Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪
Jharkhand

ব্যর্থ কৌশল

ঝাড়খণ্ড একটি ছোট এবং অনুল্লেখযোগ্য রাজ্য বলে মনে হলেও বেশ কয়েকটি কারণে সেই রাজ্যের লড়াই এ বার ছিল বিজেপির কাছে আলাদা করে গুরুত্বপূর্ণ।

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১০:১৫
Share: Save:

দুই রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ফলাফল আসার পর বিজেপি আপাতভাবে বেশ উৎফুল্ল। স্বাভাবিক। মহারাষ্ট্রের জয় কেবল একটি রাজ্যের ক্ষমতালাভ নয়, ওই রাজ্যের গুরুত্বের ভারই বিজেপির চওড়া হাসির মূল কারণ। কিন্তু ঝাড়খণ্ডের ভোটের ফলাফল সেই হাসিকে বেশ কিছুটা ম্লান করে দিতে পারে, তাঁরা স্বীকার করুন আর না করুন। ঝাড়খণ্ড একটি ছোট এবং অনুল্লেখযোগ্য রাজ্য বলে মনে হলেও বেশ কয়েকটি কারণে সেই রাজ্যের লড়াই এ বার ছিল বিজেপির কাছে আলাদা করে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, জনজাতি সমাজকে উগ্র হিন্দুত্ব ও ইসলামবিরোধিতার টোপ দিয়ে টেনে আনার চেষ্টা বরাবরই আরএসএস-বিজেপির কাছে একটি জরুরি কাজ। ঝাড়খণ্ডের মতো জনজাতি-অধ্যুষিত সেই রাজ্যে এ বার প্রবল প্রচেষ্টা ছিল হিন্দুত্বের আবেগ জ্বালিয়ে দেওয়ার। স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গিয়ে অনুপ্রবেশকারী মুসলমানদের বহিষ্কার করার বৃহৎ পরিকল্পনা ঘোষণা করে এসেছেন। এই ভয়ও দেখিয়েছেন যে, হেমন্ত সোরেন মুখ্যমন্ত্রিত্বে ফিরে এলে মুসলমানদের সংরক্ষণ দিয়ে রাজ্যের মাটিতে তাঁদের শক্ত ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে দেবেন। মুসলমান সংরক্ষণের হাত থেকে হিন্দু সমাজকে, বিশেষত দলিতদের, বাঁচাতে পারে একমাত্র বিজেপি শাসন, বারংবার তা প্রচারে বলেছেন। তবু চিঁড়ে ভিজল না। জনজাতি-প্রধান নির্বাচনী ২৮টি আসনের ২৭টিতেই এনডিএ-কে জমি ছেড়ে দিতে হল ‘ইন্ডিয়া’ প্রার্থীদের কাছে।

এই জনজাতি সমাজের দিকে তাকিয়েই জাতিভিত্তিক জনগণনার বিষয়টি বিজেপির ভোটপ্রচারে এ বার এতখানি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। অমিত শাহ এবং অন্য বিজেপি নেতারা আশ্বাস দিয়েছেন যে, জাতগণনার কাজ এ বার দ্রুত শুরু হবে। ২০২১ সাল থেকে এই বিষয়টি সর্বশক্তিতে আটকানোর পর এখন হঠাৎ নতুন করে এতখানি উৎসাহ নেওয়ার কারণ— নিম্নবর্ণের হিন্দুদের দলে টানার অত্যাগ্রহ। ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যে যেখানে দলিত ভোটারসংখ্যা বিপুল, বিরোধী দল বিশেষত কংগ্রেসের প্রচারের পাল থেকে হাওয়া কেড়ে নিতেই জাতগণনার কথা বলা ছাড়া বিজেপির উপায় ছিল না। ভোটের ফল বলছে, বিজেপির এই সুবিধাবাচক অবস্থান পরিবর্তন জনদৃষ্টি এড়ায়নি, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার দ্বিতীয় টিম হিসাবে বিজেপিকে এগিয়ে রাখার কোনও কারণ পাননি জনজাতির মানুষেরা। প্রসঙ্গত, মেয়েদের জন্য ‘মাইয়া সম্মান যোজনা’র সূচনা মোর্চাকে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছিল, নিশ্চিত ভাবে। তবে মনে রাখা ভাল, বিজেপিও তাদের প্রচারে বিকল্প একটি মহিলাভাতা যোজনার কথা ঘোষণা করেছিল। তাও শেষ অবধি হাতের পাখিটিকেই রাখতে চেয়েছেন মানুষ।

অন্য একটি বিষয়ও ভাবার মতো। এক দিকে যখন সোরেন দম্পতি বিশেষ দক্ষতা দেখাচ্ছিলেন ভোটের প্রচারে, অন্য দিকে বিজেপি কিন্তু প্রধানত নির্ভর করল হিমন্তবিশ্ব শর্মা ও শিবরাজ সিংহ চৌহানের মতো ‘বহিরাগত’ নেতৃবৃন্দের উপর। এতে কি ক্ষতি হল? জনজাতি-প্রধান অঞ্চলগুলিতে বিজেপির ভোটে ধস সেই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। ঘটনাক্রম বলছে, বাইরে থেকে এসে ‘ভয়’ দেখানোর নানা ফন্দি জনজাতীয় ভোটারকে টলাতে ব্যর্থ, যখন স্থানীয় বিষয়ে জোর দিয়ে মোর্চা সহজেই মানুষের আস্থা জিতে নিতে পেরেছে। সব মিলিয়ে, এই ভোট শেষ পর্যন্ত বিজেপিকে আবার আঞ্চলিক রাজনীতির শক্তি নিয়ে উদ্বেগে রাখতে পারে। নিশ্চয়ই রাখছেও।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP RSS NDA India JMM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy