—প্রতীকী ছবি।
শোনা যাচ্ছে, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের জোগান কমানোর সময়সীমা আগামী জুন মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে চলেছে অপরিশোধিত তেলের উৎপাদক ও রফতানিকারী দেশগুলির সংগঠন ‘ওপেক’ এবং রাশিয়া-সহ তাদের সহযোগী দেশগুলির (বৃহত্তর ওপেক) একাংশ। এই সূত্রে দৈনিক ২২ লক্ষ ব্যারেল উৎপাদন হ্রাস করা হচ্ছে। সরবরাহ কমিয়ে জ্বালানির দরকে ঠেলে তুলতে ২০২২-এর অক্টোবর থেকে তেলের উৎপাদন কমাচ্ছে ওপেক এবং তার সহযোগীরা। এই হ্রাসের অনেকাংশই বহন করছে ওপেক-এর নেতৃত্বদানকারী সৌদি আরব, যে গত জুলাই থেকে উৎপাদন দৈনিক দশ লক্ষ ব্যারেল করে কমিয়ে আসছে। আপাতত সেই মাত্রার ছাঁটাই বহাল রাখা হল। রাশিয়াও দৈনিক ৪.৭৭ লক্ষ ব্যারেল উৎপাদন কমাচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইরাক এবং কুয়েত-এর মতো বৃহত্তর ওপেক-এর বেশ কিছু সদস্যও সৌদি আরবের পথেই হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের চল্লিশ শতাংশের কাছাকাছি অপরিশোধিত তেল উৎপাদিত হয় বৃহত্তর ওপেক-এর দ্বারা। তেলের বাজারের ভারসাম্য বজায় রাখতে সময়ে সময়ে চাহিদা-জোগানও নিয়ন্ত্রণ করে তারা। ২০২০ সালে অতিমারির কারণে বহু দেশ যখন লকডাউন পরিস্থিতির জেরে বিপর্যস্ত, তখন ক্রেতার অভাবে হ্রাস পেয়েছিল তেলের মূল্য। সেই সময় তেলের দাম জোরদার করতে তাই উৎপাদনের মাত্রা বহু গুণ কমিয়েছিল এই সংগঠন। কিন্তু রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ে বাজারে চাহিদার বিপর্যয়ের আশঙ্কায় এক ব্যারেল অপরিশোধিত তেল (ব্রেন্ট ক্রুড)-এর দাম ১৩০ ডলার পৌঁছে যায়। যদিও, গত বছরের মার্চে দামের পতন ঘটে প্রতি ব্যারেলে ৭০ ডলারের কাছাকাছি। ফলে অপরিশোধিত তেলের বাজারে এক দিকে স্থিতাবস্থা কায়েম এবং অন্য দিকে তেলের মূল্য জোরদার করতে বৃহত্তর ওপেক ধারাবাহিক ভাবে উৎপাদন হ্রাসের পথ নিয়েছে। যার জেরে ব্রেন্ট ক্রুড সম্প্রতি প্রতি ব্যারেল ৮৩.৫৫ ডলারে বিক্রি হয়েছে, যা ছিল গত চার মাসে সর্বাধিক। কিন্তু সংগঠনটি এ-যাবৎ যে মূল্যবৃদ্ধির আশা করেছিল, তা সম্ভব হয়নি বিবিধ কারণে। যার অন্যতম, অতিমারি এবং তৎপরবর্তী সময়ে যুদ্ধের জেরে উন্নত দেশগুলিতে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হ্রাস। বিশেষত, বিশ্বের বৃহত্তম তেল আমদানিকারী রাষ্ট্র চিনে তেলের চাহিদা যথেষ্ট থাকলেও, অতিমারি পরবর্তী সময়ে মন্দা-আক্রান্ত দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের ধারা কতখানি বজায় থাকবে, সেই নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। তা ছাড়া মুদ্রাস্ফীতি রোধে বহু দেশে ব্যাঙ্কের চড়া সুদের হারের জেরে মানুষের ব্যবহারযোগ্য আয় (ডিসপোজ়েবল ইনকাম) প্রভাবিত হওয়ায়, তেলের চাহিদা কমার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
সংবাদটি ভারতের জন্য উদ্বেগের বটে। এ দিকে রাশিয়ার তেল আমদানির উপরে আমেরিকার পুনরায় নিষেধাজ্ঞার জেরে অস্বস্তিতে দিল্লি— দেশের তেল আমদানির পথটি আগামী দিনে মসৃণ রাখা যাবে কি না, তা নিয়ে দুর্ভাবনায়। ভারত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম শক্তি উপভোক্তা ও তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেলের উপভোক্তা। তার প্রয়োজনীয় তেলের ৮৫ শতাংশই আমদানি করা হয়, যার অর্থ বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যের ওঠাপড়ার উপর ভারতীয় অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভরশীল। মুদ্রাস্ফীতির চাপ ছাড়াও এই আমদানির খরচ বাড়ার জেরে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ফলাফল (ট্রেড ব্যালান্স), বৈদেশিক মুদ্রাভান্ডার, টাকার দাম হ্রাস, পেট্রল ও ডিজ়েল-এর বাজারমূল্য বাড়লে ঘরোয়া অর্থনীতির উপর চাপ— অর্থনীতির নানা দিকে এর প্রভাব অনুভূত হওয়ার কথা। এই আশঙ্কা থেকেই সম্প্রতি তেল আমদানির পথটি বহুমুখী করতে চেষ্টা করছে ভারত। তবে দীর্ঘমেয়াদে যদি বিকল্প পথ বেরোয়ও, কিছু স্বল্পমেয়াদি সঙ্কট আপাতত এড়ানো কঠিন, এ কথা মেনে নিয়েই এগোতে হবে ভারত সরকারকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy