—প্রতীকী ছবি।
বাজারে যে আগুন লেগেছে, সে কথা প্রতি দিনই টের পাচ্ছেন সাধারণ মানুুষ। জুন মাসের মূল্যবৃদ্ধির পরিসংখ্যান হাতে আসায় যে আগুনের প্রাবল্য বোঝা গেল। পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির পরিমাণ ৯৩.৩৫%— অর্থাৎ, গত বছর জুন মাসে এক কিলোগ্রাম পেঁয়াজের যা দাম ছিল, এ বছর জুন মাসে কার্যত তার দ্বিগুণ হয়েছে। আলুর ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির হার ৬৬.৩৭%, আনাজে ৩৮.৭৬%, ডালে ২১.৬৪%। সব মিলিয়ে খাদ্যপণ্যের পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার প্রায় ১১%। এর প্রভাব খুচরো বাজারেও সমান ভাবে পড়ছে। মূলত খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণেই ভারতে পাইকারি মূল্যসূচকের নিরিখে মূল্যবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৩.৩৬%। মে মাসে এই হার ছিল ২.৬১%; ২০২৩ সালের জুন মাসে তা ছিল (-)৪.১৮%। খাদ্যপণ্যের এই মূল্যস্ফীতি অবশ্য অকস্মাৎ নয়— ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে এই মূল্যস্ফীতির হার আট শতাংশের আশেপাশেই ছিল। কিছু দিন আগে প্রকাশিত গৃহস্থালি স্তরের ভোগব্যয় সংক্রান্ত পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে, দেশের সিংহভাগ মানুষের আয়ের অন্তত অর্ধেক খরচ হয় শুধু খাদ্যের সংস্থান করতেই। অর্থাৎ, খাবারের পিছনে আরও খরচ বাড়ানোর সামর্থ্য বেশির ভাগ মানুষের নেই। এই অবস্থায় খাদ্যপণ্যের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধি ঘটতে থাকলে তা সামাল দেওয়ার একটিই উপায় থাকে— খাদ্যের পরিমাণ হ্রাস। তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের উপরে।
অর্থশাস্ত্রের পাঠ্যপুস্তক জানাবে, মূল্যস্ফীতির সম্ভাব্য কারণ দু’টি— হয় জোগানের তুলনায় চাহিদা বেড়ে যাওয়া; নয়তো কোনও কারণে জোগান হ্রাস পাওয়া। ভারতে খাদ্যপণ্যের বাজারে মূল্যস্ফীতি ঘটছে দ্বিতীয় কারণটির ফলে। জোগান ব্যাহত হওয়ার কারণটিও এত দিনে সুস্পষ্ট— বিশ্ব উষ্ণায়ন-জনিত জলবায়ু পরিবর্তন। গত বছর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল খরার কবলে পড়েছিল। এ বছরও গ্রীষ্মে প্রবল তাপপ্রবাহ চলেছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস মেনে বর্ষা সময়ের খানিক আগে পৌঁছেছে বটে, কিন্তু বহু অঞ্চলেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এখনও স্বাভাবিকের চেয়ে কম। সব মিলিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন। অন্য দিকে, প্রবল গরমের কারণে আনাজ নষ্টও হচ্ছে প্রচুর। আনাজের আয়ু এমনিতেই স্বল্প— অস্বাভাবিক গরমে তা স্বল্পতর হয়েছে। আমদানির মাধ্যমে এই ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়াও কঠিন। তার ফলে, বাজার অগ্নিমূল্য। গমের জোগান দীর্ঘ দিন ধরেই বিঘ্নিত হচ্ছে। এখন অবধি সরকার গম আমদানির কথা বলেনি, ফলে বাজারে দাম কমারও লক্ষণ নেই। অন্য দিকে, সম্প্রতি ধানের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়ানো হল। তারও প্রভাব পড়বে বাজারদরের উপরে। সব মিলিয়ে, বাজারের আগুন থেকে সাধারণ মানুষের নিস্তার মিলবে, অদূর ভবিষ্যতে তেমন সম্ভাবনা ক্ষীণ।
বিশ্ব উষ্ণায়ন এখন ঘোর বাস্তব। জলবায়ুর এই পরিবর্তনকে মেনে নিয়েই যে চলতে হবে, গত এক দশকে তা প্রশ্নাতীত রকম স্পষ্ট হয়েছে। কৃষিকে উষ্ণায়নের প্রভাব-প্রতিরোধী (ক্লাইমেট রেজ়িলিয়েন্ট এগ্রিকালচার) করে তোলার কথা বলা হচ্ছে গত দশকের গোড়া থেকে। কিন্তু, কাজের কাজ কতখানি হয়েছে, এ বার সে খোঁজ নেওয়া প্রয়োজন। উষ্ণায়নের প্রভাব-প্রতিরোধী কৃষির মূল কথা হল, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষির সনাতন পরিবেশের যে পরিবর্তন হচ্ছে, তার সঙ্গে মানানসই ব্যবস্থা গড়ে তোলা। অধিকতর তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে, এবং তুলনায় কম জল প্রয়োজন, এমন বীজ ব্যবহার করতে হবে। কম জলে কৃষিকাজ সম্পন্ন করার বিভিন্ন পদ্ধতি— যেমন ড্রিপ ইরিগেশন, অতি ক্ষুদ্র সেচ ইত্যাদি— গ্রহণ করতে হবে; বৃষ্টির জল সংগ্রহ ও জল পুনর্ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজন উন্নততর সংরক্ষণ পরিকাঠামো তৈরি করা। নতুন বাস্তবের সঙ্গে কৃষকদের পরিচিত ও অভ্যস্ত করিয়ে নিতে প্রচার এবং প্রশিক্ষণও প্রয়োজন। উষ্ণায়নের বিপদ কমবে না, বরং বাড়বে— লড়ার জন্য তৈরি হওয়া ভিন্ন উপায় নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy