Advertisement
০২ জানুয়ারি ২০২৫
Christmas 2024

‘উৎসবের পরদিন’

এঁদের ফেলে যাওয়া আবর্জনার পরিমাণ এতই যে, পর দিন রাজ্য সরকারের পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের (পিডব্লিউডি) কর্মীদের নামাতে হয়েছে তা সাফ করতে।

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:১৮
Share: Save:

উৎসবশেষ’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “উৎসবের পরদিন আমাদের কাছে বড়ো ম্লান... পরদিনের ছড়ানো উচ্ছিষ্ট, গলা বাতি এবং শুকনো মালার দিকে তাকিয়ে মন উদাস হয়ে যায়...।” কেন, তার দার্শনিক কারণটি বলাও ছিল সে প্রবন্ধে। কিন্তু কলকাতাবাসী যাঁরা এ বছর ক্রিসমাসের দিন ময়দানে গিয়েছেন, বা অন্তত তার পাশ দিয়ে বাসে চেপে পেরিয়েছেন, নিশ্চিত ভাবেই তাঁদের মন বিরক্তিতে ও নাক দুর্গন্ধে কুঁচকে ওঠার কথা। আগের দিন অর্থাৎ ক্রিসমাস ইভে পার্ক স্ট্রিটগামী জনতার একটা বড় অংশ দুপুর থেকেই কাটিয়েছেন ময়দানে, এবং সন্ধ্যার মুখে তাঁরা ময়দান ছাড়ার পরে দেখা গিয়েছে কলকাতার ফুসফুসের দুরবস্থা: যত্রতত্র ছড়িয়ে স্টাইরোফোমের থালা-বাটি, কাপ, প্লাস্টিকের বোতল, গুটখা ও চিপসের প্যাকেট, আরও কত কী। এঁদের ফেলে যাওয়া আবর্জনার পরিমাণ এতই যে, পর দিন রাজ্য সরকারের পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের (পিডব্লিউডি) কর্মীদের নামাতে হয়েছে তা সাফ করতে। তার পরেও দেখা গেছে, কর্মীরা কেবল বড় রাস্তা সংলগ্ন তথা ক্যাসুরিনা অ্যাভিনিউ বরাবর ময়দানের একটি অংশের আবর্জনাই পরিষ্কার করেছেন, মূল ময়দানের অনেকটা অংশ রয়ে গিয়েছে অস্পৃষ্ট, জঞ্জালে ভরা।

ময়দানের অভিভাবক ভারতীয় সেনা, কিন্তু তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বটি রাজ্য সরকারের পিডব্লিউডি দফতরের। আর কলকাতা পুরসভা পাশে থাকে জঞ্জাল ফেলার ‘বিন’, ‘ওয়েস্ট ডিসপোজ়াল ভ্যাট’-সহ পরিকাঠামোগত সহায়তা দিয়ে। যার যা কাজ, তাকেই করতে হবে সত্য কথা। কিন্তু উৎসবমুখর জনতা যদি এই ভেবে আবর্জনা ফেলে গিয়ে থাকেন যে, পিডব্লিউডি ও পুরসভার লোক তো আছেই, জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজ তো সরকারেরই করার কথা— তা হলে বলতেই হয় এঁরা আর যা-ই হোন, অন্তত শুভবোধ ও কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন নাগরিক নন। এঁদের বোঝা দরকার, স্থানটি ময়দান এবং কালটি উৎসবের বলেই তাঁদেরও অপাত্র হওয়ার স্ব-স্বাক্ষরিত ছাড়পত্রটি মেলে না। প্রশাসনের যেমন কাজ উৎসবের পরিবেশ ও জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, তেমনই নাগরিকেরও কিছু কর্তব্য থাকে; তার মধ্যে প্রথম ও প্রধানটি হল দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন আচরণ। দুর্গাপুজো দেখতে জড়ো হওয়া জনতা কখনও মণ্ডপসজ্জার ক্ষতি করেন না, এমনকি ভিড় বাঁধভাঙা হলেও না, সেই জনতাই ময়দানে আনন্দমুখর সময় কাটিয়ে কেন ফেলে রেখে যাবেন রাশি রাশি আবর্জনা? এমন নয় যে, পরিবেশ নিয়ে কারও সচেতনতা নেই, কলকাতার মানচিত্রে ময়দানের গুরুত্বও এঁদের অজানা নয়। সবচেয়ে বড় কথা, শহরের যে বিস্তীর্ণ সবুজ জায়গাটি আমার উৎসবের আনন্দ বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে, সেই জায়গাটিই আবর্জনায় ভরানোর মানসিকতা আসে কেন?

তা হলে কি পিডব্লিউডি বা পুরসভার পাশাপাশি, এ বার থেকে উৎসবকালীন ময়দানের ‘রক্ষা’য় কলকাতা পুলিশের উপস্থিতিও নিশ্চিত করা দরকার? ‘শক্তের ভক্ত’ নীতি অবলম্বনেই কি সমাধান? ময়দানের চা-বিক্রেতা পর্যন্ত আক্ষেপ করছেন যে, এই জনতা তাঁরও খানিক অচেনা, এতটা যদৃচ্ছাচার এর আগে দেখা যায়নি— এই পরিস্থিতিতে অবশ্যই সরকারের তরফে কঠোর পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। তা কী ভাবে হবে তা ঠিক করতে হবে রাজ্য সরকারকেই। অদূর অতীতে ময়দান থেকে বইমেলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আবহে ময়দানের গুরুত্ব সম্পর্কে পরিবেশবিদ ও নগর-পরিকল্পকদের কথাকে হাতিয়ার করা হয়েছিল, সাম্প্রতিক কালে কলকাতা মেট্রোর প্রচার-অভিযানে কাজে লাগানো হয়েছে সমাজের বিশিষ্টজনের মন্তব্য। এই পথটি তুলনায় সহজ, ময়দান পরিষ্কার রাখার কাজে অবিলম্বে কাজে লাগানো যেতে পারে। ভেবে রাখা দরকার কঠোর পন্থাও: কড়া নজরদারি, প্রয়োজনে জরিমানা-সহ অন্য দণ্ডেরও। ইট-কাঠ-কংক্রিটে ক্রমশ ভরে যাওয়া, ক্ষীয়মাণ সবুজের এই শহরে অন্তত এইটুকু ভূখণ্ডকে বাঁচিয়ে রাখতেই হবে, প্রয়োজনে বেপরোয়া জনতার উৎসবে বেড়ি পরানোর মূল্যেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Maidan Christmas 2024 X-mas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy