Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Indian Politicians

সকলই শোভন?

সম্প্রতি রায়দিঘিতে এহেন ‘অশোভন’ রাজনীতির আর একটি শিখরবিন্দু পাওয়া গেল।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:২৭
Share: Save:

রাজনীতির ভাষায় ও রাজনীতিকের আচরণে সভ্যতার সীমা লঙ্ঘিত হইতেছে— এমন দুর্যোগ নূতন নহে। ভোটের মরসুমে বরাবর সেই দুর্যোগ বাড়ে। কিন্তু রাজনীতির ভাষা এবং রাজনীতিকের আচরণ যদি সভ্যতার বাহিরেই বসতি করে, অবিরত অসভ্যতাই যদি নির্বাচনী রাজনীতির নিত্যকর্মপদ্ধতির অঙ্গ হইয়া দাঁড়ায়, তবে তো নাগরিক নাচার। বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও ঘোষিত হয় নাই, অর্থাৎ ঢাকে এখনও কাঠি পড়ে নাই, কিন্তু ইতিমধ্যেই, হয়তো বা খুঁটিপূজার আগে হইতেই ভোটের হাওয়া গরম হইয়া উঠিয়াছে, সেই হাওয়ায় বিবিধ আয়তনের নায়কনায়িকারা ভাসিয়া বেড়াইতেছেন, অনেকেই আপন শিবির হইতে সীমানা অতিক্রম করিয়া অন্য শিবিরে সংলগ্ন হইতেছেন, কেহ কেহ শিবির বদলের আগে কিছু ক্ষণ ত্রিশঙ্কু অবস্থায় ভাসমান থাকিতেছেন, দুই চারিজন হয়তো কাটা ঘুড়ির মতো দিশাহারা হইয়া ভাবিতেছেন, যদি কেহ ধরিয়া লয়। এবং, এই অলীক কুনাট্য রঙ্গে চলিতেছে অসভ্যতার বেলাগাম প্রদর্শনী। নীতিহীন রাজনীতি তাহার ধারক এবং বাহক।


সম্প্রতি রায়দিঘিতে এহেন ‘অশোভন’ রাজনীতির আর একটি শিখরবিন্দু পাওয়া গেল। বিকৃত রুচির শব্দপ্রয়োগ, ব্যক্তিগত কুৎসা, এই সব যদিও কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের সহিত জড়াইবার প্রশ্ন নাই, সকল নেতাই আজ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উদ্দেশে যথেচ্ছ গালিগালাজ বর্ষণ করিয়া থাকেন, এমনকি তাঁহাদের ঘরসংসার ও বৃহত্তর পরিবারের বিবিধ কাহিনি ও তাহার পঙ্কিল আবর্তগুলিকে তাঁহারা নিজেরাই হাটে আনিয়া সেই আবর্জনার হাঁড়ি ভাঙেন এবং তাহার কটুগন্ধী কুখাদ্যসামগ্রী দর্শক-শ্রোতাদের পরিবেশন করেন। দেখিতে দেখিতে এই ভয়াবহ প্রদর্শনী সাধারণ্যের গা-সহা হইয়া যাইতেছে, ইহাই ভয়ঙ্কর। কয়েক বৎসর আগেও যে আচরণে মানুষ শিহরিত হইতেন, আজ তাহা কার্যত স্বাভাবিক বলিয়া বিবেচিত হইতেছে। বিশেষত মেয়েদের সম্পর্কে বিভিন্ন রাজনীতিকের নানা কুৎসিত মন্তব্যে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হইত, আজ তাহা অপেক্ষা অনেকগুণ বেশি অশালীনতাও দিব্য ‘চলতা হ্যায়’। দ্রুত, অতি দ্রুত বঙ্গীয় সমাজ তাহার সভ্যতা, সংস্কৃতির সমস্ত বোধকে বিসর্জন দিয়া এই কদর্যতায় অভ্যস্ত হইতেছে। আজ আর গালিগালাজের কটুগন্ধে নাকে রুমাল চাপা দিবার প্রয়োজন হয় না, রাজনীতির হাটে কুৎসিততম দৃশ্যও দেখিতে দেখিতে নাগরিক বলেন, আমার চোখে তো সকলই শোভন। গভীরতম উদ্বেগ এইখানেই।
রাজনীতির পরিবেশে বৃহত্তর সমাজের অবক্ষয়ের প্রতিফলন ঘটিতেছে নিশ্চয়ই। তবে সমাজের উপরে ফলিত রাজনীতির প্রভাবও অস্বীকার করা চলে না। বিশেষত যাঁহারা সেই রাজনীতির চালকের আসনে, তাঁহারা সামাজিক অবক্ষয়ের দোহাই দিয়া আপন দায়িত্ব অস্বীকার করিতে পারেন না। তাঁহাদের প্রথম কাজ, নিজেদের আচরণকে দৃষ্টান্ত হিসাবে তুলিয়া ধরা, কখনও তাহা হইতে বিচ্যুতি ঘটিলে অবিলম্বে মার্জনা ভিক্ষা করা। বলা বাহুল্য, তাঁহারা অনেকেই এই দাবি পূরণ করিবেন না, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক নেতাদের উপরের সারিতেই কেহ কেহ নিয়মিত কুকথা বলিয়া সংবাদের শিরোনামে বিরাজ করিতে তৎপর। অসভ্যতাই দৃশ্যত তাঁহাদের রণকৌশল, দলের সর্বোচ্চ মহলেও সম্ভবত তাহার অনুমোদন রহিয়াছে। তাঁহাদের শুধরাইবার সম্ভাবনা ক্ষীণ। অথচ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব যদি আপন বাহিনীকে, বিশেষত পরবর্তী ও স্থানীয় স্তরের নেতানেত্রীদের আপন আচরণ সম্পর্কে সতর্ক করিতে পারিতেন এবং আচরণবিধি লঙ্ঘন করিলে শাস্তির আয়োজন করিতে পারিতেন, তাহা হইলে সংশোধন অসম্ভব নহে। সেই সদিচ্ছা কই? অচিরেই ঢাকে কাঠি পড়িবে, উৎসব জমিবে। তাহা অসভ্যতার মহোৎসব হইয়া উঠিবে, আপাতত সেই আশঙ্কায় শিহরিতে হইতেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

General Election Indian Politicians abusive
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy