প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
রাজ্যের উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলির ‘র্যাঙ্কিং’ করবে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ, এমনই বিজ্ঞপ্তি বার করেছে শিক্ষা দফতর। স্কুলের র্যাঙ্ক নির্ধারিত হবে পরিকাঠামো, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার ফল, এমন নানা নির্ণায়ক দিয়ে। আশ্চর্য বটে! এ রাজ্যের স্কুলশিক্ষার উন্নতির জন্য কী কী করা দরকার, সে বিষয়ে গত কয়েক বছরে অনেক প্রস্তাব দিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক ও বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা সবাই ফেল— স্কুলের র্যাঙ্ক না জানলে স্কুলের উন্নতি হবে না, কেউ কি বুঝেছিলেন? শিক্ষা দফতর সেই দিকে আঙুল দেখাল, এবং বুঝিয়ে দিল যে, কেন এ রাজ্যের স্কুলশিক্ষার এই হাল। অকারণ কাজে ব্যস্ততা দেখিয়ে সরকারের দিশাহীনতা, আর সদিচ্ছার অভাবকে চাপা দেওয়ার এমন সুযোগ কি ছাড়তে আছে? কোন স্কুলের কত র্যাঙ্ক হল, তা নিয়ে সবাই এমন ব্যস্ত হয়ে পড়বে যে, সরকারি স্কুলের গুণমানের সূচক কার কোন কাজে লাগবে, সে প্রশ্ন করতে সবাই ভুলে যাবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়ন করে তার ফলগুলি দিয়ে একটি সূচক তৈরি করা হয় প্রধানত ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের জন্য। তাঁরা দেশের, বা রাজ্যের, সরকারি ও বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যাতে নিজেদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিতে পারেন। আবার, ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল-এর মতো কোনও জাতীয় সংস্থা এমন সূচক তৈরি করলে কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজেদের মূল্যায়ন করতে পারে। নিজেদের খামতিগুলি পূরণ করে আরও ভাল র্যাঙ্ক পেতে সচেষ্ট হয়। প্রশ্ন উঠবে, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ব্লক বা জেলার বাইরে পছন্দের স্কুল বেছে নেওয়ার ক্ষমতা ক’জনের রয়েছে?
মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কোনও সরকারি স্কুল যেন নিম্নমানের না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। যদি সরকারি স্কুলের হালহকিকত সর্বসমক্ষে আনাই শিক্ষা দফতরের উদ্দেশ্য হয়, তা হলে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কোন স্কুলে শিক্ষকের কত শূন্য পদ রয়েছে, প্রকাশ করুক। সেই সঙ্গে জানাক, প্রত্যন্ত ব্লকের কত স্কুলে, বিশেষত মেয়েদের স্কুলে, একাদশ-দ্বাদশে বিজ্ঞান বিভাগ রয়েছে, থাকলে ল্যাবরেটরি রয়েছে কি না। জেলায় কোন স্কুলটির অবস্থান ছত্রিশ, কোনটির চৌষট্টি, সেই সংখ্যার পিছনে সরকারের মৌলিক ঘাটতিগুলিকে চাপা দেওয়া চলে না। তার দায় প্রকারান্তরে স্কুল কর্তৃপক্ষের উপর চাপানোও চলে না। এক জন বা দু’জনমাত্র শিক্ষক যে স্কুলের একশো-দেড়শো ছাত্রছাত্রী সামলাচ্ছেন, আর পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও যে স্কুল ছাত্রের অভাবে বন্ধ হতে বসেছে, এদের কোনটি উপরে থাকবে, কোনটি নীচে? সরকার ও সরকার-পোষিত স্কুলের সঙ্কটগুলি গোপন ব্যাধি তো নয়, দগদগে ঘা। স্কুলগুলির প্রধান সমস্যা শিক্ষকের ঘাটতি, যার জন্য দায়ী নিয়োগ দুর্নীতি, শিক্ষক বদলের ভ্রান্ত নীতি, চুক্তিতে শিক্ষক নিয়োগের প্রবণতা। শিক্ষকহীন, পরিকাঠামোহীন নিধিরাম সর্দারের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে রাজ্যের বহু স্কুল। কে বেশি নম্বরে ফেল, আর কে কিছু কম নম্বরে, তা জেনে কতটুকু লাভ হবে?
প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উৎকর্ষ— এই ধারণায় সূচকের প্রয়োজন আছে বটে। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হতে সরকারি শিক্ষকের আগ্রহ কতটুকু? অভিযোগ যে, অধিকাংশ সরকারি শিক্ষক স্কুলে শিক্ষার মান বাড়াতে আগ্রহী নন; আর অদক্ষ, অনাগ্রহী শিক্ষকদের শাস্তি দেওয়ার সাহস সরকারের নেই। স্কুলের উৎকর্ষের একটি সূচক তো আছেই— মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল। প্রতি বছরই পাশের হারে পূর্ব মেদিনীপুর, কলকাতা এগিয়ে থাকে, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর পিছিয়ে থাকে। যেখানে ব্যর্থতা বেশি, সেই জেলা, ব্লকগুলিকে এগিয়ে আনতে কী কী বিশেষ ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার? মুমূর্ষু স্কুলগুলিকে না বাঁচিয়ে সেগুলির দুর্বলতার আরও সূক্ষ্ম পরিমাপের জন্য কমিটি তৈরি করা যেমন নিষ্ফল, তেমনই নিষ্ঠুর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy