চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গ স্বধর্মে স্থিত রইল। বিধানসভায় রাজ্যের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য যে বাজেট পেশ করলেন, তাতে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের দিশা নেই, বিভিন্ন অনুদান রয়েছে। কর্মসংস্থানের যথাযথ ব্যবস্থা না করে, শিল্পায়নের মাধ্যমে রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নতির চেষ্টা করে কেবলমাত্র অনুদানের ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদে অর্থব্যবস্থা পরিচালনা করা যায় কি না, তা বড় প্রশ্ন। সেই প্রশ্নটিকে যদি আপাতত সরিয়ে রাখা যায়, তবুও অনেকগুলি সংশয় থাকে। প্রথমত, বাজেটে অর্থ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, আগামী অর্থবর্ষে রাজ্যের রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে রাজ্যের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৩.৮৫ শতাংশ। এই হারটি কেন্দ্রীয় বাজেটে ঘোষিত রাজকোষ ঘাটতির অনুমোদিত ঊর্ধ্বসীমার চেয়ে বেশ খানিকটা বেশি— এমনকি, রাজ্য সরকার যদি বিদ্যুৎক্ষেত্রে সংস্কারে সম্মত হওয়ার মাধ্যমে রাজকোষ ঘাটতির অনুমোদিত ঊর্ধ্বসীমাকে ০.৫ শতাংশ-বিন্দু বাড়িয়ে ৩.৫ শতাংশ করতে পারে, তবুও রাজ্যের ঘাটতির পরিমাণ তার চেয়ে বেশি। এই কথাটির এক দিকে রয়েছে এফআরবিএম আইনের বাধ্যবাধকতা। অন্য দিকে, রয়েছে একটি প্রশ্ন— ঘাটতি বাড়িয়ে রাজ্য সরকার সেই টাকায় কী করছে? বর্ধিত ব্যয়ের একটি অংশ যাচ্ছে সুদ মেটাতে। ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষ থেকেই রাজ্যের মোট ঋণে বাজার থেকে অপেক্ষাকৃত চড়া সুদে নেওয়া ঋণের অনুপাত বাড়তে থাকে। সেই দায় মেটানো এখন রাজ্যের সামনে বড় সমস্যা। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী ও তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র জানিয়েছিলেন যে, বাম জমানায় জমে থাকা ১,৯২,০০০ কোটি টাকা ঋণ রাজ্যের উপরে বড় বোঝা। বারো বছরে সেই বোঝার আয়তন প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। রাজ্যের ঋণের পরিমাণ মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৩৭.৬৭ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গ ভারতের সর্বাধিক ঋণগ্রস্ত রাজ্যগুলির মধ্যে একটি। ফলে, এই সমস্যা নিয়ে মাথা না-ঘামিয়ে উপায় নেই।
এই বাজেটে উল্লেখযোগ্য ঘোষণার মধ্যে রয়েছে লক্ষ্মীর ভান্ডারের উপভোক্তা ষাটোর্ধ্ব মহিলাদের জন্য বার্ধক্য ভাতা, মৎস্যজীবীদের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রকল্প, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাৎসরিক বৃত্তি ইত্যাদি। কৃষিক্ষেত্রে বেশ কিছু ছাড় রয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে তৈরি বাজেটে রয়েছে উত্তরবঙ্গের জন্য বিশেষ কিছু সুবিধা। প্রকল্পগুলির মধ্যে বিস্ময়ের অবকাশ নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় সরকারের থেকে প্রত্যক্ষ নগদপ্রাপ্তি একটি বিকল্প উন্নয়ননীতির চেহারা নিয়েছে, তা অনস্বীকার্য। অন্য দিকে, বাজেটে ভোটের ছাপ থাকবে, গণতন্ত্রে তা-ও এক রকম স্বতঃসিদ্ধ। কেউ অবশ্য প্রশ্ন করতে পারেন, রাস্তা বানানো তো সরকারের অবশ্যকর্তব্য— তা হলে রাস্তারও ‘শ্রী’-প্রাপ্তি হল কেন? তবে, সেটা বড় প্রশ্ন নয়। প্রশ্ন হল, যে সরকার রাজকোষ থেকে নাগরিককে প্রত্যক্ষ অর্থসাহায্য করাকে ন্যায্য উন্নয়ননীতি বলে জ্ঞান করে, সে সরকার রাজকোষ ভরার ব্যাপারে এতখানি উদাসীন থাকলে চলবে কী করে? এ কথা ঠিক যে, বাজেট আয়-ব্যয়ের হিসাবমাত্র, সরকারের নীতিনির্দেশিকা নয়— কিন্তু, শিল্পক্ষেত্রের জন্য বাজেটে যতটুকু কথা এবং টাকা বরাদ্দ হয়েছে, তাতে আশার আলো দেখতে পাওয়া মুশকিল। কেবলমাত্র ডেউচা পাঁচামির কুমিরছানা দেখালে চলবে না, রাজ্যের শিল্পায়নের সম্ভাবনাকে তার প্রাপ্য গুরুত্ব দিতে হবে। উপার্জনের পথ খোলা না থাকলে যে সরকারের পছন্দের পথেও হাঁটা মুশকিল, এই বাজেট থেকেও মুখ্যমন্ত্রী সে কথাটি বুঝে নিতে পারেন। এমনিতেই অর্থাভাবে রুগ্ণ স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের জন্য বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে মাত্র দশ কোটি টাকা। হাতে টাকা না থাকলে যে তা খরচ করা মুশকিল, এই কথাটি রাজ্য-নেতৃত্ব যত দ্রুত বুঝবেন, ততই মঙ্গল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy