সদ্য-প্রকাশিত ‘নিট’ পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেল, স্নাতক স্তরের এই ডাক্তারি পরীক্ষায় সংরক্ষিত ছাত্রছাত্রীদের— তফসিলি, তফসিলি জনজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত— তিন-চতুর্থাংশই অসংরক্ষিত আসনের জন্য প্রয়োজনীয় নম্বর পাইয়াছেন। যেখানে তাঁহাদের ন্যূনতম ৪০ শতাংশই যথেষ্ট ছিল, সেইখানে তাঁহারা ৫০ শতাংশের গণ্ডি টপকাইয়াছেন। এই সুসংবাদ স্বভাবতই একটি প্রশ্নের জন্ম দিবে: যদি অনগ্রসর শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা অসংরক্ষিত আসনে সুযোগ পাইবার যোগ্য নম্বর পাইতে পারেন, তাহা হইলে আর সংরক্ষণের প্রয়োজন কী? ভারতীয় রাজনীতিতে প্রশ্নটির তাৎপর্য বিপুল— বিশেষত মনুবাদী রাজনীতির নিকট সংরক্ষণের প্রশ্নটি চিরকালীন চোখের বালি। কাজেই প্রশ্নটিকে তাহার প্রাপ্য গুরুত্ব দেওয়া বিধেয়।
আদৌ আর সংরক্ষণের প্রয়োজন আছে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর সন্ধান করিতে হইলে প্রথমে প্রশ্ন করিতে হয়: গোড়ায় সংরক্ষণের প্রয়োজন পড়িল কেন? স্বাধীন ভারতে যখন সংরক্ষণের ব্যবস্থা হয়, তখন তাহার উদ্দেশ্য লইয়া দ্বিমত ছিল না— মনুবাদী সামাজিক প্রতিষ্ঠান দেশের যে বিপুলসংখ্যক মানুষকে যাবতীয় সুযোগ হইতে বঞ্চিত করিয়া রাখিয়াছে, তাঁহাদের প্রতি সেই ঐতিহাসিক পাপের ক্ষালন, এবং সুযোগের সাম্য প্রতিষ্ঠা করাই ছিল সংরক্ষণের উদ্দেশ্য। সুযোগের সাম্য, অর্থাৎ যে কোনও প্রতিষ্ঠানের যে কোনও পদ সমান যোগ্যতা এবং সমান উচ্চাকাঙ্ক্ষার সকল প্রার্থীর জন্য সমান ভাবে খোলা থাকিবে। ‘যোগ্যতা’ বস্তুটি শুধুমাত্র ব্যক্তিবিশেষের উপর নির্ভরশীল নহে— তাঁহার অতীত, পরিবেশ, অর্থনৈতিক অবস্থা, এমন বহু বিষয়ের উপর নির্ভর করে যোগ্যতা। যে জনগোষ্ঠী ঐতিহাসিক ভাবে বঞ্চিত, স্বভাবতই তাহার ‘যোগ্যতা’ উচ্চবর্ণের প্রজন্ম হইতে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত সুযোগের দ্বারা নির্মিত ‘যোগ্যতা’-র তুলনায় কম হইবে। অতএব, সুযোগের প্রকৃত সাম্য প্রতিষ্ঠা করিতে হইলে ‘যোগ্যতা’ বস্তুটিকে স্বতঃসিদ্ধ বিবেচনা করিলে চলিবে না। অনগ্রসরদের ‘যোগ্যতা’ অর্জনের সুযোগ করিয়া দিতে হইবে। সংরক্ষণ সেই সুযোগের পথ। অতএব, স্বাধীন রাষ্ট্র ‘ন্যায্য’ হইতে চাহিলে সংরক্ষণ তাহার আবশ্যিক শর্ত ছিল।
এক্ষণে প্রশ্ন, সেই যোগ্যতা কি ইতিমধ্যেই অর্জিত? অন্তত, আলোচ্য পরীক্ষার ফলাফল কি সেই কথাই বলে? নিট পরীক্ষায় অনগ্রসর শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্যও কিন্তু এই কথাটি ঢাকিতে পারিবে না যে, ভারতের উচ্চশিক্ষার অঙ্গনে এখনও অনগ্রসর শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব অকিঞ্চিৎকর। ফলে, রাষ্ট্র সংরক্ষণের সুযোগ প্রত্যাহার করিয়া লইবে, তেমন পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয় নাই। বরং, যদি কোনও ছাত্রী বা ছাত্র বোধ করেন যে, তাঁহার সংরক্ষণের প্রয়োজন নাই, তবে তিনি যাহাতে সেই সুবিধাটি ত্যাগ করিয়া অসংরক্ষিত শ্রেণির প্রার্থী হিসাবে প্রতিযোগিতা করিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। অন্য দিকে, শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে সংরক্ষণ নহে, আরও বেশি প্রয়োজন প্রশিক্ষণের। যাহাতে পিছাইয়া পড়া ছেলেমেয়েরা সত্যই প্রতিযোগিতায় সক্ষম হইয়া উঠেন। কিন্তু, কিছু ছাত্রছাত্রীর সাফল্য যেন ঘুরপথে সংরক্ষণ-বিরোধী যুক্তির হাতিয়ার না হইয়া উঠে, সেই দিকেও নজর রাখা প্রয়োজন। ইহা যে দয়ার দান নহে, অধিকার, রাজনীতি যেন এই কথাটি গুলাইয়া দিতে না পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy