Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Wildlife (Protection) Amendment Bill 2021

জীবে অপ্রেম

বন্যপ্রাণ সুরক্ষা আইন, ১৯৭২-এর (ডব্লিউএলপিএ) ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বর্ষাকালীন অধিবেশনেই এই আইনের কিছু প্রয়োজনীয় সংশোধনে সায় দিয়েছিল লোকসভা।

বিলটির বেশ কিছু সংশোধন নিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণকারীরা উদ্বিগ্ন।

বিলটির বেশ কিছু সংশোধন নিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণকারীরা উদ্বিগ্ন। ছবি: পিটিআই।

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:২৫
Share: Save:

এমাসের গোড়ার দিকে রাজ্যসভায় পাশ হয়ে গেল বন্যপ্রাণ (সুরক্ষা) সংশোধিত বিল, ২০২১। এর লক্ষ্য, বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীদের সুরক্ষা এবং চোরাচালানের জন্য শাস্তিমূলক পদক্ষেপগুলি আরও জোরদার করা। বন্যপ্রাণ সুরক্ষা আইন, ১৯৭২-এর (ডব্লিউএলপিএ) ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বর্ষাকালীন অধিবেশনেই এই আইনের কিছু প্রয়োজনীয় সংশোধনে সায় দিয়েছিল লোকসভা। এই বিলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যও রয়েছে। যেমন, কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন এনডেঞ্জার্ড স্পিসিজ় অব ওয়াইল্ড ফ্লোরা অ্যান্ড ফনা (সিআইটিইএস)-র মতো আন্তর্জাতিক চুক্তিতে ভারত আবদ্ধ হওয়ায় এই চুক্তির শর্তাবলি অনুযায়ী বেশ কিছু বিশেষ প্রাণী বা উদ্ভিদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাধীন প্রক্রিয়া বা কাঠামো গড়ে তোলা। এ ছাড়া, বিলটি আইনে পরিণত হলে, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সংরক্ষিত অঞ্চলে বসবাসকারী স্থানীয় জনজাতি গোষ্ঠীর মানুষদের অধিকার রক্ষায় আরও গুরুত্ব প্রদান করা যাবে। তাঁদের জীবিকার সুযোগ বাড়বে। অন্য দিকে, বাজেয়াপ্ত করা পশুপাখি বা তাদের দেহাংশ আরও ভাল ভাবে সংরক্ষণের নির্দেশও রয়েছে এই বিলে।

সুখবর নিশ্চয়ই, যদিও বিলের বেশ কিছু সংশোধন নিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণকারীরা উদ্বিগ্ন। সর্বাপেক্ষা সমস্যাজনক একটি ব্যতিক্রম, যেখানে ধর্মীয় বা অন্য কোনও উদ্দেশ্যে আটক হাতিদের স্থানান্তরকরণ বা হস্তান্তরে সরকারি অনুমোদনের বিষয়টি বলা হয়েছে। সংরক্ষণকারীদের আশঙ্কা, এ বিষয়ে অস্পষ্টতা আইনি ফাঁক তৈরি করবে, যা এই বিপন্ন প্রাণীগুলির দুরবস্থা আরও বাড়াবে। তাতে ডব্লিউএলপিএ-র উদ্দেশ্যই লঙ্ঘিত হবে। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে এমনিতেই হাতিদের এলাকা বা বিচরণপথ হামেশা বিপদসঙ্কুল। খেতের ফসল বাঁচাতে কখনও এদের বিষ দিয়ে মারা হয়। কখনও এলিফ্যান্ট করিডরের উপরে রেলপথ থাকার ফলে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় এদের, যথাযথ পরিকল্পনায় যে মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হত। উপরন্তু, বিল বলছে, স্থানীয় সংরক্ষিত বন্যপ্রাণীদের তালিকাতেও কাঁটছাঁট করা হবে, অর্থাৎ, তাদের সংখ্যা কমানো হবে। আরও চিন্তার কঠোর নীতি প্রণয়নের দিকগুলি, যেখানে সাধারণ বন্যপ্রাণ সংক্রান্ত নীতি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে জরিমানা ২৫,০০০ টাকা থেকে এক লক্ষ টাকা করা হয়েছে। মূল উদ্দেশ্য, মানুষের সঙ্গে বন্যপ্রাণীর সংঘর্ষ রোখা। সেটা দরকারি কাজ। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এর কুফল পড়বে বনে বসবাসকারী প্রান্তিক গোষ্ঠীর মানুষদের উপর। সেটা এড়ানোর কিছু ব্যবস্থাও জরুরি ছিল।

অন্য দিকে, নতুন বিলে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের স্বরূপ হিসাবে ‘স্ট্যান্ডিং কমিটি’ গঠনের কথা বলা হয়েছে, যা রাজ্যের ওয়াইল্ডলাইফ বোর্ডগুলির ক্ষমতা খর্ব করবে। এখনও পর্যন্ত স্টেট বোর্ডগুলি তাদের বন্যপ্রাণের স্বার্থে কথা বলতে পারে, যা সংরক্ষণের একটি জরুরি শর্ত। ফসল ধ্বংসকারী প্রজাতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রকে সম্পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব যথেষ্ট চিন্তার। রাজ্য কর্তৃপক্ষকে এ কাজে যুক্ত না করলে সংরক্ষণের কাজটিই কঠিন হতে পারে। মুশকিল হল, বহু ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য মূল উদ্দেশ্যটিকে ব্যাহত করছে। কিংবা নির্বাচনী স্বার্থে বিতর্কিত আইন প্রণয়ন হচ্ছে। জীবস্বার্থ বা বাস্তুতন্ত্রের বিষয়টি হয়ে যাচ্ছে গৌণ।

অন্য বিষয়গুলি:

Wildlife (Protection) Amendment Bill 2021 Rajya Sabha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy