— ফাইল চিত্র।
শতক বদলেছে, সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে রেলের ব্যবস্থাপনাতেও বদল আসা জরুরি— ক্ষমতায় আসার বছর দুয়েক পরে রেলেরই এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর দাবি ছিল, দেশের রেল-পরিষেবা উন্নত এবং আর্থিক ভাবে সবল হলে দেশেরই লাভ। তার পর কেটে গিয়েছে প্রায় একটি দশক। আরও একটি লোকসভা নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে, দেশের ‘নির্বাচনী সংস্কৃতির ঐতিহ্য’ বজায় রেখে ভোটের মুখে ‘জনগণের উদ্দেশ্যে’ ৪১,০০০ কোটি টাকার অধিক ব্যয়ে দু’হাজারেরও বেশি রেল-পরিকাঠামো প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন মোদী। সেই সঙ্গে দাবি করেছেন, পূর্বে যেখানে রেল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হত, আজ সেখানে পরিবর্তনের হাওয়া। দুর্নীতি না থাকায় এই ক্ষেত্রে অনেক অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে এবং করদাতাদের প্রতিটি পয়সা যাত্রীদের কল্যাণে খরচ করা হচ্ছে।
পরিসংখ্যানকে বিশ্বাস করলে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বাস করার কোনও উপায় নেই। রেলের আর্থিক স্বাস্থ্যের অন্যতম প্রধান মাপকাঠি হল অপারেটিং রেশিয়ো— প্রতি ১০০ টাকা আয় করতে রেলের যত টাকা খরচ হয়, সেটিই অপারেটিং রেশিয়ো। ইউপিএ সরকারের প্রথম পর্বে এই অনুপাত ৮৪ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পরে ২০১৪-১৫ সালেও এই অনুপাত ছিল ৯১.২৫%। বর্তমান আর্থিক বছরে তা দাঁড়িয়েছে ৯৮.৬৫ শতাংশে। অর্থাৎ, ১০০ টাকা উপার্জন করতে রেলের খরচ হয়ে যাচ্ছে ৯৮ টাকা ৬৫ পয়সা। ফলে নতুন রেলপথ বসানো, রেলে কামরাবৃদ্ধি, স্টেশনের আধুনিকীকরণের মতো পরিকাঠামোগত উন্নতির জন্য খুব সামান্য অর্থই পায় রেল প্রকল্পগুলি। দীর্ঘায়িত হয় প্রকল্প শেষ করার মেয়াদও। বর্তমান জমানায় এই হার ঊর্ধ্বমুখী থাকার কারণ বিবিধ, যার অন্যতম ঋণ। রেল-পরিকাঠামো সম্প্রসারণের জন্য বর্তমান সরকার গোড়া থেকেই বাজারের ঋণের উপরে নির্ভর করেছে। অন্য দিকে, সপ্তম বেতন কমিশন চালু হওয়ায় বেতন ও পেনশনের খরচ বেড়েছে। বিবিধ কারণে রেলের পণ্য পরিবহণ বাবদ আয়ও কমেছে, ফলে যাত্রী-ভাড়ায় ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া যায়নি। কিছু ক্ষেত্রে তহবিলের অর্থ অপব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে, যার অন্যতম রাষ্ট্রীয় রেল সংরক্ষণ কোষ। এখানে তহবিলের অর্থ অফিসের আসবাব, এমনকি বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে বলে অভিযোগ। খারাপ রক্ষণাবেক্ষণ, রাজস্ব ঘাটতি হ্রাস করতে সাধারণ কামরা কমানো এবং সময়ানুবর্তিতার অভাবও আয়ের পথে বাধা হয়েছে।
রেলের ঘাটতির সমস্যাটি যে ধারাবাহিক, বহু পরিসংখ্যানেই তার প্রমাণ মিলবে। তার দায় সম্পূর্ণত বর্তমান সরকারের, তেমন কথাও কেই বলবে না— ভারতীয় রেলের এমন কিছু কাঠামোগত সমস্যা রয়েছে, আমূল সংস্কার ভিন্ন যার সমাধান সম্ভব নয়। সমস্যা হল, প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পারিষদবর্গ একটি অভ্যাস রপ্ত করেছেন— যে কোনও ব্যর্থতাকে তাঁরা কথার ভাঁজে সাফল্য হিসাবে তুলে ধরতে চান। রেলের আর্থিক অস্বাস্থ্যকেও তাঁরা স্বাস্থ্যে ফেরার নির্ভুল লক্ষণ হিসাবে প্রচার করছেন। নেতাদের সম্ভবত ধারণা যে, সাধারণ মানুষ অর্থনীতির জটিলতায় ঢুকতে ভয় পাবেন, ফলে তাঁরা যা বোঝাবেন তাকেই সবাই সত্য বলে ধরে নেবেন। এর পর যদি নেতাদের প্রতিটি কথাকেই সাধারণ মানুষ অবিশ্বাস করেন, তাঁদের কি খুব দোষ দেওয়া যাবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy