E-Paper

অর্থমনর্থম্‌

অধিক কড়ি গুনতেও তাই তাঁরা রাজি; উদয়াস্ত পরিশ্রম করে, জীবনের অতিরিক্ত সুখ-বিলাস ত্যাগ করে, সেই অর্থ তাঁরা জমা দেন বেসরকারি স্কুলের তহবিলে।

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৫ ০৫:০০
Share
Save

অমূল্য’ ও ‘দুর্মূল্য’-এর মধ্যে ফারাক কিসে? ভারতীয় স্কুলপড়ুয়াদের অভিভাবকেরা বলবেন, অর্থে। শিক্ষা অমূল্য, কারণ শিক্ষার জোরেই সন্তানের ‘দুধে ভাতে’ থাকার ভবিষ্যৎ ব্যবস্থাটি পাকা হতে পারে। সরকারস্বীকৃত স্কুলে শিক্ষাব্যবস্থার যা হাল, তাতে উচ্চবিত্ত তো বটেই, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত আর্থিক অবস্থানের অভিভাবকদেরও আজ ভরসা বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল: সেখানে পড়াশোনা ভাল হয়, ছোটদের বিকাশের সব বন্দোবস্ত পাকা। এর জন্য অধিক কড়ি গুনতেও তাই তাঁরা রাজি; উদয়াস্ত পরিশ্রম করে, জীবনের অতিরিক্ত সুখ-বিলাস ত্যাগ করে, সেই অর্থ তাঁরা জমা দেন বেসরকারি স্কুলের তহবিলে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বেসরকারি স্কুলের সেই ‘চাহিদা’ও বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি দেশ জুড়ে ৩০৯টি জেলার ৩১ হাজার অভিভাবককে নিয়ে সমীক্ষা হয়েছিল, তাতে ৪৪% অভিভাবক বলেছেন, গত তিন বছরে বেসরকারি স্কুলগুলি খরচ বাড়িয়েছে ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ, ৮% অভিভাবকের মতে তা বেড়েছে ৮০ শতাংশেরও বেশি! এ যদি ‘দুর্মূল্য’-এর সংজ্ঞা না হয়, আর কী!

এই ছবিটিই এই মুহূর্তে শিক্ষাক্ষেত্রের চেনা ছবি। সমীক্ষা তাকে হাট করে দিল মাত্র। হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু ইত্যাদি বড় শহরের অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা ও প্রতিবাদের ছবিটি এই সমীক্ষার সূত্রে সামনে আসছে, তবে পশ্চিমবঙ্গের স্কুলপড়ুয়াদের অভিভাবকেরা এর সঙ্গে বিলক্ষণ পরিচিত। কলকাতায় গত মাসেই ‘ইউনাইটেড গার্ডিয়ানস’ অ্যাসোসিয়েশন’ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি দিয়েছিলেন, বেসরকারি স্কুলের লাগামছাড়া ফি বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সরকার অবিলম্বে উদ্যোগ করুক, বিধানসভায় বিল এনে তা নিয়ন্ত্রণ করুক। ২০২১-এ সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল, ফি-সংগ্রহের ক্ষেত্রে বেসরকারি স্কুলের স্বায়ত্তশাসনে রাজ্য সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, তবে স্কুলগুলি যাতে অন্যায় ভাবে লাভ বা শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ করতে না পারে সেই লক্ষ্যে সরকার ফি-কাঠামো নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ২০১৭ সালেই বেসরকারি স্কুলের বেলাগাম ফি আটকাতে ‘সেল্ফ রেগুলেটরি কমিটি’ গড়ার কথা বলেছিলেন, সরকারের তরফে ২০২২ থেকে বিল আনার কথা চলছে, ২০২৩-এ ‘প্রাইভেট স্কুল রেগুলেটরি কমিশন’ গঠনে রাজ্য মন্ত্রিসভা নাকি নীতিগত অনুমোদনও দিয়েছে— এত কিছুর পরেও কাজের কাজ হয়নি কিছুই, স্কুলগুলির ক্রমাগত খরচ বাড়িয়ে যাওয়াই তার প্রমাণ।

বেসরকারি স্কুলগুলির যুক্তি, শিক্ষাক্ষেত্রের পণ্য ও পরিষেবারও দাম বাড়ছে চড়চড় করে। ‘ভাল শিক্ষক’দের ধরে রাখতেও দরকার বেশি টাকা, এই সব কারণেই ফি বৃদ্ধি। এতে যুক্তি আছে বটে, কিন্তু সর্বদা সব বেসরকারি স্কুল ফি-বৃদ্ধির উপযুক্ত কারণও দর্শায় না, স্রেফ নোটিস পাঠিয়ে খরচ বাড়িয়ে দেয়, অভিভাবকেরা বাধ্য হন তা মেনে নিতে, এমন অভিযোগ ভূরি ভূরি। স্কুলের বাইরের জীবন-জীবিকাচিত্রটি সুস্থ সুন্দর হলে অসুবিধা ছিল না, কিন্তু বেকারত্ব, কর্মহীনতা, চাকরি ছাঁটাই ইত্যাদি সমস্যায় জর্জরিত অভিভাবকেরাই বা অতিরিক্ত অর্থ পাবেন কোথায়! গোদের উপর বিষফোড়া পশ্চিমবঙ্গে সরকারি স্কুলশিক্ষার দগদগে দশা: দুর্নীতি ও অব্যবস্থার ফলটি চোখের সামনে। বেসরকারি স্কুলে অর্থের লোভ, সরকারি স্কুলে অনর্থের— ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Private Schools

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।