Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Infant-Mortality Rate

অধরা লক্ষ্য

চিন্তা বাড়িয়েছে ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যবর্তী সময়ের পরিসংখ্যান। দেখা গিয়েছে, ন’টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে জন্মের ৭ দিনের মধ্যে শিশুমৃত্যুর হার বেড়েছে।

death

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৪ ০৭:৪৯
Share: Save:

ভারতে প্রসূতি ও সদ্যোজাত-মৃত্যুর হার হ্রাস করতে বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘ দিনই প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের উপর গুরুত্ব আরোপ করে এসেছিলেন। তাঁদের পর্যবেক্ষণকে মান্যতা দিয়েই এ দেশে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার বৃদ্ধি পেয়েছে লক্ষণীয় ভাবে। কিন্তু এই অগ্রগতির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না সদ্যোজাত-মৃত্যুর হারে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, বিগত কয়েক বছরে ভারতের একাধিক রাজ্যে সদ্যোজাত-মৃত্যুর হার হয় এক জায়গায় স্থির হয়ে থেকেছে, অথবা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। আরও দুশ্চিন্তার, পাঁচ বছরের কমবয়সি যে সমস্ত শিশুর মৃত্যু হয়, তার প্রায় পঞ্চাশ শতাংশই সদ্যোজাত। যদিও সামগ্রিক ভাবে গোটা দেশে পাঁচ বছরের কমবয়সিদের মৃত্যুর হারে খানিক উন্নতি দেখা দিয়েছে। এটাও ঠিক যে, অধিকাংশ রাজ্যে বিভিন্ন বয়সের শিশুমৃত্যুর হারেও নিম্নগামী প্রবণতা দেখা গিয়েছে। কিন্তু সদ্যোজাতদের মৃত্যুর হার দেশে সার্বিক ভাবে শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস করার লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনোর পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

চিন্তা বাড়িয়েছে ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যবর্তী সময়ের পরিসংখ্যান। দেখা গিয়েছে, ন’টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে জন্মের ৭ দিনের মধ্যে শিশুমৃত্যুর হার বেড়েছে। জন্মের ৮ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে শিশুমৃত্যু হয় বেড়েছে, নয়তো এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে ১৩টি রাজ্যে। কেন এই অবনতি, তার কারণ বিবিধ। ভারত প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের ক্ষেত্রে ভাল ফল করলেও স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় এখনও বিস্তর গলদ থেকে গিয়েছে। সত্য যে, সদ্যোজাত-মৃত্যু ঠেকাতে ইতিপূর্বে বিবিধ ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশ জুড়ে সদ্যোজাতদের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট-সহ বিভিন্ন জরুরি পরিকাঠামো গড়ে তোলা তার অন্যতম। তৎসত্ত্বেও যে নবজাতকের মৃত্যু আটকানো যায়নি, তার কারণ প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাসপাতালগুলিতে এখনও জরুরি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো, উপযুক্ত সংখ্যক চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব যথেষ্ট। তা ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে একই শয্যায় একাধিক শিশুকে রাখার ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে যায়। সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুদের রাখার মতো বিশেষ ব্যবস্থা বা জন্মের অব্যবহিত পরই শিশু জটিল রোগাক্রান্ত হলে তা সামাল দেওয়ার ব্যবস্থাও এখনও সর্বত্র সমান ভাবে গড়ে ওঠেনি। তদুপরি, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ‘রেফার রোগ’।

অন্য দিকে মনে রাখা প্রয়োজন, নবজাতকের মৃত্যু ঠেকাতে শিশুর জন্মের পরবর্তী কয়েক মাস গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে মা ও শিশু— উভয়েরই যথাযথ পুষ্টি ও পরিচর্যার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হয়। কিন্তু দরিদ্র পরিবারে নতুন-মায়ের নিয়মিত পুষ্টির ধারণাটি এখনও যথাযথ গড়ে ওঠেনি। অপুষ্ট মা সন্তানের পুষ্টি জোগাবেন কী উপায়ে? তা ছাড়া, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে বাল্যবিবাহের পাশাপাশি অকালমাতৃত্বের হারও দুশ্চিন্তার কারণ। অপ্রাপ্তবয়স্ক মা সদ্যোজাতর দেখভাল করতে বহু ক্ষেত্রেই অপারগ। সদ্যোজাত-মৃত্যুর ক্ষেত্রে এই কারণটিও উপেক্ষণীয় নয়। সুতরাং, শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের উপর জোর দিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলা নয়। সদ্যোজাত-মৃত্যু যে-হেতু একাধিক বিষয়ের সম্মিলিত ফল, তাই প্রতিটি ক্ষেত্রকে পৃথক ভাবে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। নয়তো শিশুমৃত্যু হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রাটি অধরাই থেকে যাবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Death India Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy