Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Supreme Court

জুজু

ভারত কি তাহা হইলে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘কল্যাণে’ গণতন্ত্রের পথ ছাড়িয়া আসিল, ইতিমধ্যেই?

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৫৪
Share: Save:

অরওয়েল কী বলিতেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের পেগাসাস-বক্তব্য শুনিয়া? আধুনিক রাষ্ট্র ইচ্ছা করিলে কত বড় নজরদার বা ‘বিগ ব্রাদার’ হইতে পারে, তাঁহার এত স্পষ্ট সতর্কবাণীর পরও কেহ যেন সম্যক ঠাহর করিতে পারে নাই যে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রের নজর কতখানি সর্বব্যাপী ও সর্ববিদারী হওয়া সম্ভব। বর্তমান সময় তাহা প্রমাণ করিতেছে। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের মাননীয় প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণার বেঞ্চ যে ভাবে পেগাসাস নজরদারির বিষয়ে বর্তমান সরকারের ‘দায়িত্ব’-এর দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করিল, এবং বলিল যে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জুজু দেখাইয়া বা অন্য কোনও অজুহাত দর্শাইয়া নাগরিকের জীবনে এই মাত্রাছাড়া গোপন প্রবেশ চলিতে পারে না— তাহা বলিয়া দেয়, জর্জ অরওয়েল-কল্পিত বিকৃত বাস্তব বা ডিস্টোপিয়া এখন সমগ্র ভারতকে গ্রাস করিয়াছে। আপাতত বিচারবিভাগের দৃষ্টিপাতে খানিক তদন্ত চালু হইলেও সেই রাহুগ্রাস হইতে দেশবাসী মুক্তি পাইবেন, এমন উচ্চ আশা করা কঠিন। প্রকৃতপক্ষে, অভিমন্যু-খ্যাত চক্রব্যূহের ন্যায় আধুনিক প্রযুক্তিগত নজরদারি এমন এক চক্র এবং ব্যূহ, যাহার নাগাল এক বার নাগরিক জীবনে প্রবেশ করিলে তাহার পর বহু বর্ম, অস্ত্র, তির, তিরন্দাজ সত্ত্বেও সেই অশুভ বৃত্ত হইতে সম্পূর্ণ মুক্ত হওয়া দুরূহ। সেই দিক দিয়া, অরওয়েলের নাইনটিন এইটি-ফোর কেবল রাষ্ট্রের কথাই হয়তো বলে নাই, প্রযুক্তি-প্রোথিত একটি সময়ের দিকে নির্দেশ করিয়াছিল। প্রধান বিচারপতি যথার্থ বলিয়াছেন, প্রযু্ক্তি যেমন মানুষের অশেষ উপকার করে, তেমনই কত ভয়ানক বিপন্ন করিতে পারে, বর্তমান সময় তাহার প্রমাণ।

প্রযুক্তির গ্রাস সময়ের স্বাভাবিক ফলাফল হইতে পারে। কিন্তু কোনও সরকার যদি সেই প্রযুক্তি কাজে লাগাইয়া পরিকল্পনা করিয়া তাহার গ্রাসে নাগরিককে পুরিতে চাহে, তাহার অর্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন। এমন ভয়ানক বিপন্নতার মুখে ভারতীয় নাগরিক ও বিরোধী ভাবাপন্ন নেতাদের বর্তমান শাসক পক্ষ ইচ্ছা করিয়া ঠেলিয়া দিয়াছে কি না, সেই বিচার হওয়া তাই অতি আবশ্যক এবং জরুরি। গত কয়েক মাস ধরিয়া ক্ষুব্ধ বিরোধী দল কিংবা উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ বারংবার সরকারের নিকট জানিতে চাহিয়াছে, সরকারের ভূমিকা ঠিক কী ও কতখানি ছিল। উত্তর মিলে নাই। প্রমাণ ছড়াইয়া থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা অন্য কোনও দায়িত্বভাগী ব্যক্তি স্বীকার করেন নাই, পেগাসাস সফটওয়্যার ক্রয় এবং তাহার মাধ্যমে আড়ি পাতিবার নির্দেশ তাঁহারাই দিয়াছিলেন কি না। অথচ যাহা ঘটিয়াছে, তাঁহাদের নির্দেশ ভিন্ন তেমনটা ঘটিতে পারে না। গণতন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসিয়া এমন চূড়ান্ত কর্তৃত্বতন্ত্রের বলয় তৈরি করা কেবল অনৈতিক নহে, গুরুতর অপরাধ। নরেন্দ্রী মোদী সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করিয়াছে, করিতেছে। গণতন্ত্রের মানে কী, যদি সেখানে মতামতের বহুত্ব না-ই থাকে? বহুত্বের অর্থ কী, যদি সেখানে প্রতিবাদ না থাকে? এবং প্রতিবাদ থাকিবে কী করিয়া, যেখানে এমন তীব্র গোপন সরকারি নজরদারি থাকে? ভারত কি তাহা হইলে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘কল্যাণে’ গণতন্ত্রের পথ ছাড়িয়া আসিল, ইতিমধ্যেই?

কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধী নেতাদের কথা শুনে না, বিরোধী নাগরিকদের পিটাইয়া সিধা করিবার ব্যবস্থা করে। প্রধান আদালতের কথা কি তাহারা শুনিবে? সাতটি নির্দেশ দিয়াছে সুপ্রিম কোর্ট— সেগুলি কি মানিবে? আদালতের নির্দেশে তদন্ত কমিটি তৈরি হইয়াছে বিচারপতি রবীন্দ্রনের নেতৃত্বে, সেই কমিটিকে কি নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করিতে দেওয়া হইবে? সবই অর্বুদ-ডলার প্রশ্ন। কিন্তু একটি কথা আবারও বোঝা গেল। ছিদ্র পাইলে যেমন শনি প্রবেশ করে, ছিদ্র থাকিলে শনির বলয় হইতে বাহির হওয়াও সম্ভব। মাননীয় প্রধান বিচারপতি রমণা ও তাঁহার সহকারী বিচারপতিরা কথাটি প্রমাণ করিলেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Supreme Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy