যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি কথাটি বহুব্যবহারে জীর্ণ। কিন্তু কোভিড-১৯’এর তৃতীয় প্রবাহের সহিত লড়িবার জন্য যে ভঙ্গিতে প্রস্তুত হওয়া প্রয়োজন, তাহা আক্ষরিক অর্থেই যুদ্ধকালীন। অতিমারির বিরুদ্ধে যুদ্ধের এক ভয়াবহ পর্বে প্রবেশ করিতেছে ভারত। ভাইরাসটি রূপ পাল্টাইয়া আরও পরাক্রমশালী হইয়া উঠিয়াছে, শুধু এই কারণে যুদ্ধের এই পর্ব ভয়াবহ নহে— ভয়ের মূল কারণ, এই পর্বে ভাইরাসের চক্রব্যুহে প্রবেশ করিবে শিশুরা। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, অতিমারির তৃতীয় প্রবাহে সর্বাধিক আক্রান্ত হইবে শিশুরাই। তাহার প্রধানতম কারণ সম্ভবত ইহাই যে, ভারতে এখনও শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা টিকা-বঞ্চিত। অনূর্ধ্ব আঠারো বৎসর বয়ঃক্রমের জন্য টিকাকরণ এখনও শুরুই হয় নাই। অর্থাৎ, সেপ্টেম্বরে যদি তৃতীয় প্রবাহ আরম্ভ হয়, তবে দেশের অপ্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী তাহার সম্মুখীন হইবে সম্পূর্ণ প্রতিরোধহীন অবস্থায়। তাহা যদি দুশ্চিন্তার কারণ না হয়, তবে আর কোন প্রশ্নে রাষ্ট্র উদ্বিগ্ন হইবে? আর কোন যুদ্ধের জন্যই বা যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি লইবে?
সংবাদে প্রকাশ, প্রয়োজনের তুলনায় এখনও অপ্রতুল হইলেও সেই যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হইয়াছে। শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের কোভিড-চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নির্মাণের চেষ্টা হইতেছে; নিয়োনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট ও পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের ব্যবস্থা হইতেছে। অতিমারির দুইটি প্রবাহ ইতিমধ্যেই ভারতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ খামতিগুলি দেখাইয়া দিয়াছে। যুগের পর যুগ স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রকৃত বিনিয়োগ না করিলে কী পরিস্থিতি হইতে পারে, ভারত তাহা বহুমূল্যে শিখিয়াছে। তৃতীয় দফায় বিপদ গুরুতর। শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি করিতে হইলে স্বভাবতই সঙ্গে এক জন অভিভাবককেও— অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিশুটির মা— তাহার সহিত হাসপাতালে থাকিতে দিতে হইবে। অতএব, হাসপাতালে জায়গা লাগিবে সরাসরি দ্বিগুণ। এমনও বহু ঘটনা ঘটিবে বলিয়াই আশঙ্কা, যেখানে সন্তানের সহিত অভিভাবকও কোভিড-আক্রান্ত হইবেন। সেই গোত্রের শিশুদের চিকিৎসার জন্য ভিন্নতর মানব-পরিকাঠামো প্রয়োজন। দুই সপ্তাহের মধ্যে সেই রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন সম্পূর্ণ করা এক রকম অসম্ভব। ফলে, আশঙ্কা থাকিয়াই যাইতেছে যে, তৃতীয় দফাতেও বহু অসহ্য ট্র্যাজেডি ভারতের অপেক্ষায় থাকিবে। এই মুহূর্তে সরকারের কর্তব্য হইল, এই গোত্রের ট্র্যাজেডির সংখ্যা যত দূর সম্ভব কমাইতে চেষ্টা করা। তবে, বিপদের মুখে দাঁড়াইয়া থাকা শিশুরা স্মরণে রাখিবে যে, তাহাদের নিরাপত্তার খাতিরে দেশের সরকার ন্যূনতম দায়িত্বপালনের অধিক কিছু করিয়া উঠিতে পারে নাই।
ঘটনা হইল যে, তৃতীয় প্রবাহের বিপদটি কেন্দ্রীয় সরকারের ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণেই ভয়ঙ্করতর হইয়া উঠিবার আশঙ্কা তৈরি করিতেছে। প্রথম কথা, ভাইরাসের চরিত্রবদলের ফলে হিসাব গুলাইয়া গিয়াছে— দেশের জনসংখ্যার যত শতাংশের টিকাকরণ হইলে হার্ড ইমিউনিটি বা গোষ্ঠী প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হইবে বলিয়া অনুমান করা গিয়াছিল, এখন জানা যাইতেছে যে, তাহার তুলনায় ঢের বেশি মানুষের টিকাকরণ প্রয়োজন। এ দিকে, কত টিকা প্রয়োজন; তাহার কত ভাগ দেশে প্রস্তুত হইবে আর কতখানি আমাদনি করিতে হইবে; রাজ্যগুলির মধ্যে কোন সূত্র মানিয়া টিকা বণ্টন হইবে— এই গোত্রের প্রশ্নগুলির উত্তর কেন্দ্রীয় কর্তারা খোঁজেন নাই। তাঁহারা কখনও যুদ্ধজয় ঘোষণা করিয়া দিয়াছেন, কখনও বিশ্বগুরু হইবার খোয়াব ফেরি করিয়াছেন। তৃতীয় প্রবাহের জন্য প্রস্তুতির কাজটি শুরু করিবার কথাকেও তাঁহারা হয়তো গুরুত্বহীন জ্ঞান করিয়াছিলেন। আরও কত
প্রাণের মূল্যে তাঁহাদের হুঁশ ফিরিবে, এই প্রশ্নটি দেশকে ভাবাইতেছে বইকি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy