Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Mental Health

মনের শুশ্রূষা

মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সরকারকে শুধুমাত্র ডিজিটাল গণ্ডিতে আটকাইয়া থাকিলে চলিবে না।

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৪:৫২
Share: Save:

অতিমারিতে রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি এবং তজ্জনিত লকডাউন, সামাজিক পরিসরে মেলামেশায় বিধিনিষেধ মানুষের মনে উদ্বেগ, অবসাদ বহু গুণে বৃদ্ধি করিয়াছে। সমগ্র বিশ্বে এই একই চিত্র। ভারতও তাহার ব্যতিক্রম নহে। গত বৎসর ভারতে তিনশতের অধিক মানুষ আত্মহত্যা করিয়াছেন। পরিসংখ্যানটি উদ্বেগের। সম্ভবত ক্ষতির সেই উপলব্ধি হইতেই ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ‘ন্যাশনাল টেলি মেন্টাল হেলথ প্রোগ্রাম’ নামক মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত একটি সর্বভারতীয় উদ্যোগের কথা ঘোষণা করিয়াছেন। দেশে ২৩টি টেলি মেন্টাল হেলথ সেন্টার গড়িয়া তোলা হইবে, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরো সায়েন্সেস-এর সহযোগিতায়।

অতিমারি কালে যখন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলিতে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিবার প্রয়োজন, তখন বরাদ্দ বিচারে সাম্প্রতিক বাজেট কার্যত নাগরিকদের হতাশ করিয়াছে। মানসিক স্বাস্থ্যের প্রসঙ্গটি সেই ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম। দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার সামগ্রিক দুর্দশাগ্রস্ত চিত্রের মধ্যে ইহা কিছু আশা জাগায়। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে টেলিমেডিসিনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং ভবিষ্যৎমুখী পদক্ষেপ। কিন্তু ইহার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছুও প্রশ্ন তোলা যায়। অনস্বীকার্য যে, কম সময়ে, স্বল্প খরচে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছাইতে টেলি পরিষেবার বিকল্প নাই। কিন্তু মনে রাখিতে হইবে, ভারতের এক বৃহৎ সংখ্যক নাগরিক এখনও ডিজিটাল পরিষেবার বাহিরে। যাঁহারা দ্রুত গতির ইন্টারনেট দূরস্থান, একটি মোবাইল ফোনের ব্যবস্থাও করিয়া উঠিতে পারেন নাই, তাঁহাদের মানসিক চিকিৎসার কী উপায় হইবে? সামগ্রিক ভাবে রোগের মোকাবিলা করিতে হইলে এই শ্রেণির কথাও ভাবিতে হইবে সরকারকে, প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যাহাতে এই পরিষেবা পৌঁছাইতে পারে সেই ব্যবস্থা করিতে হইবে। অতিমারি কালে উপযুক্ত পরিকাঠামোর ব্যবস্থা না করিয়া অনলাইন শিক্ষায় অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক সুস্পষ্ট বিভাজন রেখা টানিয়া দিয়াছে, ডিজিটাল শিক্ষার সুবিধা সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা গ্রহণ করিতে পারে নাই। ইহার পুনরাবৃত্তি মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে হওয়া কাম্য নহে। শিক্ষাক্ষেত্রের ব্যর্থতা হইতে সরকারকে শিক্ষা লইতে হইবে।

বস্তুত, মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সরকারকে শুধুমাত্র ডিজিটাল গণ্ডিতে আটকাইয়া থাকিলে চলিবে না। অন্যান্য পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রতিও সমান যত্নবান হইতে হইবে। সর্বাগ্রে প্রয়োজন প্রাথমিক চিকিৎসাব্যবস্থাতে মানসিক স্বাস্থ্যের অন্তর্ভুক্তিকরণ। অন্তত ব্লক স্তরের চিকিৎসায় নিয়মিত যাহাতে মানসিক রোগের চিকিৎসা করা যায়, তাহা দেখিতে হইবে। আশাকর্মীদের ন্যায় মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সংখ্যক প্রশিক্ষিত জনস্বাস্থ্যকর্মীর ব্যবস্থা করিতে হইবে। এবং নজর দিতে হইবে মানসিক হাসপাতালগুলির প্রতি। স্পষ্টতই অধিকাংশ হাসপাতাল নিদারুণ অবহেলার শিকার। তাহাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ নাই, রোগীরা শোচনীয় অবস্থায় থাকিতে বাধ্য হন। ইহার প্রতিকার প্রয়োজন। অর্থাৎ, ডিজিটাল এবং প্রচলিত ব্যবস্থা— উভয়কে পরস্পরের পরিপূরক হিসাবে গড়িয়া তুলিতে হইবে। তবেই সুফল মিলিতে পারে। অন্যথায় ঘোষণার চমকটিই পড়িয়া থাকিবে, নাগরিকের মানসিক স্বাস্থ্যে পরিবর্তন আসিবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Mental Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy