—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এক শ্রেণির নাগরিকের ‘গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রয়োগ’ যদি ক্ষেত্রবিশেষে অসংখ্য নাগরিকের দুর্ভোগের কারণ হয়ে ওঠে, তবে তাকে যথাযোগ্য সময়ে নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করেও। কারণ, এর সঙ্গে সমাজের বৃহত্তর অংশের স্বার্থের প্রশ্নটি জড়িত। কলকাতায় সম্প্রতি বিভিন্ন দাবিতে মিটিং, মিছিল, সমাবেশের বন্যা বইছে। ফলে পুজোর মুখে চরম অসুবিধায় পড়ছেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে, কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনমকে বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ক্ষোভ প্রকাশ করতে হচ্ছে। অথচ, এই রাজ্যে কোথায়, কখন মিছিল, সমাবেশ করা যাবে না— সেই সংক্রান্ত একাধিক সুস্পষ্ট আইন আছে। ইতিপূর্বে বিভিন্ন প্রসঙ্গে আদালতও কর্মব্যস্ত দিনে রাস্তা বন্ধ করে মিটিং, মিছিল করার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। তৎসত্ত্বেও প্রশাসন আরও অনেক বিষয়ের মতোই এই ক্ষেত্রেও আইন প্রয়োগে চূড়ান্ত অনিচ্ছুক। তারা বরং মিছিলের পরের জট খোলায় যতটা উদ্গ্রীব, জটের সম্ভাবনাকে গোড়াতেই আটকে দেওয়ার ক্ষেত্রে ততটা নয়।
মিটিং, মিছিলের মাধ্যমে প্রতিবাদ প্রদর্শন গণতান্ত্রিক অধিকারের মধ্যে পড়ে নিঃসন্দেহে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও আন্দোলনকারীদের এক সুস্থ সামাজিক বিবেচনাবোধ একান্ত কাম্য। কলকাতার মতো অতি জনঘনত্বপূর্ণ শহরে যে যখন-তখন মিছিল, সমাবেশের ঘনঘটা বহু মানুষের বিপদের কারণ হতে পারে, এ কথা তাঁদের অজ্ঞাত থাকার কথা নয়। এখানে বিকল্প পথের সংখ্যা হাতেগোনা। ফলে, যদি হাওড়া থেকে মিছিল শুরু হয়ে তা ধর্মতলা পর্যন্ত আসে, তবে যানজট শুধুমাত্র সেই পথগুলিতেই সীমাবদ্ধ থাকে না। সংযোগকারী অন্য রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বহু অমূল্য সময় নষ্ট হয়। অন্য পথগুলির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল স্তব্ধ হয়ে থাকার অর্থ— অ্যাম্বুল্যান্স ঠিক সময়ে পৌঁছতে পারবে না হাসপাতালে, আটকে পড়বে স্কুল-ফেরত গাড়ি, মিছিল-অন্তে গণপরিবহণ দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছনো কঠিনতর হয়ে পড়বে। এত জনের অসুবিধার দায়িত্ব তবে কে নেবে? সর্বোপরি, সাধারণ কর্মব্যস্ত দিনেই যেখানে অসুবিধার তালিকাটি এমন দীর্ঘ, সেখানে পুজোর মুখে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে, এ কথা সহজবোধ্য। সেই বিবেচনাবোধটুকু যদি আন্দোলনকারীরা হারিয়ে ফেলেন, তবে প্রশাসনকেই তা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ আইন, আদালতকে অগ্রাহ্য করে নিত্য দিন রাস্তা আটকে প্রতিবাদ প্রদর্শন এক অর্থে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অনুপস্থিতির দিকেই ইঙ্গিত করে। নির্বিকার থেকে প্রশাসন সেই পরিস্থিতিকেই উস্কে দিচ্ছে।
কোনও উন্নত, সভ্য শহরে ভোগান্তির এমন চিত্র সহজলভ্য নয়। অবশ্য যেখানে খোদ শাসক দলই নিয়ম ভেঙে ধর্নায় বসে, মিছিল করে, সেখানে তার পক্ষে বিরোধীদের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে যাওয়া কিঞ্চিৎ কষ্টকর বইকি। সম্প্রতি কাজের দিনে শাসক দলের রাজভবন অভিযান ঘিরে মিছিল ও সমাবেশের ধাক্কায় যানজটে থমকে গিয়েছিল মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। রাজভবনের সামনে যে অঞ্চলে মঞ্চ বেঁধে তারা ধর্নায় বসেছিল, সেখানে ১৪৪ ধারা জারি থাকে। এবং নিয়ম ভাঙার ক্ষেত্রে এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রতি বছর শহরের মধ্যাঞ্চল আটকে তাদের ২১ জুলাই পালনের আড়ম্বরে গোটা শহরে কার্যত অঘোষিত ছুটির মেজাজ দেখা যায়। রোজগারের তাগিদে, বিভিন্ন জরুরি প্রয়োজনে যাঁদের পথে বেরোতেই হয়, তাঁদের নাকাল হওয়াই ভবিতব্য— এমন আচরণই ফুটে ওঠে নেতা-কর্মীদের হাবেভাবে। অথচ, এই দলই একদা ক্ষমতায় বসার পর কর্মসংস্কৃতি ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। মিছিল-বিড়ম্বিত শহরের পরিবেশ কোন কর্মসংস্কৃতি রক্ষা করবে, সেই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy