রাজ্য সরকার ডিএ বৃদ্ধি কার্যকর করার বিজ্ঞপ্তি জারি করার পরে এই ফারাক নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সরকারি কর্মচারীদের বামপন্থী সংগঠনগুলি। ন্যায্য ডিএ-র দাবিতে আগামী ৭ থেকে ৯ এপ্রিল রাজ্য জুড়ে সরকারি দফতরে ৩ ঘণ্টা ব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন একটি বাম সংগঠনের সদস্যেরা। তবে তৃণমূল কর্মচারী সংগঠন সরকারের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি বাজেট বক্তৃতায় রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য রাজ্য সরকারের কর্মীদের ডিএ চার শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা করেছিলেন। মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বর্ধিত ডিএ কার্যকর করার কথা ঘোষণা করল নবান্ন। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রাজ্য সরকারের কর্মীদের পাশাপাশি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মী, সরকার অধিকৃত, পঞ্চায়েত, পুরসভার কর্মীদেরও ডিএ বৃদ্ধি পেয়ে হল ১৮ শতাংশ। ১ এপ্রিল থেকে এই ডিএ পাবেন তাঁরা। সুবিধা পাবেন পেনশনভোগীরাও। তাঁদেরও ১ এপ্রিল থেকে ডিআর বৃদ্ধি পেয়ে হবে ১৮ শতাংশ।

যদিও এই নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছে বামপন্থী কর্মচারীদের সংগঠনগুলি। কোঅর্ডিনেশন কমিটির তরফে বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী বলেন, ‘‘৩৯ শতাংশ ডিএ বাকি ছিল। দেওয়া হয়েছে মাত্র ৪ শতাংশ। এখনও বিস্তর ডিএ বকেয়া রয়েছে। সরকারের এমন ঘোষণাতেও আমরা খুশি ছিলাম না। বিজ্ঞপ্তি জারি করার পরেও খুশি হইনি। ডিএ-র ক্ষেত্রে বাংলার কর্মীরা সবচেয়ে বেশি ব্রাত্য। ন্যায্য ডিএ পাওনার দাবিতে আগামী ৭-৯ এপ্রিল রাজ্য জুড়ে সরকারি দফতরে ৩ ঘণ্টা ব্যাপী ধর্মঘট ঘোষণা করছি।’’ সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেন, ‘‘বকেয়া যা ছিল, তার তুলনায় যৎসামান্য ডিএ দিয়েছেন, বাজারমূল্যের সঙ্গে এই ডিএ-র শতাংশের সাযুজ্য নেই। এমনকি, কেন্দ্রীয় সরকার বা অন্য রাজ্যে যে ডিএ দেওয়া হয়, তার সঙ্গেও সাযুজ্য নেই। বিজ্ঞপ্তি জারি নিয়ে সরকারি কর্মীরা কোনও উৎসাহ বোধ করছেন না।’’ বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষা কমিটির সংগঠন স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘এ বছর সরকার বাজেট অধিবেশনে শিক্ষক, সরকারি কর্মচারীদের জন্য মাত্র চার শতাংশ ডিএ বৃদ্ধি করেছেন। এখনও ৩৯ শতাংশ ডিএ বাকি থাকল। তাই আমরা এই নির্দেশে কেউ খুশি নই।’’

তৃণমূল কর্মচারী ফেডারেশনের আহ্বায়ক প্রতাপ নায়েক জানিয়েছেন, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। বাজেটে তিনি ডিএ বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেই কথামতো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এপ্রিল মাসের পয়লা তারিখ থেকে সরকারি কর্মীরা চার শতাংশ বেশি ডিএ পাবেন। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছেন, তাঁদের জ্ঞাতার্থে বলতে চাই, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে সর্বস্তরে আর্থিক পাওনা থেকে বঞ্চিত করেছে। সেই পরিস্থিতিতেও প্রতি বছর ডিএ বৃদ্ধি করছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বিষয়টিও যেন সমালোচকেরা মনে রাখেন।’’

অন্য দিকে, মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে ডিএ মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। সেই শুনানি আবার পিছিয়ে গেল। বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ জানায়, আগামী এপ্রিল মাসে হবে এই মামলার পরবর্তী শুনানি। রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বলকে বেঞ্চের প্রশ্ন, ‘‘আপনাদের আর্জি কেন গ্রহণযোগ্য হবে, কেন খারিজ করব না?’’ বিচারপতি করোল জানান, কেন রাজ্যের আবেদন খারিজ করা হবে না, তা নিয়ে পরবর্তী শুনানির দিন তাদের বক্তব্য জানাতে হবে। আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং ফিরদৌস শামিম এই মামলার দ্রুত শুনানির আর্জি জানান শীর্ষ আদালতে। তাঁদের বক্তব্য, দীর্ঘ দিন ধরে ডিএ মামলার শুনানি হয়নি। এর জন্য একটা নির্দিষ্ট দিন ধার্য করা হোক।

এর আগে বিচারপতি হৃষীকেশ রায়ের বেঞ্চে ডিএ মামলা ছিল। শুনানি শেষ হওয়ার আগেই ওই বিচারপতি অবসর নেন। ফলে গত তিন মাস ধরে মামলাটি শুনানির জন্য ওঠেনি। এখন বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে গেল ওই মামলাটি। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় হারে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ দেওয়ার রায় দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে শীর্ষ আদালতে রাজ্যের আবেদনটি দায়ের হয়। প্রায় তিন বছর কেটে গিয়েছে। এখনও ওই মামলার নিয়মিত শুনানি শুরু হয়নি। এর আবহে আবার পিছিয়ে গেল মামলার শুনানি। আগামী ২২ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে হতে পারে সেই শুনানি।

Supreme Court

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}